মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা তখন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। পিএসজি ইতিহাস গড়েছে—ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছে।
তবে পিএসজি কোচ লুইস এনরিকের জন্য এই রাতটা শুধু পেশাগত গৌরব নয়, ছিল গভীর এক ব্যক্তিগত আবেগের মুহূর্ত। কারণ এই রাতেই তিনি মনে প্রাণে অনুভব করেছেন তার প্রয়াত মেয়ে জানার উপস্থিতি।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এনরিকে পরেন এক বিশেষ টি-শার্ট, যেখানে আঁকা বাবা-মেয়ের একটি কার্টুন ছবি—তারা দুজন মিলে পিএসজির পতাকা গেঁথে দিচ্ছে মাটিতে। ছবিটির মূল প্রেক্ষাপট ২০১৫ সালের বার্লিনের, যখন এনরিকে বার্সেলোনাকে জিতিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। তখন ছোট্ট জানা বাবার সঙ্গে মাঠে ছুটে বেড়াত।
এবার আর মাঠে নেই সে, কিন্তু বাবা জানেন—সে কাছেই আছে।
পিএসজি সমর্থকেরাও ভুলেনি মেয়েটিকে। বিশাল এক ব্যানারে সেই কার্টুন ছবি তুলে ধরে তারা জানায় ভালোবাসা। ম্যাচের পরে ভেজা চোখে এনরিকে বলেন, “জানা প্রতিদিন আমাদের সঙ্গেই থাকে—জিতি বা হারি, মন ভালো থাকুক বা না থাকুক। যাদের মন থেকে ভালোবাসো, তারা কোথাও হারায় না। ”
কে ছিল জানা?
২০০৯ সালে জন্ম নেওয়া জানা এনরিকে ও তার স্ত্রী এলেনা কভিয়েলোর ছোট মেয়ে। ভাই পাচো ও বোন সিরার চেয়ে বয়সে ছোট হওয়ায় ছিল ঘরের আদরের কেন্দ্রবিন্দু। হাসিখুশি, প্রাণবন্ত, সবাইকে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখা এক শিশু।
২০১৯ সালের শুরুর দিকে ধরা পড়ে, জানা হাড়ের এক বিরল ক্যানসারে (Osteosarcoma) আক্রান্ত। চিকিৎসা চলে পরিবারকে ঘিরে রেখে, কিন্তু আগস্টের ৩০ তারিখ, মাত্র নয় বছর বয়সে বিদায় নেয় সে।
‘জানা ফাউন্ডেশন’-এর জন্ম
জানার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এনরিকে ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠা করেন জানা ফাউন্ডেশন—একটি দাতব্য সংস্থা, যেটি এমন রোগে আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ায়।
তাদের ওয়েবসাইটে এনরিকে লিখেছেন মেয়ের উদ্দেশে—“জানাকে ব্যাখ্যা করতে চাইলে শুধু তার হাসির কথাই বলো। সেই হাসি যা মুহূর্তে আনন্দে ভরিয়ে দিত চারপাশ। সে ছিল অনন্য, অপ্রতিম। নয় বছর আমাদের সঙ্গে ছিল সে—এটাই তো বড় ভাগ্য। ”
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাতে, হৃদয়ে মেয়েকে বয়ে নিয়ে এনরিকে বলেন, “আজ জানা থাকলে হয়তো এখানেই দৌড়াদৌড়ি করত... কিন্তু আমি জানি, সে আমাদের সঙ্গে আছে—সবসময়। ”
পিএসজির অফিসিয়াল স্প্যানিশ একাউন্ট থেকেও সেই রাতের শ্রদ্ধাঞ্জলি: “জানা সবসময়ই আমাদের মাঝে, লাল ও নীল হৃদয়ের ইমোজির সঙ্গে। ”
এমএইচএম