লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার পথে প্রধান বাধা তার ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর রিলিজ ক্লজ, যা পরিশোধের সামর্থ্য নেই প্রায় কোনো ক্লাবেরই। ফলে তার ক্যাম্প ছাড়াও প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছে।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) লিওনেল মেসির ভবিষ্যৎ নিয়ে বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তোমেউ’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার বাবা এবং এজেন্ট হোর্হে মেসি। আর্জেন্টিনা থেকে বার্সায় ছুটে আসা হোর্হে জানিয়েছেন, তার ছেলের পক্ষে বার্সায় থেকে যাওয়া ও খেলা চালিয়ে যাওয়া ‘কঠিন’। কিন্তু মেসি-বার্সা বিচ্ছেদ পর্বের সঙ্গে জড়িত এমন কয়েকজনের বরাতে ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ জানিয়েছে, দুই পক্ষের আলোচনায় মেসিকে যেতে দেওয়ার বিনিময়ে ১০০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’র শর্ত জুড়ে দিয়েছেন বার্সা প্রেসিডেন্ট।
এদিকে বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) স্প্যানিশ ফুটবল সাংবাদিক গুইলেম বালাগ বিবিসি রেডিওকে জানিয়েছেন, দুই পক্ষ এখনও কোনো সমাধানে আসতে পারেনি এবং বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার দরকার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এক পর্যায়ে আমরা চুক্তিতে যাবো এবং মেসি বার্সা ছাড়বেন। ’
বালাগ আরও জানান, রেকর্ড ছয়টি ব্যালন ডি’অরের মালিক আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের সঙ্গে চুক্তির দৌড়ে সবার আগে আছে ম্যানচেস্টার সিটি এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটির ব্যাপারে ইতোমধ্যে মেসি আগ্রহীও। তবে মেসি এবং বার্সার মধ্যে চুক্তির রিলিজ ক্লজ নিয়ে বাদানুবাদ হচ্ছে এবং তিনি যদি ফ্রি ট্রান্সফারে ক্যাম্প ন্যু ছাড়তে না পারেন তবে সিটিকে বাই-আউট ক্লজ অনুযায়ী ৭০০ মিলিয়ন ইউরো (৬২২ মিলিয়ন পাউন্ড) পরিশোধ করতে হবে কাতালানদের।
বার্সা এখনও দাবি করছে, মেসি বিক্রির জন্য নন এবং তার সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়া কোনো আলোচনা হবে না। কিন্তু মেসি তার সিদ্ধান্তে অটল। এরইমধ্যে প্রাক-মৌসুমকে সামনে রেখে দলের অনুশীলনে হাজির হননি তিনি। এর আগে ক্লাবের বাধ্যতামূলক করোনা টেস্টও করাননি তিনি। এজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে বার্সা। তবে সবাই জানে এখন চাইলে অন্য কোনো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি সেরে রাখতে পারেন মেসি। ফলে পরের মৌসুমে তিনি বিনা ট্রান্সফার ফি’তে চলে যেতে পারবেন।
তবে মেসির আইনজীবীরা হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। এরইমধ্যে তারা রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ১০০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’তে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার উদাহরণ দেখিয়ে মেসির ক্ষেত্রেও একই বিষয় সামনে আনছেন। এছাড়া করোনা মহামারির কারণে ক্লাবের আর্থিক দৈন্য, দলবদলে এর প্রভাব, মেসির বিশাল অংকের বেতন দেওয়া থেকে মুক্তি মিলিয়ে বার্সার জন্য এই সওদা লাভজনক হবে বলেই মত তাদের।
মেসিকে দলে ভেড়ানোর সবচেয়ে কাছে অবস্থান করছে ম্যানচেস্টার সিটি। মেসি দলবদলের বাজারে আসা মাত্রই তারা লুফে নেবে। আর তার বিশাল অংকের বেতন দেওয়াও তাদের পক্ষে খুবই সম্ভব। ট্রান্সফার ফি যদি ১০০ মিলিয়ন ইউরো হয় তাহলেও তারা সহজেই দিতে পারবে। কিন্তু ৭০০ মিলিয়ন রিলিজ ক্লজ কিছুতেই সম্ভব নয়। ফলে আরও এক মৌসুমে অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের উপায় থাকবে না।
এদিকে এরইমধ্যে স্কোয়াডে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে বার্সা। ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচকে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া তারই উদাহরণ। ক্লাবের খরচ কমাতে খুব শিগগিরই আর্তুরো ভিদাল ও লুইস সুয়ারেসকেও বেচে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু মেসির ব্যাপারতাই আটকে আছে। বিষয়টা নিয়ে বার্সা বোর্ডও বিভক্ত। কেউ কেউ চাইছেন মেসিকে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনে সরে দাঁড়ান বার্তোমেউ।
বার্সা বোর্ডের কেউ কেউ চাইছেন মেসিকে বেচে দিয়ে কয়েকজন তারকা খেলোয়াড় কেনা হোক। কিন্তু বিনা রিলিজ ক্লজ বা ট্রান্সফার ফি’তে মেসিকে কিছুতেই ছাড়তে রাজি নন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। কারণ এমনটা হলে আর্থিক ক্ষতির কারণে আসন্ন বোর্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যেতে পারেন বার্তোমেউ। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলাও হতে পারে।
অন্যদিকে মেসিও জানেন, বার্সায় এখন শিরোপা জেতার মতো দল গঠন করতে কত পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ তার হাতে সময় কম, ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে আরও কয়েকটা শিরোপা ঘরে তোলার ইচ্ছা তার অদম্য। মেসির ধারণা, দল পুনর্গঠন করে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতার উপযোগী করতে কমপক্ষে দুই বছর লেগে যাবে। ফলে তার ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে শুধু অর্থ নয়, শিরোপা জেতার ক্ষুধাও অন্যতম। দুই বছর তার জন্য অনেক লম্বা সময়।
ক্যাম্প ন্যু ছাড়তে হলে মেসি ও তার বাবাকে যে করেই হোক বোর্ডকে তার বাই-আউট ক্লজের বাস্তবতা বোঝাতে হবে। বার্সার দাবি, গত ১০ জুন এই ক্লজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অর্থাৎ চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে গেছে। এখন ৭০০ মিলিয়ন ইউরো দিয়েই যেতে হবে। কিন্তু মেসিদের দাবি, করোনা মহামারির কারণে যেহেতু মৌসুম শেষ হয়েছে দেরিতে, তাই ক্লজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২৩ আগস্ট। অর্থাৎ ফ্রিতেই যেতে পারবেন তিনি।
যারা মেসির সঙ্গে বার্সার চুক্তি স্বচক্ষে দেখেছেন তাদের অনেকেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চুক্তিতে ক্লজের বিষয়টি পরিষ্কার নয় এবং এটা আলোচনাসাপেক্ষ। এখন যদি বার্সা বিষয়টা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়, তাহলে মেসিরই ক্ষতি হবে। কারণ এই ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চাইবে তাকে কিনতে আগ্রহী ক্লাব। অন্যদিকে হেরে গেলে বার্সায় তার পক্ষে খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। ক্ষতি অবশ্য বার্সারও হবে। দলের সেরা খেলোয়াড় যদি মনঃক্ষুণ্ণ থাকেন, তাহলে ক্ষতি তো হবেই। তার ইমেজ বিক্রি করে যে বিপুল পরিমাণ আয় করে বার্সা, সেটাও হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০
এমএইচএম