প্যারিস, ফ্রান্স থেকে: অবশেষে ‘প্যারিস চুক্তি’ স্বাক্ষর হলো। স্থানীয় সময় শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্যারিস এগ্রিমেন্টে সই করতে সম্মত হয়।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরিসহ ১৯৬ দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এটিকে ঐতিহাসিক চুক্তি বলছেন প্রায় সবাই। গত ২৯ নভেম্বর থেকে চেষ্টা চলছিল এই চুক্তিটির জন্য। তবে হওয়া যাচ্ছিল না এক মত। শুক্রবার সম্মেলন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শনিবার তা বাড়িয়ে নেওয়া হয়। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা শেষে হলো চুক্তি।
২০০৯ সালে যখন কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সম্মেলন হয়, তখন থেকেই এ চুক্তির বিষয়ে কথা ওঠে।
‘অ্যাডাপটেশন অব দ্য প্যারিস এগ্রিমেন্ট’ শীর্ষক এ চুক্তির মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে ১৪ দিন ধরে চলে আসা ‘কনফারেন্স অব প্যারিস’ বা কপ-২১ সেশন। পরবর্তী সম্মেলন আগামী বছর মরক্কোর মারাকাসে ৭-১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
সন্তুষ্ট বাংলাদেশ:
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে হওয়া চুক্তিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলও। তবে চুক্তির কোথাও কোথাও দুর্বলতা আছে এটি মানছেন তারা। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংন্থাগুলো (এনজিও) মনে করছে চুক্তিটি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য আসলেই হতাশার।
বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য ড. আইনুন নিশাত এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যা যা চেয়েছিলাম চূড়ান্ত হওয়া চুক্তিতে তা তা আছে। যদিও এবার সবাই যার যার ইস্যু নিয়েই কথা বলেছে।
তিনি বলেন, এতোদিন ‘শ্যাল, শ্যুড, মে’ শব্দগুলোর খেলা ছিল। এবার এগুলোর কোনটা কোনো দেশের জন্য তা নির্দিষ্ট হয়েছে। কার্বন কমানোর বিষয়ে তারা একমত হয়েছে এবং এ শতকের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির নিচে আনতে সম্মত হয়েছে।
তিনি জানান, অর্থায়নের বিষয়ে উন্নত দেশগুলো টাকা দিতে রাজি আছে। তবে চুক্তিতে বলা হয়েছে- উন্নত দেশ টাকা দেবে আর উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের মতো করে চেষ্টা করবে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো বলেছে- কেবল মুখে-মুখে উন্নয়ন নয়, সুনির্দিষ্ট ফলাফলের ভিত্তিতেই কেবল তারা পর্যাপ্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করবে।
আইনু নিশাত আরও বলেন, ওয়ারেসা চুক্তির যে প্রতিবেদন আগামী বছর প্রকাশিত হবে তার ভিত্তিতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা বলা হয়েছে চুক্তিতে। তারা ঠিক করবে বাস্তুচ্যুত মানুষের ঠিকানা নির্মাণের স্থান ও কৌশল।
তবে প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু তহবিলের ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে কথা ছিল তা ২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে গঠনের জন্য বলা হয়েছে বলে জানান আইনু নিশাত।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চুক্তিতে এবার উন্নত দেশগুলো বলতে গেলে একটি কথা জোর করেই যোগ করেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না।
তবে কোস্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চুক্তিতে বাংলাদেশের মতো ক্ষতির শিকার দেশগুলোর জন্য তেমন কিছু নেই। বরং বাংলাদেশের অবস্থান আগের চেয়ে নাজুক হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের একটি চুক্তিতে সই করা বাংলাদেশের উচিত হয়নি। হয়ত প্রতিনিধিদল অন্য কোনো দেশের ধমক খেয়েই সই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আন্তর্জাতিক এনজিও কেয়ার- প্যারিস চুক্তিকে একটি সাধারণ মানের চুক্তি আখ্যা দিলেও তা গরীব মানুষদের আলোর পথ দেখাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫/আপডেট ০০৪৬, ০১০৬
আরএম/আইএ
** চুক্তিতে একমত হওয়ার আহ্বান মুনের
** কপ-এ উত্তেজনা, উপেক্ষিত বাংলাদেশ
** ১০ হাজার সংবাদকর্মীর মিডিয়া রুম
** কপ-২১ সম্মেলনের সফলতা নিয়ে ধোঁয়াশা
** বাংলানিউজের মাসুদ এখন প্যারিসে