ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফ্রান্স

প্যারিস থেকে রহমান মাসুদ

বাস্তিল ঘিরে পর্যটন

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
বাস্তিল ঘিরে পর্যটন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাস্তিল, প্যারিস: ফরাসিদের জাগরণের দিন ১৪ জুলাই। ১৭৮৯ সালের ওই দিনে পতন হয়েছিল রাজতন্ত্রের জুলুম আর অত্যাচারের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের।

ফরাসি বিপ্লবের ঐতিহাসিক ওই দিনটিকে ফরাসিরা স্মরণ করেন ‘বাস্তিল ডে’ হিসেবে।

পর্যটকদের কাছে বাস্তিলকে তুলে ধরতে পুরো এলাকাকে পর্যটন এলাকায় পরিণত করেছে ফরাসিরা। প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন বাস্তিল মনুমেন্ট দেখতে।

মাটির নিচের বাস্তিল দুর্গে ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই ও রানি আঁতনয়র্তী বন্দিদের আটকে রাখতেন। এখানে একবার প্রবেশ করলে কারও জীবন থাকতে আর বের হওয়া সম্ভব হতো না। রাজতন্ত্র আর গির্জার শাসনে অতিষ্ট ধর্মভীরু ফরাসিরা একদিন জেগে ওঠেন, বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে তারা বন্দিদের মুক্ত করে দেন। ফরাসিদের এই জেগে ওঠার ইতিহাসের শুরু হয় আরও আগে থেকেই।

কথা হয় ফরাসি তরুণ জোসেফ ক্রিঁসের সঙ্গে। বাস্তিল দুর্গের পতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজা ষোড়ষ লুই আদিপত্যবাদ ও ভোগ বিলাসে এতটাই উন্মত্ত ছিলেন যে, প্রজার সুখ-দুঃখ ও নিজেদের পতন সম্পর্কে কোনো খোঁজ-খবর রাখতেন না।
 
তিনি জানান, রাজা লুই তার দিনপঞ্জিতে ১৩ ও ১৪ জুলাই লিখেছিলেন- কিছুই ঘটেনি। ১৫ জুলাই, ১৭৮৯ গভীর রাতে রাজাকে লিয়াঁকোর্টের ডিউক ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাস্তিল দুর্গের পতন সংবাদ দেন। বিস্মিত রাজা লুই বলে ওঠেন, ‘এটা বিদ্রোহ’। তখন তাকে জানানো হয়, এটা বিদ্রোহ নয়, বিপ্লব!
 
ইউনিভার্সিটি দ্য প্যারিসের ইতিহাসের ছাত্রী সোর্মেল ক্রিস্টিনিয়া লঁয় বাস্তিলের ইতিহাস নিয়ে কাজ করছেন। বাংলানিউজের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, রাজা ষোড়শ লুইয়ের প্রতি জনগণের অসন্তুষ্টিই ফরাসি বিপ্লবের একমাত্র কারণ ছিল না। জ্যঁ জ্যাঁক রুশো ও ভলতেঁয়ারের মতো কালজয়ী দার্শনিকদের প্রচারিত দর্শনের প্রভাবও ছিল অনেকাংশে দায়ী। রুশো ও ভলতেয়ারের সাম্য ও স্বাধীনতার বাণী জনগণকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে তুলেছিল। কিন্তু রাজার ভয়ে তাদের এ আবেগ চাপা পড়ে থাকে। ভেতরে ভেতরে তারা গুমরে মরতে থাকে। সুযোগ খুঁজতে থাকে প্রতিবাদের। এক সময় অতিরিক্ত করের বোঝা ও ফসলহানিতে তাদের রুদ্ধ আবেগ ফেটে পড়ে।

স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব- এই স্লোগানের ওপর ভর করে নানা রকম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর, সামাজিক ও মানবিক নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রতীক এখন এই বাস্তিলে স্থাপিত মুনমেন্ট। দুর্গের কোনো চিহ্ন অবশ্য এখন নেই। মেট্রোরেল করতে গিয়ে মাটির নিচের সব স্মৃতিচিহ্ন এখন নিঃশেষ। বাস্তিল দুর্গের দেয়াল ছিল ১০ ফুট পুরো এবং গম্বুজ ছিল ৯০ ফুটের বেশি উঁচু।
 
বাস্তিলকে ফরাসি বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করেন ফরাসিরা। সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দিতে পর্যটকদেরও টেনে আনার সমস্ত ব্যবস্থা আছে তাদের। প্যারিসে আসা সব পর্যটকই এখানে আসেন বিপ্লবীদের স্মরণ করতে।
 
ফরাসি সরকার বাস্তিলকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছে থিয়েটার হল, শিশুপার্ক, নৌ-বন্দরসহ নানা স্থাপনা। প্যারিসের অন্যান্য স্থানের মতো ক্যাফে বা কফিশপের অভাব নেই এখানেও।
 
এখানে দেখা মেলে ভাগ্যের অন্বেষণে প্রবাসে আসা অনেক বাংলাদেশি তরুণেরও। বিভিন্ন পণ্য নিয়ে তারা ছুটে যান পর্যটকদের কাছে। আর বাঙালি দেখলেই হেসে দিয়ে জানতে চাইবে, ভাই ভালো আছেন!
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
আরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।