প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে: টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইস্তাম্বুলের ফ্লাইট সকাল ৭টায়। ৯ ঘণ্টা ১০ মিনিটে সেখানে পৌঁছানোর পর কানেক্টিং ফ্লাইট দুই ঘণ্টা ১০ মিনিট পর।
ইস্তাম্বুল থেকে আকাশে উড়ার ৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিট পর ফ্লাইট পৌঁছাবে প্যারিসের চার্লস দ্য গল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে।
এর আগে মঙ্গলবার (০৮ ডিসেম্বর) ঢাকার স্থানীয় সময় সাড়ে ৪টায় পৌঁছালাম হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে।
বোর্ডিংপাস নিয়ে ইমিগ্রেশন পার হতে বেশি সময় লাগেনি। হয়তো ভোরে বিমানবন্দরে যাত্রী কম থাকায় ‘চিরায়ত’ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি।
যারা লাউঞ্জে বসে আছেন তাদের বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যেগামী প্রবাসী শ্রমিক। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছেন নারী শ্রমিক।
এসব শ্রমিকের রক্ত ঝরা ঘামেই আজকের বাংলাদেশের মজবুত হতে থাকা অর্থনীতির প্রধান শক্তি। বাকিরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। যার মধ্যে বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন দেশের নাগরিকও রয়েছেন।
বোর্ডিং চেকিং শেষ হলো ভোর সাড়ে ৫টায়। সাড়ে ৬টায়ও টার্কিশ এয়ারলাইন্সের গেট খোলার খবর নেই। খবর নিয়ে জানা গেল, সাড়ে ৫টায় যে ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল থেকে ঢাকায় আসে, তা এখনও পৌঁছায়নি।
অবশেষে ফ্লাইট এলো সকাল ৭টায়। যাত্রী ও লাগেজ নামার পর, পাইলট কেবিন ক্রুর দল বদল হলো। এরপর আনুসঙ্গিক কাজ সেরে তাতে যাত্রী উঠতে উঠতে বেজে গেল সাড়ে ৭টা।
সকাল পৌনে ৮টায় আকাশে উড়াল দিল ইস্তাম্বুলের উদ্দেশ্যে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি। মনের মধ্যে তখন টানাপোড়েন শুরু গেল, কানেক্টিং ফ্লাইটের সময় প্রায় ১ ঘণ্টা এখানেই যে কমে গেল!
উড়োজাহাজ যখন আকাশে উড়ছে মনিটরে তখন গন্তব্যের পথ ভাসছিল। কাঠমান্ডুর উপরে যখন প্লেন উড়ছে, তখন ১২ হাজার ফুট উপরে।
সেখান থেকেই প্লেনের জানালা দিয়ে পাখির চোখে দেখে নিলাম কাঞ্চনঝঙ্ঘা, এভারেস্ট ও মধ্য এশিয়ার পর্বতমালা, সুনীল সাগর, হ্রদ ইত্যাদি। চোখের এই প্রশান্তিতে ফ্লাইট দেরি হওয়ার কথা যেন বেমালুম ভুলেই গেছি!
কিন্তু তাই কী আর হয়? উড়োজাহাজ যখন পারস্য সাগর পাড়ি দিয়ে, ইস্তাম্বুলের অবতরন করছে, তখনই দেখা গেলো ইস্তাম্বুল ঢেকে আছে কালো মেঘ আর ঘন কুয়াশায়।
বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ থেকে নামতেই যেন হাড় কাঁপানো শীত স্বাগত জানালো। ঠাণ্ডার মধ্যেই দ্রুত বাসে করে টার্মিনালে যখন পৌঁছালাম, ট্রানজিট চেকিংয়ের সময় আছে মাত্র ৩০ মিনিট। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় বলতে গেলে দৌড়ে ফ্লাইটে উঠতে হলো।
এবার ঠাণ্ডা কিংবা শীত নেই, তাই ৩ ঘণ্টা উড়েই প্লেন চলে এলো প্যারিসের আকাশে। তখন শুরু হলো তুমুল ঝড় বৃষ্টি। কয়েকবার চেষ্টার পর নিরাপদে ডি গ্যালের টারমাক স্পর্শ করলো টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট টিকে ১৮২৭। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাজ বেশ ভালোভাবেই শেষ করলাম। কিন্তু লাগেজ আনতে গিয়ে পড়লাম বিড়ম্বনায়। টানা ১৭ ঘণ্টার ভ্রমণ ক্লান্তি বাড়িয়ে দিলো লাগেজ না পাওয়ার কষ্ট!
টার্কিশ এয়ারলাইন্সের স্থানীয় কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারলাম, ইস্তাম্বুলে রয়ে গেছে লাগেজ। প্যারিসের তাপমাত্রা তখন ৯ ডিগ্রি। তবে ঝড়-বৃষ্টি শীতের প্রকোপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
উড়োজাহাজকর্মী জানালেন, ‘লাগেজ এলে কল দেওয়া হবে। ’
বিমানবন্দর থেকে শাটল ট্রেনে মেট্রো টার্মিনাল। সেখান থেকে কপ-২১ ভেন্যুর স্টেশন লা বুর্জে। এখান থেকে সম্মেলনের শাটল বাস ধরে কপ সেন্টারে।
তখন স্থানীয় সময় রাত ঘনিয়ে গেছে। সবাই শীতের হাত থেকে রক্ষা করতে ছুটে চলছেন নিজ নিজ গন্তব্যে, যাচ্ছেন হোটেল কিংবা বাসায়।
এবার আমার হোটেল খোঁজার পালা। আবার বাসে চেপে স্টেশনে গিয়ে মেট্রো টিকিট কিনলাম। গন্তব্য প্যারিস সিটি সেন্টারের গোর্দে নর্দ। ছোটভাই শাহীনের সহায়তায় যখন হোটেল খুঁজে পেলাম, তখন রাত ১২টা ছুঁইছুঁই। ঢাকায় তখন ভোর ৫টা পেরিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত টার্কিশ এয়ারের লাগেজ বিড়ম্বনায় প্রায় ভেজা কাপড়ে পার হলো প্যারিসের প্রথম রাত। তখন প্যারিস স্থানীয় সময় প্রায় চারটা। এখনও পর্যন্ত লাগেজ বিষয়ে কোনো ‘কল’ করেনি টার্কিশ এয়ারলাইন্স।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫
আরএম/এমএ
** কপ-২১ সম্মেলনের সফলতা নিয়ে ধোঁয়াশা
** বাংলানিউজের মাসুদ এখন প্যারিসে
ফ্রান্স
প্যারিস থেকে রহমান মাসুদ
টার্কিশ এয়ারের লাগেজ বিড়ম্বনায় প্যারিসে
রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।