ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

স্বপ্নেও ভাবিনি কারাগারে যেতে হবে: রোনালদিনহো

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২০
স্বপ্নেও ভাবিনি কারাগারে যেতে হবে: রোনালদিনহো কারামুক্তির পর রোনালদিনহো/ছবি: সংগৃহীত

ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ও অসাধারণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় রোনালদিনহোর ফুটবল জাদুতে মোহিত হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই ভার। তিনি ২০০২ বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি হয়েছিলেন দু'বারের ফিফা বর্ষসেরা এবং একবার ঝুলিতে পুরেছিলেন ব্যালন ডি'অরও। কিন্তু এমন অমিত প্রতিভার অধিকারী একজন ফুটবলার কিনা অপরাধের দায়ে জেল খাটলেন, তাও জাল পাসপোর্টের কারণে!

জাল পাসপোর্ট নিয়ে প্যারাগুয়েতে প্রবেশ করায় গত ৬ মার্চ গ্রেফতার হয়েছিলেন রোনালদিনহো। সেই সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন তার ভাই এবং বিজনেস ম্যানেজার রবের্তো অ্যাসিস।

তাদের গ্রেফতারের ঘটনায় ফুটবলবিশ্ব চমকে গিয়েছিল। এতদিনে বার্সেলোনার সাবেক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জানালেন, এমনকি তিনি নিজেও হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি।  

মূলত প্যারাগুয়েতে আসার পেছনে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যাসিনো উদ্বোধন ও বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা। তার আগেই জাল পাসপোর্টের কারণে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যেতে হয় তাকে। এর ৩২ দিন পর গত ৭ এপ্রিল কারামুক্ত হয়েছেন রোনালদিনহো ও তার ভাই। এজন্য তাদের ১.৭ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৪ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিতে হয়েছে।  

জেল থেকে ছাড়া পেলেও পুরোপুরি মুক্তি মিলছে না রোনালদিনহো ও অ্যাসিসের। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশটির রাজধানী আসুনসিওনের একটি চার তারকা হোটেলে বন্দি অবস্থায় থাকতে হবে তাদের। এতদিন কারাবন্দি জীবন সম্পর্কে কিছু বলেননি বার্সা কিংবদন্তি। তবে করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেই হোটেলকক্ষে বসে প্যারাগুয়ের একটি দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সেখানেই নিজের বন্দিজীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।

রোনালদিনহো বলেন, 'আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমাকে এরকম (কারাগারে বন্দি) পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আমি বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম। আমি সারাজীবন পেশাদার মানুষ হিসেবে কাটানোর চেষ্টা করেছি এবং আমার ফুটবল দক্ষতা দিয়ে মানুষের মাঝে আনন্দ বিলিয়েছি। '

'আমি এখানে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখানে এসেছিলাম। আমার মূল কাজ ছিল একটি ক্যাসিনো উদ্বোধন এবং একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখানে এসেছিলাম তারাই আমাদের সব কাগজপত্র সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু যখন জানতে পারলাম আমাদের কাছে থাকা পাসপোর্ট ভুয়া, তখন হতভম্ব হয়ে যাই', যোগ করেন তিনি।

কারাগারে কাটানোর সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'কারাগারে সবাই আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিল। ওই সময়টা আমার জীবনের একটা অংশ। ফুটবল খেলা, অটোগ্রাফে দেওয়া, ছবি তোলা এসবও হয়েছে। তবে এগুলো খুব একটা গুরুত্ববহ ছিল না, কারণ যারা সেখানে (জেলখানায়) আছে তারা আমার মতোই কঠিন সময় কাটাচ্ছে। তবে এই সময়টা কখনো ভুলে যাওয়া কিংবা অগ্রাহ্য করব না। '

দেশে ফিরতে আকুল রোনালদিনহো বলেন, 'শুরু থেকেই আমার আইনজীবীরা আদালতকে বোঝাতে চেয়েছিল যে, কাগজপত্র সব আমন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান দিয়েছে। আমার বিশ্বাস ছিল আদালতে এটা প্রমাণিত হবে। আমরা আশা করি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এবং আমরা বাড়ি ফিরতে পারব। '

২০১৫ সালে ফুটবলকে বিদায় বলার পরও রোনালদিনহোর জনপ্রিয়তার ভাটা পড়েনি। সারাবিশ্বেই তার অগণিত ভক্ত এবং এজন্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে তার মূল্যও অসামান্য। প্যারাগুয়ের এক ক্যাসিনো মালিক ঠিক এ কারণেই তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।  

কিন্তু একটা প্রশ্ন অনেকের মাথায় ঘুরছে, প্যারাগুয়েতে প্রবেশের জন্য ব্রাজিলিয়ানদের কোনো পাসপোর্ট দেখাতে হয় না। তাহলে রোনালদিনহোকে কেন জাল পাসপোর্ট সরবরাহ করা হলো? এমনকি দুই ভাইয়ের আইনজীবীও দাবি করেছেন, তাদের এভাবে বন্দি করে রাখা বেআইনি। তাহলে ব্যাপারটা আসলে কি? এই প্রশ্নের উত্তর বিচারকার্য শেষেই হয়তো পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।