ঢাকা: ‘গ্রিন টি’ এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের কাছে গ্রিন টি`র বিকল্প মনে হয় কিছু নেই। আর এই চায়ের প্রতি এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদেরও বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
বলা যায় ফিগার ঠিক রাখতে অনেকেই এই গ্রিন টি`র প্রতি বেশি ঝুঁকছেন৷ গ্রিন টি বা সবুজ চা উপকারী এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে সবুজ চা পানের একটা নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
হাতে চা পাতা তুলে, শুকিয়ে বেক করে এই চা পাতা তৈরি করা হয়। যে পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় তাতে এর গুণাগুণ অনেকটাই অক্ষত থাকে| ক্যান্সার, রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, হাইকোলেস্টেরল, কার্ডোভাসকিউলার ডিজিজ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে গ্রিন টি নিয়মিত পান করতে হবে। আর যদি ছোট থেকেই এই চা পান করা যায় তাহলে উপরোক্ত সমস্যাগুলো থেকে শরীরকে রা করা যাবে।
গ্রিন টি যত বেশি গাঢ় হবে (আমরা যাকে বলি কড়া চা) তত রোগ প্রতিরোধ মতা বেশি হবে। বিশেষজ্ঞগণ আরও দেখেছেন গ্রিন টি গরম পানিতে কমপে ১০ মিনিট রেখে দিলে প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধক রাসায়নিক যৌগ বেশি নিঃসৃত হয়।
জাপানী দার্শনিক কাকুসো ওকাকুরা বলেছেন, গ্রিন টি প্রথমে ছিলো ওষুধ তারপর পানীয়তে পরিণত হয়েছে ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে গ্রিন টি`র রয়েছে নানা গুণ। নিয়মিত এই চা পানে শরীরে ভালোভাবে রক্ত চলাচল করে৷ পেট পরিষ্কার থাকে আর মস্তিষ্ককে রাখে সচল ৷ এই চা কেবল পিপাসাই মেটায় না দূর করে কান্তি ।
জাপানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে টহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. শিনিচি কুরিয়ামা বলেছেন, যারা দিনে দুকাপের বেশি গ্রিন টি পান করেন তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি ফিট৷ তিনি একথাও বলেছেন যে, যারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট তাদের জন্য গ্রিন টি বেশি উপকারে আসে৷ গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে ।
তবে এই চা নিয়মিত পান করতে হবে৷ এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ই, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন মিনারেল যা প্রতিটি মানুষের শরীরেই প্রয়োজন ।
স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য তো করেই এমনকি নিয়মিত এই চা পান মানুষের আয়ু বাড়াতেও ভূমিকা রাখে৷ অন্য আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত গ্রিন টি পানে মানুষের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও কিছুটা কমিয়ে দেয় ।
হালকা রং এর সামান্য তেতো স্বাদের এই চা খাওয়ার আগে অবশ্যই ল্য রাখতে হবে চায়ের মানের দিকে৷ হতে হবে উঁচুমানের অর্গানিক চা৷ তবেই পাওয়া যাবে আশানুরূপ ফল। এই চা যত খুশি তত পান করা যায়। এতে তি তো নেইই বরং উপকারই বেশি।
Green Tea বা সবুজ চা কিডনি, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও হার্টের জন্য একটা দারুণ Medication. ৪০০০ বছর পূর্বে চায়নাতে মাথা ব্যাথার ঔষধ হিসাবে প্রথম এর ব্যবহার শুরু হয়। এরপর সময়ের ব্যবধানে চায়না, জাপান, কোরিয়াসহ পশ্চিমেতেও এর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। সম্প্রতি গবেষকরা জানিয়েছেন, গ্রিন টি পান করলে রক্তনালী শিথিল হয়। এমনকি প্রতিদিন কয়েক কাপ এই চা পান করলে রক্ত চাপ কম থাকে।
পশ্চিম ও এশিয়ার গবেষকরা গ্রিন টি এর মধ্যে অনেক রোগের ঔষধ অবিস্কার করেন। ১৯৯৪ সালে দ্যা ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট জার্নালে প্রকাশ করা হয় যে, সবুজ চা পানে চাইনিজদের খাদ্যনালীর ক্যান্সার প্রায় ৬০ভাগ নিরাময় করা গেছে। এদিকে পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আবিষ্কার করেন যে, সবুজ চা ক্যান্সার কোষের প্রজনন প্রতিরোধ করে।
আরো অন্যান্য গবেষনায় জানা যায়, সবুজ চা শরীরের টোটাল কোলেস্টরল লেভেলের উন্নতি করে।
৩ লিটার পরিমান গরম পানিতে কিছু পরিমান সবুজ চা পাতা ভিজিয়ে নিন। পানি ঠাণ্ডা হলে প্রটি ২ ঘণ্টায় ১ গ্লাস করে পানি পান করুন। এই ভাবে দিনে ১২ গ্লাস পানি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষ করে কিডনি, ডায়াবেটিস ও ইউরিন ইনফেকশনের রোগীদের জন্য।
সবুজ চা এর প্রধান ক্যারিশমাটা হলো এর একটা উপাদান epigallocatechin gallate (EGCG) যা একটি powerful anti-oxidant| EGCG কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীরের cancer cells প্রজনন ক্ষমটা একদম নষ্ট করে ফেলে। নিয়মিত সবুজ চা বা গ্রিন টি পান করে এইচআইভির বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব৷ এমন দাবি করেছেন গবেষকরা৷ তাদের যুক্তি, সবুজ চায়ের মধ্যে যে এপিগ্যালোক্যাটেসিন গ্যালেট (ইজিসিজি) রয়েছে সেটি এইচআইভিকে নিরাপদ দূরত্বে ঠেলে রাখতে বেশ কার্যকরী৷ এটি দ্রুত কার্যকরী হয়ে ইমিউন সিস্টেম সেলের সঙ্গে এইচআইভির সংশ্রবে বাধা দেয়৷ একবার ইজিসিজি নিজে ইমিউন সিস্টেম সেলের সঙ্গে জুটি বাধতে পারলে এইচআইভি জীবাণু তার নিয়মিত ফিউশন ঘটানোর সুযোগ পায় না৷ যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেন৷
সবুজ চা পাতার উপর গবেষণা হতে প্রাপ্ত কিছু উপকারীতা নিম্নে দেয়া হলো:
• ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
• অ্যালজাইমার এবং পারকিনসন্স প্রতিরোধ করে।
• হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
• রক্তে কোলেস্টরল কমিয়ে দেয়।
• রক্তে ভালো কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
• হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া-প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে।
• কোথাও ইনফেকশন হলে তা দ্রুত সেরে যায়।
• শরীরে রোগ প্রতিরোধ মতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
• কিডনিতে পাথর পড়ে না।
তাই দেরি না করে এখনিই সবুজ চা বা গ্রিন টি হোক আপনার নিয়মিত পানীয়। শরীর স্বুস্থ্য সতেজ রাখতে হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে গ্রিন টি। বাংলাদেশের বড় যে কোনো ডিপার্টমেন্টাল দোকানে গ্রিন টি পাওয়া যেতে পারে।
লেখক: প্রোগ্রাম অফিসার, মেরী স্টোপস বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১২
সম্পাদনা: তানিয়া আফরিন, বিভাগীয় সম্পাদক