ঢাকা: ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য কয়েকজন লোক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) জরুরি বিভাগের চার নম্বর রুম জরুরি অস্ত্রোপচারের কক্ষ থেকে জানা যায়, সকাল ৮টা ৫ মিনিটের দিকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এলাকার একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের থেকে লোকজন পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ওই বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে হাসপাতালে দিয়ে চলে যায়।
রোগীকে হাসপাতালে উদ্ধার করে নিয়ে আসা লোকজনদের আর খুঁজে না পাওয়ায় জরুরি অস্ত্রোপাচার কক্ষের দায়িত্বরত চিকিৎসক হাসান ও শাহ আলমসহ আরো অনেকে নিজ উদ্যোগে পা বিচ্ছিন্ন হওয়া বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির চিকিৎসা দিতে থাকেন। ওষুধ-স্যালাইনের পাশাপাশি দুই ব্যাগ রক্ত (এবি পজিটিভ) নিজেরা কিনে এনে রোগীর শরীরের রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। আজকে সরকারি ছুটির থাকায় রক্তসংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সন্ধানী বন্ধ ছিল।
জানা গেছে, চিকিংসকরা নিজেদের ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে রক্ত কিনে ওই রোগীকে দিয়েছেন।
সর্বশেষ রাত ১০টার দিকে ওই চার নম্বর রুমে জরুরি অস্ত্রোপাচার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি একটি ট্রলির ওপরে শুয়ে আছেন। দুই হাতে চলছে চিকিৎসকদের পরামর্শে স্যালাইনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা। বার বার চিকিৎসকরা এসে তাকে পরীক্ষা করতে দেখা যায় এবং চিকিৎসকরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে থাকেন আরও তিন ব্যাগ রক্ত কিনতে হয়েছে। রোগী স্ট্যাবল হলেই তাকে অস্ত্রোপ্রচার করা হবে।
এদিকে আরও জানা যায়, সকালে পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে যারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসছিলের তারা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতাল থেকে চলে যায়। এই কারণে প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যায় পড়েন চিকিৎসকরা। কারণ রোগীকে ভর্তি করতে হলে কারো নাম দিয়ে ভর্তি করার নিয়ম আছে। রোগের বিবরণ জন্য একটা ফাইল তৈরি করতে হয়। একপর্যায়ে প্রথম দিকে বাহক হিসেবে চিকিৎসকের নাম দিয়েই রোগীকে ভর্তি করানো হয়। পরে বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালক অবগত হলে তাৎক্ষণিকভাবে ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ ও হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া তাদের দুইজনকে বাহক দিয়ে ওই রোগীকে ভর্তি দেখানো হয়।
হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প থেকে জানা যায়, ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় ওই ব্যক্তির পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে বিচ্ছিন্ন হওয়া পাসহ ওই আহত ব্যক্তিকে লোকজন হাসপাতালে দিয়ে চলে যায়।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) মো. আলাউদ্দিন জানান, সকালে কয়েকজন লোক পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তারা চলে যায়। পরে আমাদের চিকিৎসকরা যত ধরনের ওষুধপত্র, রক্তসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো বা অ্যাক্সিডেন্টের কারণে রোগীটা সহজভাবে কথা বলতে পারছেন না। তার নাম-ঠিকানাও কিছুই বলতে পারছেন না। রোগীর প্রেসার ৮০- এর ওপরে উঠছে না। সে স্ট্যাবল হলে তাকে অস্ত্রোপচার করা হবে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক স্যার সবসময় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, যারা জরুরি রোগী স্বজনবিহীন তাদের চিকিৎসার দিকে একটু বাড়তি খেয়াল রাখার জন্য। বাইরে থেকে রক্তসংগ্রহ করা হলেও হাসপাতাল থেকে সব ধরনের ওষুধ দেওয়া রয়েছে ওই ব্যক্তিকে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, সকালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা অজ্ঞাত ওই রোগীর চিকিৎসা শুরুর পাশাপাশি বিষয়টি আমাকে অবগত করেছেন। পরে ওয়ার্ডমাস্টার রিয়াজ ও পুলিশ বাচ্চু মিয়া দুইজনে বাহক হয়ে তার ভর্তির ফাইল করেন।
জরুরি বিভাগ থেকে আরেকটি সূত্র জানান, পা বিচ্ছিন্ন হওয়া রোগীকে দেখে বোঝা যাচ্ছে, তিনি ভবঘুরে, হয়তো রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেন। কিন্তু চিকিৎসকদের আন্তরিকভাবে তাকে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে, সেটা প্রশংসার যোগ্য। আসলে ঢামেক হাসপাতাল দরিদ্রদের আত্মার প্রতীক, এটাই তার প্রমাণ।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২৩
এজেডএস/এএটি