ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

‘ফুটবলার হিসেবে নিজের পরিচর্যা করতে পারিনি’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
‘ফুটবলার হিসেবে নিজের পরিচর্যা করতে পারিনি’ ছবি: সংগৃহীত

আবারো কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলের জাদুকর দিয়েগো ম্যারাডোনা। লম্বা বিরতির পর কোচিং পেশায় ফিরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় বিভাগের দল আল-ফুজাইরাহ ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি শেষে ক্লাবটিতে যোগ দিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি ফিফা ডট কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা জানান, ‘ফুটবলার ম্যারাডোনা সেটাই হতে চাইতো, যা সে করে দেখাতো। ফুটবলকে সে জীবনের মজার অংশ হিসেবে নিয়েছিল।

আর এখনও ফুটবলের সাথে থাকতে পেরে সে ধন্য। ’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি কিছুটা ব্যথিত যে ফুটবলার হিসেবে নিজেকে কখনো পরিচর্যা করতে পারিনি। যেটা আমার করা উচিৎ ছিল। ফুটবলকে সম্মান দিতে পারিনি। সম্মান জিনিসটায় আমার প্রচুর ঘাটতি ছিল। তারপরও আমি যে ফুটবল ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটাই অনেক। অন্তত নাতি-নাতনিদের তো বলতে পারবো-দেখ তোমাদের দাদা ফুটবলে কি রকম খেলেছে, কত কিছুই না করেছে। ’

কিংবদন্তি ফুটবলার হলেও ম্যারাডোনার ক্যারিয়ার জুড়ে ছিল প্রচুর বিতর্ক। নিজ ভুবনের সেরা হয়ে খ্যাতির চূড়ায় উঠেছিলেন, অগনিত ভক্তের ভালোবাসাও পেয়েছিলেন। কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখতে হয়েছে তাকে। ডোপ-পাপের কালিমা লেগেছিল আর্জেন্টাইন মহাতারকার গায়ে। সেই কলঙ্কের দাগ মেখেই বিদায় নিতে হয়েছে ফুটবল থেকে। ডোপ-পাপের প্রেতাত্মা তাড়া করে বেরিয়েছে ম্যারাডোনাকে। তার ড্রাগ আসক্তি এবং তা থেকে মুক্তিলাভের প্রাণান্ত চেষ্টার কথা সবারই জানা। পারফরম্যান্স-বর্ধক ড্রাগ নেওয়ার দায়ে নিষিদ্ধ হন ১৯৯৪ বিশ্বকাপে। মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই ধরা পড়েন ডোপ টেস্টে। আলবেসেলিস্তাদের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ী এ তারকা নিজের জীবনের এই নোংরা আসক্তিটির অধ্যায় নিয়ে জানিয়েছেন, মাদক সেবন ছিল তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত। জানান, বার্সেলোনাতে থাকাকালে ২০ বছর বয়সে তাকে আসক্তিতে পেয়ে বসে। আর আসক্তি শেষ পর্যন্ত তার ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়।

অবশেষে ২০০৪ সালে মাদকের থাবা থেকে মুক্তি পান ম্যারাডোনা। যখন অসুস্থ হয়ে কোমায় ছিলেন, তখন তার মেয়ে বলেছিল তার জন্য কিছুদিন বাঁচতে। ম্যারাডোনা জানিয়েছেন মেয়ে ও নাতি বেঞ্জামিনের প্রতি ভালোবাসাই ছিল তার দুঃসময়ের সম্বল। এরপরই নেশার কালো অধ্যায় থেকে বের হন ম্যারাডোনা। গত ১৩ বছরে আর কোনোরকম মাদক সেবন করেননি বলে জানান ম্যারাডোনা।

২০১২ সালের জুলাইয়ে আল ওয়াসল থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই কোচিংয়ের বাইরে ৮৬’র বিশ্বকাপ জয়ী। এর আগে নিজের প্রিয় ক্লাব ইতালিয়ান জায়ান্ট নাপোলির কোচ হতে চেয়েছিলেন এই ফুটবল কিংবদন্তি। আর্জেন্টিনা জাতীয় দল ছাড়াও দেশটির দ্বিতীয় সারির একটি ক্লাব, প্রিমিয়ার বিভাগে খেলা রেসিং ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। কিন্তু এই ফুটবল জাদুকর একেবারেই সফল হতে পারেননি কোচিং ক্যারিয়ারে। এছাড়া, মরোক্কো, ফিলিস্তিন, চীন, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহারাইন জাতীয় দল আর ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিয়ার কোচ হতে চেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ম্যারাডোনা।

ম্যারাডোনা তার নতুন দলকে নিয়ে যাবেন নেদারল্যান্ডসে। সেখানে ২০ দিনের একটি ক্যাম্প পরিচালনা করবেন তিনি। সেখানে ইউরোপের দলগুলোর সাথে খেলবে ম্যারাডোনার শিষ্যরা। ডাচ জায়ান্ট আয়াক্সের বিপক্ষেও একটি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টাইন এই গ্রেটের ছাত্ররা। খেলোয়াড় হিসেবে সাফল্য ধরতে পারলেও কোচ হিসেবে সাফল্যের খোঁজে ৫৬ বছর বয়সী ম্যারাডোনা। ২০০৮-১০ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার দায়িত্বে ছিলেন। ২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের জেরে চাকরি হারান। পরের বছর যোগ দেন আল ওয়াসলে। এবার ফুজাইরাহ অধ্যায়টা কেমন হবে সেটিই দেখার অপেক্ষা!

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ১৫ আগস্ট ২০১৭
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।