ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

মৃত্যু ঝুঁকিতে ৮৩ শতাংশ প্রসূতি মা

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১২
মৃত্যু ঝুঁকিতে ৮৩ শতাংশ প্রসূতি মা

ঢাকা: মা হওয়ার আগেই মৃত্যু হচ্ছে অনেক প্রসূতির। দেশের অনুন্নত স্বাস্থ্যখাতে এখনো অনিরাপদ প্রসূতি মায়েরা।



গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন স্তরে জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রম চালু থাকলেও ৮৩ শতাংশ প্রসবই হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক সেবার বাইরে। অর্থাৎ হাসপাতালের সেবা ছাড়া অথবা অদক্ষ দাইয়ের হাতে। ফলে মাতৃমৃত্যুর হার কমলেও ঝুঁকিতে থাকছেন প্রসূতি মা ও শিশু। প্রতিবছর প্রসবজনিত এবং এর পরবর্তী জটিলতায় প্রতি লাখে মারা যান ১৯৪ জন মা।

ইউএসএআইডির দেওয়া তথ্যানুযায়ি, গর্ভকালীন এবং সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী তিন লাখ ৪০ হাজার মা মারা যান এবং ১০ লাখের মতো মা এ সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগেন। এ ছাড়া জটিলতায় প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি শিশু জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মাতৃ মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশে ১৬তম। সর্বশেষ বাংলাদেশ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা (বিডিএইচএস) ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রসবজনিত এবং এর পরবর্তী জটিলতায় প্রতি লাখে ১৯৪ জন মা মারা যান। ২০০১ সালে এ সংখ্যাটি ছিল প্রতি লাখে ৩২২ জন।

বেসরকারি হিসেবে মা হতে গিয়ে দেশে প্রতি ২০ মিনিটে মারা যাচ্ছেন একজন প্রসূতি। অর্থাৎ প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ হাজার প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে।

প্রসূতি মায়ের মারা যাওয়ার সংখ্যা কমলেও তা সন্তোষজনক নয়। দশ বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা কমেছে মাত্র ১২৮। তাছাড়াও  ১৯২ জন মা এখনও জীবন হারাচ্ছেন, এটা দুঃখজনক।
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রায় ১৬ শতাংশ মা প্রসবকালীন জটিলতায় কোনো সেবা পান না। প্রায় একই চিত্র প্রসব পরবর্তী সেবার ক্ষেত্রেও। এর মধ্যে অপুষ্টিজনিত মাতৃ মৃত্যুর ২০ ভাগই ঘটে রক্তক্ষরণ ও রক্ত স্বল্পতার জন্য। যার অন্যতম কারণ আবার কিশোরী মাতৃত্ব।

ডিএইচএসের তথ্যমতে বর্তমানে প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সহায়তায় প্রসব হয় মাত্র ৩২ শতাংশ।

গত ৩ মে মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক এ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ‘যদিও অনেক প্রসূতি মা এখনও সেবা নিচ্ছেন না। তারপরও মাতৃমৃত্যু উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমেছে। তবে সরকারের সেবার পরিধি বাড়াতে হবে। ’

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতে, নিরাপদ মাতৃত্ব বাংলাদেশে এখনও নিশ্চিত হয়নি। প্রসূতি সেবা এখনো বাড়িতে নিরাপদ হয়ে ওঠেনি। আবার অভিযোগ রয়েছে, যারা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রসূতি সেবা নিতে যাচ্ছেন, তারাও সঠিক সেবা পান না।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকার একদিকে সেবার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, অন্যদিকে মানুষকে আরও সচেতন করার কাজ করছে। মানুষ সচেতন না হলে এক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এজন্য সরকার বেশ কিছু নতুন কার্যক্রম হাতে নিতে যাচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘কার্যক্রমের জনবল যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি তাদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। ’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের নারীদের দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টির হার প্রায় শতকরা ৩২। এছাড়া খাবারের অপর্যাপ্ততা, অপুষ্টি এবং সচেতনতার অভাবে ঘটছে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতে, মাতৃ মৃত্যুর হার প্রতিরোধ করতে চাইলে, দেশে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে আরও বাড়াতে হবে। প্রসূতিরা যাতে দক্ষ প্রসব সেবা পান, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রজনন স্বাস্থ্য কর্মসূচির তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের সবকটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ৬২ জেলা হাসপাতাল, ৪০১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ৭০টি মা ও শিশু কেন্দ্রসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রম সেবা চালাচ্ছে।

এদিকে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, যারা প্রসূতিসেবা নিতে বিভিন্ন হাসপাতালে আসছেন, তারা এবং তাদের সঙ্গে আসা পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনদের বেশিরভাগই সরকারের প্রসূতিসেবা কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন না।

স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘আমাদের জোর দিতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসূতিসেবার দিকে। তবে সব মাকেই যে সেবা নিতে হাসপাতালে যেতে হবে তেমনটি ঠিক নয়। তারপরও আমাদের জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রম থেকে গর্ভবতী মায়েরা যাতে সুবিধা নেন, তার জন্য সামজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ’

গত ৩ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে তিন হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, দক্ষ ধাত্রী করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ’
 
মন্ত্রী জানান, আগামী তিন বছরে বাংলাদেশ ২০ হাজার দক্ষ ধাত্রী তৈরি করবে। এসব ধাত্রী সন্তান জন্মদানে মাকে সহায়তা করার পাশাপাশি নিশ্চিত করবে জন্মের সময় শিশু যেন শ্বাস নিতে সমর্থ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১২
এমএন/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।