ঢাকা: হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় দলীয় পদ হারানোর কারণে সংসদ সদস্য পদও হারাচ্ছেন টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। এক্ষেত্রে শুনানি করেই তার পদ বাতিল করার হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রক্রিয়া ও অতীতের উদাহরণ থেকে ক্রমেই এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে, খুব শিগগিরই সংসদ সদস্য থাকতে পারছেন না মন্ত্রিত্ব হারানো লতিফ সিদ্দিকী।
সূত্র জানিয়েছে, লতিফ সিদ্দিকীর এমপিত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানোর বিষয়ে স্পিকারের চিঠির পর নড়েচড়ে বসে ইসি। আইনে নির্ধরিত পন্থা অনুসারে এরই মধ্যে বিরোধ উত্থাপনকারী হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও অভিযুক্ত হিসেবে লতিফ সিদ্দিকীর নিজ নিজ অবস্থানে পক্ষে যুক্তি গ্রহণ শুরু করেছে ইসি।
সরকারি সফরে হজ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দলীয় নেতা হিসেবে নয় বিধায় তাকে দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভুল। পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নেওয়া অন্য সিদ্ধান্তগুলোও ভুল- লতিফ সিদ্দিকী ইসির কাছে এমন বক্তব্য দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন রোববার (২ আগস্ট)।
অন্যদিকে সৈয়দ আশরাফও একই দিনে যুক্তি দেখিয়েছেন, যেহেতু লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের কেউ নন, তাই তার সংসদ সদস্য পদে থাকারও কোনো আইনগত কোনো অধিকার নেই। এজন্য লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।
ইসির আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান, এ সপ্তাহের মধ্যেই দু’পক্ষকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হবে। এছাড়া শুনানির দিনই রায় ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবে কমিশন।
জানা গেছে, বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে অতীতের রেফারেন্স অনুসরণ করছে ইসি। এ ধরনের বিষয় ঘটেছিলো ২০০০ সালে। সে সময় বিএনপি থেকে নির্বাচিত কিশোরগঞ্জ-২ আসনের তৎকালীন এমপি মো. আখতারুজ্জামানকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিলো। এরপর তার এমপি পদ শূন্য ঘোষণার জন্য স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে অনুরোধ করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তখনও সিইসিকে সিদ্ধান্ত দিতে বলেছিলেন স্পিকার। এরপর শুনানি করেই আখতারুজ্জামানের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করার রায় দিয়েছিলো ইসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এবারও একই পথে হাঁটছে ইসি। সে সময়ও যেমন বিএনপির অনুরোধে আখতারুজ্জামানের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলো ইসি, এবারও আওয়ামী লীগের অনুরোধের বাইরে যাবে না কমিশন। কেননা, আগের নজির আমলে নেওয়া হচ্ছে।
কর্মকর্তারা এটাও বলছেন, ইসির রায়ে সন্তুষ্ট না হলে আদালতে যাওয়ার সুযোগও পাবেন লতিফ সিদ্দিকী। কেননা, লতিফ সিদ্দিকী দলের বিপক্ষে ভোট দেননি বা পদত্যাগ করেননি। তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আর বহিস্কারের কারণে সংসদ সদস্য পদ হারানোর কথা আইনে বলা নেই।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, আইন অনুযায়ী বিরোধ উত্থাপনকারী ও অভিযুক্তকে শুনানিতে ডাকার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া তাদের সুযোগ দেওয়াও উচিত। তাই অচিরেই তাদের শুনানিতে ডাকা হবে।
সংসদ সদস্য (বিরোধ নিষ্পত্তি) আইন ১৯৮০ অনুযায়ী, স্পিকার কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য ঘোষণার কোনো বিতর্ক সম্পর্কিত কোনো বিবৃতি ইসিকে পাঠালে এর চৌদ্দ দিনের মধ্যে তা বিরোধ উপস্থাপনকারী ও যার বিরুদ্ধে বিরোধ উপস্থাপন হয়েছে, উভয়পক্ষকে জানাতে হয়। এবং তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা ইসি নির্ধারিত সময়ে মধ্যে প্রদান করতে হয়। এরপর শুনানি করে রায় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আইনে।
শুনানিতে উভয়পক্ষই সাক্ষ্য উপস্থাপন ও জেরা করার সুযোগ পাবে। এছাড়া পক্ষগুলো ব্যক্তিগতভাবে অথবা অ্যাডভোকেট প্রতিনিধির মাধ্যমে ইসির সামনে উপস্থিত থাকার অধিকার পাবে। তবে এসব পদ্ধতি ছাড়াও যেমন যথাযথ মনে হবে আইনে তেমনভাবেই বিরোধটি নিষ্পত্তি করার অধিকার ইসিকে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৫
ইইউডি/এএসআর
** শুনানিতেই লতিফ সিদ্দিকীর ভাগ্য নির্ধারণ