ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফ্রান্স

প্যারিস থেকে রহমান মাসুদ

কপ-এ উত্তেজনা, উপেক্ষিত বাংলাদেশ

রহমান মাসুদ, ম্পেশাল করেসপন্ডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
কপ-এ উত্তেজনা, উপেক্ষিত বাংলাদেশ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্যারিস, ফ্রান্স: বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২১) শেষ পর্যায়ে এসে সম্মেলন কেন্দ্রে রাতভর চরম উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকিতে থাকা দেশগুলো।

এরইমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে কপ-২১ চুক্তির তৃতীয় খসড়া।

খসড়ায় স্বল্পোন্নত, দ্বীপ রাষ্ট্র ও আফ্রিকার দাবিকে উপেক্ষা করেছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে এ খসড়া প্রকাশিত হয়।

এরপরই স্বল্পোন্নত দেশগুলো ক্ষেভে ফেটে পড়ে। দেশগুলোর আলোচকরা বসেন আলোচনার টেবিলে। এ আলোচনা চলে শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) ভোর পর্যন্ত।

শুক্রবার ১৯৬ জাতির এ সম্মেলন একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শনিবার পর্যন্ত সম্মেলন সময় বাড়ানো হয়েছে।

শুক্রবার রাতে চতুর্থদফা খসড়া প্রকাশের কথা। তবে বাংলাদেশের আলোচকরা বলছেন, এবার চুক্তি বা আউটকামের কোনো কিছুই চূড়ান্ত হচ্ছে না। এজন্য অন্তত আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্যতম সমন্বয়ক ড. কাজী খলিকুজ্জমান এ সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় খসড়ায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও নাজুক হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দাবিকে আরও বেশি ব্রাকেটবন্দি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তার মানে আমরা যে দাবি করেছিলা, সে বিষয়ে উন্নত দেশগুলো এখনো একমত হতে পারেনি। তবে আমরা এ শতকে তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি বাড়তে না দেওয়ার যে কথা বলেছি, তাতে তারা একমত না হলেও ২ ডিগ্রির নিচে রাখতে একমত হয়েছে।

কাজী খলিকুজ্জমান বলেন, ক্ষতিপূরণের জন্য সাত বছর আগে যে ১শ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিলো, এখনও তাই আছে। তবে এবার তা ব্রাকেটবন্দি হয়েছে। উন্নত দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর টাকা পাওয়ার পদ্ধতি সহজ করার কথা খসড়ায় বললেও পদ্ধতি নির্ধারণে একমত হতে পারেনি।

তিনি বলেন, আমরা কোপেনহেগেন সম্মেলনে যে পর্যায়ে পৌঁছেছিলাম এখানে তার ব্যত্যয় হয়েছে। অগ্রাধিকার ও সহজ পদ্ধতিতে অর্থায়নের দুই বিষয়ে স্বল্পোন্নত, দ্বীপ রাষ্ট্র ও আফ্রিকার দেশগুলোর বিষয়ে সবাই (উন্নত দেশগুলো) একমত হতে না পেরে ব্রাকেটবন্দি করেছে।

এই পরিস্থিতিতে নতুন আবির্ভাব হয়েছে হাই অ্যাম্বিশন প্রেশার গ্রুপ। আমেরিকাও এ গ্রুপে আছে। এলডিসি দেশগুলো ঢুকেছে এ গ্রুপে। আমরা বাংলাদেশের কথাগুলো স্ট্রংলি বলেছি, বলছি। বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে পরিষ্কার। আমরা একটি পরিণতি আশা করছি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এখানে মোড়লরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ওরা রাতের আঁধারে সিদ্ধান্ত নেয়। যোগ করেন তিনি।

এদিকে সম্মেলনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্য এক সদস্য ড. মিজান আর খান এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, প্রকাশিত তৃতীয় খসড়ায় বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু নেই। শেষ রাতে তারা (উন্নত দেশগুলো) এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত ও হুমকিতে থাকা দেশগুলো সম্পর্কে কোনো জোরালো বক্তব্য নেই।

তিনি জানান, উন্নত দেশগুলো নিজেরা কথা না বলে ভারত, সৌদি আরব, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো দিয়ে কথা বলাচ্ছে এবং কোনো কমিটমেন্টে আসতে বাধা দিচ্ছে। আমরা চাই একটি শক্ত কমিটমেন্ট ও অর্থায়ন।

ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) সংবাদকর্মী অভিক র‍ায় বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় খসড়ায় ভারত মোটেও খুশি নয়। ভারত চেয়েছে একটা চুক্তি হোক।

তিনি বলেন, সম্মেলনের শুরু থেকেই ভারত ও চীন এলডিসি এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষে কথা বলছে। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া ভারত, চীন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তবে এটা সত্য আমরা শতাব্দীর তাপমাত্রা বাড়ার স্কেল দেড় ডিগ্রি নির্ধারণ চাই না। এটা ২ ডিগ্রিই রাখতে হবে।

যে যাই বলুক, সম্মেলনে যোগ দেওয়া সবার মতে আগামীকালই নির্ধারণ হবে সম্মেলনের ভাগ্য।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
আরএম/এএ|

** ১০ হাজার সংবাদকর্মীর মিডিয়া রুম
** কপ-২১ সম্মেলনের সফলতা নিয়ে ধোঁয়াশা
** বাংলানিউজের মাসুদ এখন প্যারিসে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।