ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১২ জুন ২০২৫, ১৫ জিলহজ ১৪৪৬

ফুটবল

গাজার শিশুদের নিয়ে গার্দিওলা: ‘প্রতিদিন মনে হয় ওরা আমারও সন্তান হতে পারত’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪৬, জুন ১১, ২০২৫
গাজার শিশুদের নিয়ে গার্দিওলা: ‘প্রতিদিন মনে হয় ওরা আমারও সন্তান হতে পারত’ ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল কর্তৃক হামলা চলমান রয়েছে গাজায়। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং বিশেষ করে গাজায় শিশুদের মৃত্যুর ছবি দেখে গভীর উদ্বেগ ও বেদনা প্রকাশ করেছেন ম্যানচেস্টার সিটির ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা।

গতকাল ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি গ্রহণের পর এক বক্তৃতায় স্প্যানিশ এই কোচ বলেন, ‘গাজায় যা কিছু দেখছি, তা খুবই বেদনাদায়ক। আমার শরীরটা কেঁপে ওঠে। হয়তো আমরা ভাবি, হাসপাতালে মারা যাওয়া কিংবা বোমায় উড়ে যাওয়া চার-পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা আমাদের বিষয় না। কিন্তু সাবধান, পরের শিশুটা হতে পারে আমাদেরই সন্তান। ’

তার নিজের তিন সন্তান মারিয়া, মারিয়ুস এবং ভ্যালেন্তিনার কথা উল্লেখ করে গার্দিওলা বলেন, ‘এই দুঃস্বপ্ন শুরু হওয়ার পর প্রতিদিন সকালে ওদের যখন দেখি, তখন গাজার শিশুদের কথা মনে পড়ে যায়। আর সেটা আমাকে খুব ভয় পাইয়ে তোলে। ’

গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিশু। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েল অন্তত ১৭,৪০০ শিশু হত্যা করেছে, যার মধ্যে ১৫,৬০০ জনের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। বহু শিশু এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। যারা বেঁচে আছে, তারা প্রত্যেকে ভয়ংকর যুদ্ধের ট্রমা বয়ে বেড়াচ্ছে এবং গোটা জীবন পার করছে ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে।

গত ২০ মাসে ইসরায়েলি হামলায় গাজার স্কুল, হাসপাতাল, বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। এই অবস্থায়, গার্দিওলা বলেন, ‘আমরা চুপ থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবি। কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে না দাঁড়ানো মানেই অন্যায়ের পাশে দাঁড়ানো। ’

তিনি তার বক্তৃতায় একটি ছোট্ট পাখির গল্প বলেন, যে বনজঙ্গলে আগুন লাগার পর বারবার নিজের ঠোঁটে করে পানি নিয়ে এসে আগুন নেভাতে চেষ্টা করে, ‘এই গল্পটি আমাদের শেখায়, আমরা ছোট হই বা বড়, ব্যাপারটা পরিমাণের নয়, বরং আমাদের ইচ্ছার। নীরব না থেকে উপস্থিত থাকার এবং অন্যায়ের মুখে দাঁড়ানোর সাহসটাই আসল শক্তি। ’

কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে এক সময় সরব থাকা সাবেক বার্সেলোনা কোচ বিশ্ব নেতাদের ব্যর্থতাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘হাজার হাজার শিশু, মা-বাবা ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে। তবুও বিশ্ব নেতারা ন্যায়ের কথা ভাবছেন না। কেবল রাজনীতিকরাই নয়, সব ক্ষেত্রেই নেতৃত্বের এই ব্যর্থতা চোখে পড়ছে। ’

এদিকে, মঙ্গলবার জাতিসংঘের একটি স্বাধীন কমিশন ইসরায়েলকে মানবতাবিরোধী অপরাধে ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। গাজায় স্কুল, হাসপাতাল এবং উপাসনালয়ে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে তারা এই অপরাধ করেছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘শুধু গাজা নয় বরং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমেও শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের হয়রানি, সেনা অভিযানের ভয় এবং ইসরায়েলি বসতি-বাসীদের হামলায় পুরো প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গাজার শিশুদের শৈশব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্কুল বন্ধ, খাবার নেই, জীবনই এখন তাদের জন্য প্রতিদিনের যুদ্ধ। ’

আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।