ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

স্টেডিয়াম পাড়ায় কি হচ্ছে এসব?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
 স্টেডিয়াম পাড়ায় কি হচ্ছে এসব? ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর আউটার স্টেডিয়ামটির অবস্থান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, মাওলানা ভাষানী হকি স্টেডিয়াম, মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম, টেবিল টেনিস ফেডারেশন ও হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামের ঠিক মাঝে। পরিতাপের ব্যাপার হলো স্টেডিয়াম পাড়াখ্যাত এই স্থানটিতেই দিনে দুপুরে চলছে মাদকের ব্যবহার।


 
প্রশাসনের নাকের ডগায় মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের দৌরাত্বে রীতিমত অতিষ্ট হয়ে উঠেছে স্থানীয় লোকজন। যেন কেউ দেখার নেই, কেউ বলার নেই।


 
শনিবার (১০) সেপ্টেম্বর দুপুরে আউটার স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে যেতেই দেখা গেল রাজউক ভবনের উল্টোদিকে স্টেডিয়ামের লোহার বেষ্টনির ভেতরে দাঁড়ানো দুই কিশোরীর কাছ থেকে গাজা কিনছেন রিক্সাওয়ালারা। কেউ কেউ আবার সেখানে বসেই বেশ স্বাচ্ছন্দে বসে গাজা সেবন করে যাচ্ছেন! আহা! যেন রাম রাজত্ব।
 
শুধু ওই দুই রিক্সাওয়ালাই নয়, স্টেডিয়ামের বাইরের ফুটপাতজুড়ে মাদকসেবীরা মেলা মিলিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো সেই ফুটপাত ধরেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হাঁটাচলা করছেন কিন্তু তারা কিছুই বলছেন না!
 
এই দৃশ্য দেখার পর স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন বয়সের পুরুষেরা গাজা সেবন করছে। আর সেবন শেষে মাঠের ভেতরে বসিয়েছে জুয়ার আড্ডা! যেন এতটুকু ভয় নেই, ডর নেই!


 
স্থানীয় কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানা গেল শুধু গাজা সেবন কিংবা জুয়ার আসরই নয় এখানে দিনে দুপুরে চলে প্যাথিডিন ও হিরোইনের মত মরণঘাতী নেশা সেবন।
 
শুধু আউটটার স্টেডিয়ামেই নয় স্টেডিয়াম সংলগ্ন মসজিদের বাথরুমে প্রকাশ্য দিবালকে হিরোইন আর প্যাথিডিন সেবিরা ঘন্টার পর ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করেন বলে অভিযোগ করলেন স্থানীয় এক চা ব্যবসায়ী। ‘হিরোইন আর প্যাথিডিন সেবিদের অত্যাচারে আমরা টয়লেট ব্যবহার করতে পারি না। সুই নিতে আর হিরোইন খেতে ওরা একবার টয়লেটে ঢুকলে নুন্যতম এক ঘণ্টার আগে কেউই বের হয় না। ’


 
স্টেডিয়ামের এমন অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মো: ইয়াহিয়ার কাছে প্রতিকার জানতে চাওয়া হলে তিনি জানালেন, ‘আমার একার পক্ষে ওদের দমন করা করা সম্ভব না। পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি সম্পর্কে আমি একাধিকবার অবহিত করেছি কিন্তু তারা কর্ণপাত করছেন না। আপনি দেখে থাকবেন স্টেডিয়ামের লোহা কেটে মাদকসেবিরা ভেতরে প্রবেশ করছে। অথচ এর দুই পাশে বঙ্গভবন ও রাজউক ভবনের পুলিশ থাকে। বিষয়টি তাদের চোখে পড়লেও তারা কিছুই বলে না। আমি ক্রীড়া পরিষদ সচিবকেও বহুবার ওই কাটা গেইট ঠিক করতে বলেছি কিন্তু উনি এখনও তা করছেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত না ওই কাটা গেইট দিয়ে মাদকসেবিদের আসা যাওয়া বন্ধ হবে ততক্ষণ পর্যন্ত মাদক সেবন বন্ধ করা যাবে না। ’

মাদক সেবন ও জুয়ার আড্ডা ছাড়াও মাঠের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় মানুষের মলমুত্রের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে স্টেডিয়ামের বাতাসে। ফলে আউটার স্টেডিয়াম ও তার আশেপাশের এলাকা মানুষের বসবাসের অনুপযোগি হয়ে উঠেছে।
 
ক্রীড়ায়নের এই যুগে ক্রীড়া দিয়েই যেখানে দেশে ও দেশের বাইরে লাল-সবুজের ক্রীড়াবিদেরা বিরল এক একটি সম্মান বয়ে আনছেন সেখানে ক্রীড়াঙ্গনে মাদকের মত এমন অসামাজিক কার্যকলাপ কতটা যুক্তিসংগত সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর এমন অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে যথাযত কর্তৃপক্ষই বা কবে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে রীতিমত হয়রান হয়ে গেছেন এদেশের কোটি কোটি ক্রীড়া প্রেমিক ও ক্রীড়া সংগঠকেরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
এইচএল/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।