ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য খাতের সর্বোচ্চ ব্যয় ঢাকায়, সর্বনিম্ন ময়মনসিংহে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৩
স্বাস্থ্য খাতের সর্বোচ্চ ব্যয় ঢাকায়, সর্বনিম্ন ময়মনসিংহে কর্মশালায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ঢাকা: স্বাস্থ্য খাতে মোট খরচের ৩৭ ভাগ ঢাকা বিভাগে যা সর্বোচ্চ, ৩ ভাগ ময়মনসিংহে যা সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের (বিএনএইচএ) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

 

বুধবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে বিএনএইচএর ষষ্ঠ রাউন্ডের ফল অবহিতকরণ কর্মশালা থেকে এই তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস সেলের ফোকাল পারসন ডা. সুব্রত পাল ষষ্ঠ রাউন্ডের ফল জানান।  

তিনি বলেন, ২০২০ সালে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ) সম্পন্ন হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কর্তৃক ব্যয়ের পরিমাণ ৫ শতাংশ।  

এর আগে প্রকাশিত বিএনএইচএর তথ্য অনুসারে ২০১৫ সালে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের মধ্যে সরকারি খাতের ব্যয় ছিল ২২ দশমিক ৮ শতাংশ যা ২০২০ সালে সামান্য বেড়ে ২৩ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়।  

তিনি আরও জানান, নিজ পকেট থেকে ব্যয় সর্বদাই সরকারের ব্যয় বা সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। স্বাস্থ্য ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, মোট নিজ পকেট থেকে ব্যয়ের ৫৪ শতাংশ খরচ করে থাকে দেশের শীর্ষ ধনী জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর নিম্ন দুই ভাগ মোট নিজ পকেটের যথাক্রমে ৪ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ খরচ করে থাকে।


নিজ পকেটের খরচ বিশ্লেষণে আরও দেখা যায় যে জনসংখ্যার সর্বনিম্ন অংশ মাথাপিছু ২০০ টাকা স্বাস্থ্যের জন্য নিজ পকেট থেকে ব্যয় করে থাকে, যেখানে জনসংখ্যার শীর্ষ ধনী অংশ খরচ করে এর তুলনায় আটগুণেরও বেশি টাকা (১ হাজার ৭১৪ টাকা)। একই এলাকা বা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে মাথাপিছু খরচের তুলনায় দেখা যায় যে, সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলো দরিদ্রদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করেছে।  

গ্রামাঞ্চলে শীর্ষ দুই ধনী অংশ খরচ করে মোট ব্যক্তি পর্যায়ে খরচের ৫৭ শতাংশ, যেখানে দরিদ্রতম দুই অংশ খরচ করে ২৫ শতাংশ। কিন্তু শহরাঞ্চলে এই খরচ যথাক্রমে ৭৬ শতাংশ ও ১২ শতাংশ। সিটি করপোরেশনভুক্ত স্থানে এই হার যথাক্রমে ৮৭ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ। এতে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের ওপর নিজ পকেটের ব্যয়ের উচ্চ অংশটি জনসংখ্যার ধনী অংশ দ্বারা চালিত হয়।  

সরকারি ব্যয়ের মধ্যে মোট খরচের ৯৩ শতাংশ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় খরচ করে থাকে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং সিটি করপোরেশনগুলো সম্মিলিতভাবে বাকি ৭ শতাংশ খরচ করে থাকে। বেসরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে মোট ব্যয়ের ৮৯ ভাগ ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ পকেট হতে এবং বাকি ১১ শতাংশ বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও এবং প্রাইভেট হেলথ ইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ইতোপূর্বে প্রকাশিত বিএনএইচএর তথ্য অনুসারে ২০১৫ সালে মাথাপিছু স্বাস্থ্য খাতে খরচ ছিল ৩৭ ডলার যা ২০২০ সালে বেড়ে মাথাপিছু ৫৪ ডলার হয়েছে।  

তিনি আরও জানান, ইতোপূর্বে প্রকাশিত বিএনএইচএর তথ্য অনুসারে ২০১৫ সালে মোট সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয়ের মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোর পেছনে খরচের অনুপাত ৪০ শতাংশ যা সর্বশেষ প্রকাশিত বিএনএইচআরের তথ্য অনুসারে প্রায় ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির এ হার আশাব্যঞ্জক।  

বিভাগওয়ারি স্বাস্থ্য খাতে খরচের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট খরচের ৩৭ ভাগ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগে, যা সর্বোচ্চ এবং ৩ ভাগ ময়মনসিংহে, যা সর্বনিম্ন। মাথাপিছু হিসেবে স্বাস্থ্য খাতে ঢাকা বিভাগের জনপ্রতি ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ ৭ হাজার ৩৯ টাকা এবং ময়মনসিংহে ২ হাজার ৬০ টাকা। সর্বোপরি ২০২০ সালে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের জন্যে গড় মাথাপিছু ব্যয় ৪ হাজার ৫৭৮ টাকা।  

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।  

এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু এনডিসি, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. বর্দন জং রানা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৩
আরকেআর/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।