ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

ফিরে দেখা

টেলিভিশনে মেসির প্রথম সাক্ষাৎকার

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২০
টেলিভিশনে মেসির প্রথম সাক্ষাৎকার টেলিভিশনে মেসির প্রথম সাক্ষাৎকারের একটি মুহূর্ত/ছবি-সংগৃহীত

২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর। ১৬ বছর বয়সী লিওনেল মেসি টেলিভিশনে নিজের প্রথম সাক্ষাৎকার দেন। তখন কেবলই জুভেনিল 'এ' দল ছেড়ে বার্সার সঙ্গে পেশাদার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। বার্সেলোনার নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেল 'বার্সা টিভি'র মুখোমুখি হন তিনি।

সেই সাক্ষাৎকারে লাজুক মেসি সব প্রশ্নের ছোট ছোট জবাব দিচ্ছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারের কিছুটা এখানে তুলে ধরা হলো।

চুক্তি
বার্সার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে মেসি বলেন, 'তারা (বার্সার প্রতিনিধি) আমাকে কল করে বলেছিলেন যে তারা আমাকে একজন পেশাদার (ফুটবলার) বানাতে চান এবং এটা ছিল আমার কাছে অনন্যসাধারণ আনন্দের ব্যাপার। '

'এখানে (স্পেনে) তারা (ফুটবলাররা) ১৮ কিংবা ১৯ বছরের আগে এটা ( পেশাদার চুক্তি) করতে পারে না। কিন্তু আর্জেন্টিনায় ১৬ কিংবা ১৭ বছর বয়সের আগেই তারা প্রিমেরায় (আর্জেন্টাইন লিগ) খেলছে। কারণ সেখানে টাকা খুব কম এবং তাদের (ক্লাব) একাডেমি থেকে খেলোয়াড় নিতে হয়। '

মেসির বার্সায় থেকে যাওয়া এবং সেস ফ্যাব্রেগাসের চলে যাওয়া
মেসির চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই বার্সা ছেড়ে আর্সেনালে পাড়ি জমান ফ্যাব্রেগাস। কিন্তু লা মাসিয়ার সতীর্থের পথ অনুসরণ করেননি আর্জেন্টাইন তারকা। তিনি বলেন, 'আমি বার্সেলোনায় সুখে আছি এবং আমি এখানেই সারাজীবন থাকতে চাই। আমি এখানে খেলতে এসেছি এবং বাকিসব ধীরে ধীরে চলে আসবে। '

শুরুর দিনগুলো
মেসি স্বীকার করেন যে বার্সায় তার প্রথম চার বছর খুব একটা সহজ ছিল না। তিনি বলেন, 'প্রথম মৌসুমে খুবই খারাপ কাটে আমার। প্রথম ৬ মাস আমার খুব বাজে সময় ছিল কারণ আমার কাছে (খেলার অনুমতি সংক্রান্ত) কাগজ ছিল না। নিজের প্রথম ম্যাচে আমি ইনজুরিতে পড়লাম আর ২ মাসের জন্য বাইরে চলে গেলাম। শুরুটা আসলেই অদ্ভুত ছিল। '

'আমি আমার সতীর্থদের সঙ্গেই মাঠে যেতাম, কিন্তু আত্মবিশ্বাস কম ছিল, আমি তেমন কথা বলতাম না এবং সেখানে আমি ঠিক খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। ড্রেসিং রুমে আমি যেতাম ঠিকই, কিন্তু কথা বলতাম না। এরপর আমার সতীর্থরাই আমাকে মিশতে সহায়তা করে। '

চরিত্র
সেই শৈশব থেকেই মেসি খুব একটা কথা বলা পছন্দ করেন না। কিন্তু মাঠে ঠিকই নিজেকে উজাড় করে দিতেন। 'সবাই বলে আমি তেমন কথা বলি না, কিন্তু যাই হোক... আমি যখন মাঠে নামি আমি সব ভুলে যাই এবং আমি সেখানে কথা বলতে পছন্দ করি,' ব্যাখ্যা করেন মেসি।

'আমি যখন মাঠে যাই, আমি চেষ্টা করি নিজেকে উপভোগ করার। কিন্তু এমন অনেক ম্যাচ আছে যেগুলোতে আমরা ভালো করতে পারি না এবং আমার তখন রাগ হয়। '

পরিবার ও সামর্থ্য
মেসি বলেন, 'আমি কমলা নিয়ে টানা ৬০টি কিক-আপ করেছি এবং টেনিস বলে করেছি ১২০টি। '

'আমাদের পরিবার ফুটবলারদের পরিবার। আমার যখন ৫ বছর তখন থেকে আমি খেলতে শুরু করি এবং আমি ভালোবেসে ফেলি। আমরা সবাই 'ওল্ড বয়েজ' সমর্থক, শুধু একজন ছাড়া, মাতিয়াস (মেসির ভাই)। '

এই 'ওল্ড বয়েজ'র হয়ে ৬ বছর বয়সে অভিষেক হয় মেসির। সেখানে ৬ বছর খেলে প্রায় ৫০০ গোল করার কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। যদিও ১০ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোনজনিত সমস্যার কারণে তার খেলাই প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার বাবার স্বাস্থ্য বিমা থেকে মাত্র ২ বছর এর চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল। এই চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হতো। 'ওল্ড বয়' শুরুতে খরচ দিতে রাজি হলেও পরে তারা কথে রাখেনি। এরপর বুয়েনস আয়ার্সের ক্লাব রিভার প্লেট তার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে তারাও মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে ক্লাবের সঙ্গে তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও শৈশবের ক্লাব 'ওল্ড বয়েজ'র আজীবন ভক্ত মেসি।

মাঠে পজিশন
শৈশবে কোনো এক পজিশন নির্দিষ্টভাবে খেলতেন না মেসি। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পজিশন পরিষ্কার হয়ে যায়। 'আমি মিডফিল্ডারদের সামনে খেলতে পছন্দ করতাম, বলও পেতাম অনেক এবং যখনই পেতাম, খেলতাম। তবে আমার পছন্দ ১০ নম্বর পজিশন। আমি বেশি ফাঁকায় খেলতে পছন্দ করি না। '

গোল
বয়সভিত্তিক খেলায় কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচী থাকে না। তারপরও ক্যাডেট সাইডের হয়ে ৩৬ গোল করেছিলেন মেসি। 'আমি গোল করতে এবং সতীর্থদের দিয়ে গোল করাতে পছন্দ করি। আমি দলের জন্য সেরাটাই করি।

ভবিষ্যৎ
বার্সেলোনা যুব দলের হয়ে খেললেও খুব দ্রুতই উন্নতি করেন মেসি। ক্যাডেট 'এ' দলের হয়ে খেলে সরাসরি 'জুভেনিল 'এ' দলে জায়গা করে নেন তিনি।

নিজের পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, 'আমি সরাসরি বার্সেলোনা 'বি' দলে খেলতে চাই। আগে 'সি' টিমকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। এরপর আমি বার্সেলোনা 'বি' দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই এবং মূল দলে বিকল্প হতে চাই, যদিও আমি 'বি' দলের হয়ে খেলব এবং মূল দলের সঙ্গে অনুশীলন করব। '

ভয়
ছোট ছোট জবাব থেকেই এটা পরিষ্কার ছিল যে মিডিয়ার মুখোমুখি হওয়া তখনও শেখানো হয়নি তাকে। তাই কোনো ভনিতা ছাড়াই বলে দেন, 'আমি মাঠের চেয়ে এখানেই (স্টুডিওতে) বেশি নার্ভাস। আমি মাঠে নিজেকে ভুলে যাই এবং খেলায় মজে যাই। এখানে কিছুটা অস্বস্তি লাগছে। '

বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।