ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

হাসপাতালের বর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে রোগ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

আল মাসুদ নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১২
হাসপাতালের বর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে রোগ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

ঢাকা: হাসপাতালে রোগীরা যান রোগ থেকে রক্ষা পেতে অথচ তাদের বর্জ্য  অব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন আরো বেড়ে যাচ্ছে রোগ। হাসপাতাল থেকে সৃষ্ট বর্জ্য যত্রতত্র ফেলাই এর অন্যতম কারণ।

এর জন্য নেই কর্তৃপক্ষের কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।

রাজধানীর অধিকাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিটি কর্পোরেশনের মেডিক্যাল বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় নেই। এসব হাসপাতাল থেকে সৃষ্ট হাসপাতাল বর্জ্য সংরক্ষণ ও নষ্ট না করে যত্রতত্র এবং ডাস্টবিনগুলোতে ফেলা হচ্ছে।

ফলে হাসপাতালের এ বর্জ্যের কারণে পরিবেশের উপাদান মাটি, পানি এবং বায়ু দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ২০০৮ সালে পরিবেশ অধিদফতর থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিধিমালা করা হলেও তা কার্যকর নয়। সে বিধিমালায় হাসপাতালের বর্জ্য সংরক্ষণ এবং তা পুড়িয়ে নষ্ট করার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই।  

হাসপাতালের বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে ব্যবহৃত সুই, সিরিঞ্জ, তুলা, অব্যবহৃত অষুধ, রোগীদের রক্ত, গজ-ব্যান্ডেজ, মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ।

রাজধানীর পরিবেশবাদী একটি সংগঠনসূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার প্রধান হাসপাতালসহ আওতা বহির্ভূত রেজিস্টার্ড স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৯শ’। এরমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকলেও প্রায় ৭শ’ নন রেজিস্টার্ড স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কোনো নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই।

এসব হাসপাতাল থেকে সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ এসব বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় হেপাটাইটিস বি, সি কিংবা এইডস সহ মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত দিয়েছেন। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়টি তেমন গুরুত্বই পাচ্ছে না।


পরিবেশবাদী সংগঠনটি আরো জানায়, ২০০৮ সালে রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য শহরে হাসপাতাল বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় হাসপাতাল বর্জ্য বিধিমালা তৈরি করে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না থাকায় বিধিমালাটি বাস্তব রূপ পায়নি।

এদিকে, রাজধানী ঢাকায় দেড় হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই পরিবেশ অধিদফতরের বিধি অনুয়ায়ী তাদের হাসপাতাল বর্জ্য ধ্বংস করছে না। ফলে এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কঠিন, তরল ও বায়বীয় বর্জ্য সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

পরিবেশবাদী সংগঠনটির তথ্যমতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ দূষণজনিত দুর্যোগ বর্তমানে সারাবিশ্বে একটি আলোচিত বিষয়। এরূপ বহুমুখী পরিবেশ দূষণ বিভিন্নভাবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্যোগ আকারে দেখা দিয়েছে।

হাসাপাতালের বর্জ্য একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ করছে, অপরদিকে রোগ জিবাণু ছড়াচ্ছে। মানবদেহ সুস্থ এবং স্বাভাবিক রাখতে হাসপাতাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ হাসপাতালই এখন অনেকের সর্বনাশের অন্যতম কারণ।

এ ব্যাপারে বারডেম হাসপাতালের দন্ত বিভাগীয় প্রধান এবং মাদক দ্রব্য ও নেশাবিরোধ সংস্থার সভাপতি ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে এবং বাইরে যে সব বর্জ্য রয়েছে এগুলো সাধারণত রোগীদের ব্যবহার্য বা রোগীদের থেকেই তৈরি হয়। এ থেকে রোগ-জীবানু ছড়ানোর ঝুঁকি তো অবশ্যই রয়েছে। হাসপাতালে যে সকল নিডল ব্যবহার করা হয়, দেখা যায় এসব নিডল একশ্রেণীর পথশিশুরা কুড়িয়ে নিচ্ছে এবং তা বিক্রি করছে। যারা এসব করছে তাদের হেপাটাইটিস বি ও সি সহ এইডস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘দেখা গেল একজন এইচআইভি বা হেপাটাইটিস বি, সি পজেটিভ রোগী হাসপাতালে এলেন। তার ব্যবহৃত নিডল থেকে নি:সন্দেহে রোগ ছড়াতে পারে। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এবং বিদেশেও এ ধরনের একটি আইন রয়েছে যে হাসপাতাল বর্জ্য সংগ্রহ করে তা পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে। কিন্তু দেশের প্রেক্ষাপটে কোনো হাসপাতাল এ  আইন মানছে এ তথ্য আমার জানা নেই। সরকারের আইন রয়েছে কিন্তু কে কতখানি মানছে এ জন্য কোনো নজরদারি নেই। ’

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল হক মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বর্জ্য সিটি করপোরেশনের আওতায় ব্যবস্থাপনা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন এবং হাসপাতালগুলোর আরো সমন্বয় প্রয়োজন। ’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্জের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে রোগ ছড়ানোটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। ’  

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের ঢাকা জেলা অফিসের উপ-পরিচালক এস এম তারিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০০৮ সালে এ সংক্রান্ত একটি বিধিমালা হয়েছিল। সে বিধিমালার আওতায় প্রিজম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি এনজিওকে পরিবেশ অধিদফতর থেকে এ ব্যাপারে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তারা যদি এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেন আমরা অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করবো।
         
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১২
এএমএন
সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।