ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

বার্সেলোনা: সেতিয়েনের ‘গরু’ থেকে কোম্যানের ‘ষাঁড়’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২০
বার্সেলোনা: সেতিয়েনের ‘গরু’ থেকে কোম্যানের ‘ষাঁড়’

কিকে সেতিয়েনের গরু–প্রেমের কথা ফুটবল সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা সবারই কমবেশি জানা। লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি নিজের খামারে নিয়ে গরুর পালকে দেখাতে চেয়েছিলেন সাবেক বার্সা কোচ।

তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

উল্টো ছন্নছাড়া পারফরম্যান্স আর টানা ব্যর্থতার জেরে ‘মেসিদের গরু বানিয়ে দিয়েছেন’ এমন কটাক্ষও শুনতে হয়েছে তাকে। অথচ নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যান দায়িত্ব নিয়েই পুরোপুরি বদলে দিয়েছেন দলটাকে। দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র ৪৬ দিন পার হয়েছে এবং এখনই কোম্যান তার দলকে ‘গরু’ থেকে ‘ষাঁড়’ বানিয়ে দিয়েছেন বলে প্রশংসাবাক্য ঝরে পড়ছে সমালোচকদের মুখ থেকে।

চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলে হারার ধাক্কার পর দলের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা, সবমিলিয়ে টালমাটাল হয়ে পড়েছিল বার্সা। কিন্তু এমন কঠিন সময়ে শক্ত হাতে হাল ধরে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন কোম্যান। যার নজির দেখা গেল মৌসুমের প্রথম দুই লিগ ম্যাচেই।

যদিও দলের মূল খেলোয়াড়দের অনেকেই চলে গেছেন। তবু যারা আছেন তাদের নিয়েই লড়ে যাচ্ছেন কোম্যান। দলের খেলোয়াড়দের মাঠের আচরণও বদলে গেছে। ডাচ কোচের ফিটনেস ট্রেনিং থেকেই বিষয়টা সামনে এসেছিল। অর্থাৎ খেলোয়াড়দের ফিটনেস লেভেল নিয়ে দারুণ কাজ করেছেন তিনি। ভিয়ারিয়ালকে ৪-০ এবং সেল্টা ভিগোকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ায় যার প্রমাণ মিলেছে।

এমনকি বার্সার খেলোয়াড়রাও স্বীকার করেছেন, বায়ার্ন ম্যাচের চেয়ে এখন তাদের ফিটনেস লেভেলের অনেক উন্নতি হয়েছে। সেল্তা ভিগো ম্যাচের পর যেমন সের্হি রবের্তো বলেন, ‘বায়ার্নের বিপক্ষে খেলতে নেমে আমরা বুঝতে পারছিলাম আমাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। এবার আমরা প্রাক-মৌসুমে শারীরিক বিষয়গুলোর দিকে বাড়তি নজর দিয়েছি যার ফল আপনারা ম্যাচে দেখতে পাচ্ছেন। ’

শুধু ফিটনেস নয়, বর্তমান বার্সা দলটিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন এসেছে। সেগুলো কী এবং কীভাবে এলো তা নিয়ে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’র বিশ্লেষণ নিচে তুলে ধরা হলো-

ফিটনেস
আগেই বলা হয়েছে, প্রাক-মৌসুমে কোম্যান ফিটনেসের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন। যার ফল মাঠে দেখা যাচ্ছে।

রক্ষণে উন্নতি
গত কয়েক মৌসুম ধরেই বার্সার রক্ষণভাগের দুর্বলতা চোখে পড়েছে। তবে কোম্যানের অধীনে তাতে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। গত দুই ম্যাচেই রক্ষণভাগের নিবেদন ছিল চোখে পড়ার মতো। বল হারিয়ে ফের দখলে নেওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন ডিফেন্ডাররা। এমনকি প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে ব্লক করায়ও চতুরতা দেখিয়েছেন তারা। এখনও যদিও পুরো মৌসুম সামনে পড়ে আছে, তবুও দুই ম্যাচেই ক্লিন শিট বজায় রাখা ভালো লক্ষণ বলাই যায়।

ডাবল পিভট
বার্সাকে ৪-২-৩-১ ফরম্যাশনে খেলাচ্ছেন কোম্যান। যেখানে দুজন হোল্ডিং মিডফিল্ডারকে খেলানো হচ্ছে। আর এই দুজন হলেন ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং এবং সার্জিও বুসকেতস। দুজনেই বেশ দারুণ মানিয়ে নিয়েছেন এই ফরম্যাশনের সঙ্গে।

আনসু ফাতি
গত মৌসুমেই চমক দেখিয়েছিলেন বার্সার নতুন সেনসেশন। তরুণ এই ফরোয়ার্ডকে এবার শুরুর একাদশে নিয়মিত নামাচ্ছেন কোম্যান। কোচের আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছেন তিনি। গত দুই ম্যাচে ৩ গোল করা ফাতিকে মেসির যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে লুইস সুয়ারেস বিদায় নেওয়ার পর ফাতিকেই এখন দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে বার্সার পক্ষ থেকে সুয়ারেসের বিকল্প খোঁজার তাড়াও আর দেখা যাচ্ছে না।

জর্দি আলবার ঘুরে দাঁড়ানো
গত মৌসুমে বার্সার সবচেয়ে সমালোচিত খেলোয়াড় ছিলেন আলবা। তবে এই মৌসুমেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। রক্ষণে বিশ্বস্ত এবং আক্রমণে শক্তিশালী হিসেবেই দেখা যাচ্ছে তাকে।

কুতিনহোর ‘নবজন্ম’
বার্সার জার্সি গায়ে চাপানোর পর থেকেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন ফিলিপ্পে কুতিনহো। লিভারপুলের সেই বিধ্বংসী ফর্ম কোথায় যেন মিলিয়ে গিয়েছিল। এক মৌসুম পরে তাই ধারে খেলে এলেন বায়ার্ন মিউনিখে। সেখানে বাভারিয়ানদের হয়ে ঘরোয়া ও চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতলেও থিতু হতে পারেননি। ফলে ফের ক্যাম্প ন্যুয়ে ফিরে আসেন এই ব্রাজিলিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।

তবে ফিরে এসে কোম্যানের হাতে পড়তেই অনেকটা বদলে গেছেন কুতিনহো। বার্সার রেকর্ড সাইনিং অবশেষে ফল দিতে শুরু করেছে। প্লেমেকার হিসেবে ক্রমেই নিজের আগের ফর্মে ফিরতে শুরু করেছেন তিনি। দূরপাল্লার শটে এখনও কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে বটে, কিন্তু মেসির সঙ্গে তার জুটি গড়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

মেসির মুখে হাসি ফিরেছে
ক্যাম্প ন্যু থেকে ‘যাই যাই করেও যাওয়া হয়নি’। স্বাভাবিকভাবেই ইচ্ছা পূরণ না হওয়ায় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন মেসি। পরে আবার প্রিয় বন্ধু সুয়ারেসের বিদায় আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। তবে সব ভুলে ক্রমেই আসল রূপে ফিরতে শুরু করেছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। নেতৃত্বভারও বয়ে চলেছেন এখনও। পেয়ে গেছেন গোলের দেখাও। তরুণ ও নবীনদের সঙ্গেই সেতুবন্ধ তৈরি হচ্ছে তার।

কোম্যানের অধীনে মেসির সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো মাঠে পজিশন বদলে যাওয়া। স্বাভাবিক পজিশনে না খেলে এখন ফলস নাইনে খেলছেন তিনি। আক্রমণভাগের মূল সঙ্গী সুয়ারেস না থাকলেও এই পজিশনে বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছেন তিনি।

এর আগে কিংবদন্তি বার্সা কোচ পেপ গার্দিওলার অধীনে ফলস নাইনে খেলে দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন মেসি। এক মৌসুমে রেকর্ড ৯১ গোলও এসেছিল এই পজিশনে খেলেই। কোম্যানও তাকে সেই পজিশন ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই পজিশনে খেলেই এরইমধ্যে এক গোল ও ২ অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, মেসির মুখে হাসি ফিরেছে। যা সমর্থকদের জন্য সবচেয়ে বড় সুসংবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।