রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, রক্তের মধ্যে বর্তমান বিভিন্ন লবণের ভারসাম্য রক্ষা করা, শরীরের বিভিন্ন অ্যাসিড এবং ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে দুই কিডনি। এছাড়াও কিডনি লোহিত কণিকা তৈরিতেও ভূমিকা রাখে।
মানুষের শরীরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে যে বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়ে থাকে, সেগুলোকে প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে বের করে দেওয়াই কিডনির প্রধান কাজ। শরীরে যত হাড় আছে, সেগুলোকে মজবুত করাও কিডনির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
যেসব কারণে আমাদের কিডনি অসুস্থ হতে পারে।
যেমন-
কিডনি ফেইলর বা কিডনি বিকল
ধীরগতির কিডনি বিকল
কিডনিতে ইনফেকশন বা প্রস্রাবের ইনফেকশন
উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনি রোগ
ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ
পাথরজনিত কিডনি রোগ
প্রস্রাবে বাধাজনিত কারণে কিডনি রোগ ইত্যাদি।
ধীরগতির কিডনি রোগ
এখন ধীরগতির কিডনি রোগ নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। যদি কিডনি কোনো কারণে রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে তার ক্ষয় চলতে থাকে। ক্রমান্বয়ে ক্ষতির এই প্রক্রিয়া যদি টানা দুই বা তার বেশি মাস ধরে চলতে থাকে, তাহলেই ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা ধীর গতির কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। এতে ধীরগতিতে কিডনির কার্যকারীতা ব্যাহত হয়, এমনকি কিডনির মূল গঠনও আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে থাকে।
প্রশ্ন হলো, কীভাবে কিডনির এই ক্ষয় রোধ করা যায়। আসলে, কিডনি রোগ হলো নীরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার। এর মানে হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না কিডনির ৭০ থেকে ৮০ ভাগ (শতকরা) নষ্ট না হচ্ছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত শরীরে বিশেষ কোনো উপস্বর্গ দেখা যায় না। অতি সঙ্গোপনে, আস্তে আস্তে চলতে থাকে কিডনির সর্বনাশ। কিন্তু যখন, শেষমেষ উপসর্গ দেখা দেয়, তখন এটা প্রতিরোধ করার আর কোনো উপায় থাকে না।
কিডনি ফেইলর প্রতিরোধ করতে হলে কী করবেন
মূলত, কিডনি রোগের ঝুঁকির মধ্যে যারা আছেন, তাদের খুঁজে বের করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, তাদের কিডনি সুস্থ আছে কিনা।
যারা এই রোগের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করেন তারা হলেন-
১. যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে
২. যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে
৩. যাদের কখনো নেফ্রাইটিস বা কিডনি ইনফেকশন হয়েছে
৪. যাদের কিডনিতে কখনো পাথরজনিত রোগ হয়েছে
৫. যাদের প্রস্রাবে কখনো বাধাজনিত রোগ হয়েছে
৬. যারা কোনো কারণে দীর্ঘদিন বেদনা নাশক ঔষধ খেয়েছেন, বা কোনো ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছেন
৭. শিশুকালে যাদের কিডনি রোগ হয়েছে এবং
৮. যাদের বংশে ডায়াবেটিকস, উচ্চরক্তচাপ এবং কিডনি রোগের পূর্ব ইতিহাস আছে।
এরা সবাই ঝুঁকিপূর্ণ রোগী। এদের খুঁজে বের করাই প্রথম ও প্রধান কাজ। বছরে অন্তত দুইবার পরীক্ষা করে দেখতে হবে, তাদের কিডনির কার্যকারিতা ঠিক আছে কিনা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
রোগীদের প্রতি পরামর্শ হচ্ছে, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, অতি-ওজন শরীরের জন্যে ক্ষতিকর। রক্তচাপই বলুন বা ডায়াবেটিস- সবই শুরু হয় বেশি ওজন থেকে। এছাড়া কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীর রোগ হতে পারে। শতকরা ৩০ ভাগের বেশি কিডনি রোগ হয় ওজন বৃদ্ধিজনিত কারণে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তারা তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখবেন।
কোলেস্টেরল কমান
এবারে বলি কোলেস্টেরলের কথা। যাদের রক্তে কোলেস্টেরল এবং এর অন্যান্য প্রকার, যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল বেশি থাকে, সেসব ক্ষেত্রে এগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে খাদ্যাভাস পরিবর্তনের বিকল্প নেই। চর্বিজাতীয় খাবার বর্জন সর্বোত্তম; মাছের চর্বি খাওয়া যেতে পারে, এতে কোনো অসুবিধে নেই, কিন্তু চিংড়ি মাছের মাথা এবং মাছের মগজ না খাওয়াই ভালো।
নিয়মিত ব্যায়াম
কিডনি ভালো রাখার আরো একটা ভালো উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম। নিয়মিত ব্যায়ামে কোলেস্টরল যেমন নিয়ন্ত্রণে আসে, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ হয়। যত্র-তত্র অল্প দূরত্বের জন্যে রিকশা বা গাড়িতে না চড়ে হাঁটার অভ্যাস এইসব ক্ষেত্রে অত্যন্ত ফলপ্রসূ। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, জাপানে যারা সুউচ্চ পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে, তারা সবচেয়ে দীর্ঘায়ু, কেন না তারা বেশি হাঁটেন।
ধূমপান পরিহার করুন
বাকি রইলো ধূমপান। ধূমপান পরিহার করতেই হবে। ধূমপান একদিকে যেমন ক্ষতি করে কিডনির, অন্যদিকে রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত করে তোলে, ব্রেইনের কার্যকারিতা নষ্ট করে, মানুষের জীবনী শক্তি কমিয়ে দেয় এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
কিডনি রোগ ভয়াবহ কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯ , ২০২৩
এসআইএস/এসআইএস