ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ফরিদপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, একদিনে হাসপাতালে ২০ জন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
ফরিদপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, একদিনে হাসপাতালে ২০ জন

ফরিদপুর: ফরিদপুরে হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

 

সরকারি হিসাবে জেলায় এখন পর্যন্ত ১৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ৯০ জন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে ফরিদপুরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) পর্যন্ত ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে মোট ৪৯ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এছাড়া জেলার নগরকান্দা উপজেলায় সাতজন, বোয়ালমারীতে পাঁচজন ও মধুখালীতে চারজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে জেলা শহরে হঠাৎ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও ফরিদপুর পৌরসভার নেই কোনো মশা নিধন কিংবা ডেঙ্গু জনসচেতনতায় দৃশ্যমান উদ্যোগ। এছাড়া পৌরসভায় মশা নিধনে আটটি ফগার মেশিন থাকলেও তার নেই কোনো কার্যক্রম।  

এডিস মশার আতঙ্কে পৌর এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার পাশাপাশি খানাখন্দ ও ডোবায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশন এবং মশা নিধনের দাবি জানিয়েছে পৌরবাসী।

এ ব্যাপারে কথা হয় ফরিদপুর পৌরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আলাওল হোসেন তনুর সঙ্গে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মশা নিধন ও জনসচেতনতায় প্রতিবছরই কাজ করে থাকি। তবে এখন পর্যন্ত পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে শিগগিরই মশা নিধনে ফগার মেশিনের ব্যবহারের পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ শুরু করবো।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পৌরসভায় আগে মাত্র একটি ফগার মেশিন ছিল। পরে গত বছর মশা নিধনে নতুন করে আরও সাতটি ফগার মেশিন কেনা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) একদিনে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।  

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শহরের পূর্ব খবাসপুর থেকে আসা সৌরভ কুমার দে (২৫) বাংলানিউজকে বলেন, তিনি এসিআই কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত বৃহস্পতিবার তার হঠাৎ জ্বর আসে। জ্বর না কমায় শনিবার (০৯ জুলাই) ডেঙ্গু পরীক্ষা করলে তা পজিটিভ আসে।  

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চন্দ্রপাড়া সরদার ডাঙ্গী গ্রামের ছাত্তার ব্যাপারী (৬০) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত দুইদিন ধরে একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচদিন আগে জ্বরে আসে। পরে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেই। কিন্তু, জ্বর না কমায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে পজিটিভ আসে। পরে গতকাল সোমবার ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছি।

ছাত্তার ব্যাপারী বলেন, আমার পাতলা পায়খানা সঙ্গে বমি-বমি ভাব রয়েছে। চিকিৎসকরা তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শের পাশাপাশি চিকিৎসা দিচ্ছেন।  

সৌরভ ও ছাত্তার ব্যাপারীর মতো আরও তিনজন চিকিৎসা নিচ্ছেন এ হাসপাতাললে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে দেখা গেছে, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটিতে নির্ধারিত কোনো ওয়ার্ড না থাকায় রোগীরা বিভিন্ন সাধারণ ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের সঙ্গেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালটির পুরুষ ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মোসা. ফারজানা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড না থাকায় সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি নিয়ে সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা রোগীদের তরল খাবারের পাশাপাশি স্যালাইনের পানি, ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে নিয়মিত কাউন্সিলিংও করা হচ্ছে।  

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, ঈদুল আজহার আগে প্রতিদিন এক-দুইজন হাসপাতালে ভর্তি হলেও; ঈদের পর থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন গড়ে প্রতিদিন ছয়/সাতজন করে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। মঙ্গলবার হাসপাতালে ১১ জন নতুন রোগী এসেছে। এখন সর্বমোট ৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা আপাতত জেনারেল ওয়ার্ডগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে তাদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড করার চিন্তাভাবনা করা হবে।  

এদিকে দিনদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ফরিদপুরে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল চত্বর ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে এবং পরে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ডেঙ্গু বিষয়ক সচেতনতা করে মাইকিং করা হয়। পাশাপাশি বিতরণ করা হয় লিফলেটও।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ঈদের পরপরই জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মানুষের ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জমানো পানি ফেলে দিতে হবে। যাতে করে এডিস মশা বিস্তার করতে না পারে। প্রয়োজেন রাতে ঘুমের সময় কয়েল কিংবা মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। এছাড়া জেলায় ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি।

সিভিল সার্জন বলেন, ডেঙ্গু রোগীর মূল লক্ষণগুলো হলো- তীব্র জ্বর, মাথা, শরীর এবং হাড়ে ব্যথা থাকবে। এ রকম লক্ষণ দেখা দিলে শিগগিরই হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি আরও জানান, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ফরিদপুরে ১৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬৫ জন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।