ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নজরদারি ছিল এবং বৈশ্বিক সকল অসঙ্গতি যেমন অর্থনৈতিক মন্দা ও যুদ্ধের প্রভাবে নির্মাণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ।
পেশাগত জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদের কেটেছে তার বিএসএমএমইউ চত্বরে। প্রতিষ্ঠানটির চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এমনকি অফথালমোলজিতে ডিপ্লোমা এবং এমএস ডিগ্রিও তিনি করেছেন এই একই প্রতিষ্ঠান থেকে, যা উপচার্য হিসেবে তাঁর কার্যক্রমকে কিছুটা সহজ করেছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৩ বেশ দীর্ঘ একটা পথ পরিক্রমা বলা যায়। বিএসএমএমইউর সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা দুটোই খুব কাছ থেকে দেখেছি, উপাচার্য হিসেবে প্রথমদিন থেকে সেই সব চেনা সীমাবন্ধতাকে কাটিয়ে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছি।
বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে চিকিৎসা গবেষণায় উন্নাসিকতা দেখা যায়, এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখেন চিকিৎসা গবেষণায় উৎসাহী না করেই উন্নাসিক বলাটা যৌক্তিক হবে না। গবেষণায় আমি নিজেও আগ্রহী, এর মধ্যে ৭৮ জন শিক্ষক ও চিকিৎসকদের গবেষণা অনুদান দিয়েছি। এ ছাড়া ২০২২ থেকে ২০২৩ অর্থ বছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ৪ কোটি টাকা থেকে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা করেছি। এ বাজেট বিএসএমএমইউর কন্ট্রিবিউশন আগামীর জাতি গঠনে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর গড়ে প্রতিদিন দুই হাজার রোগী দেখার চাপ বেড়েছে। তবে সন্তুষ্টির কথা হচ্ছে ৮৫০০ জন মানুষকে সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে না আমাদের। কর্মীদের কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে দিয়েছি, তাঁদের চাকুরির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছি, এখন কর্মস্পৃহা বেড়েছে কয়েক গুণ। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালকে ফুল সার্ভিসে নিয়ে যেতে আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত করার উদ্যোগের অংশ হচ্ছে এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, দেশে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসকদের জন্য অত্যাধুনিক পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ, জিন থেরাপি, রোবটিক সার্জারি থেকে শুরু করে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে হৃদরোগ, কিডনি রোগ, লিভার, গল ব্লাডার ও প্যানক্রিয়েটিক, অরগান ট্রান্সপ্লান্ট, ক্যান্সার, কিডনি রোগ, নিউরোসার্জারিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যবস্থা বাংলাদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক হয়ে। হাসপাতালটি একটি সেন্টার বেইজড হাসপাতাল অর্থাৎ এক ছাতার তলায় সব ধরনের সেবা মিলবে। কম্বাইন্ড অ্যাপ্রোচ বলা যায়। প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনায় এটি দেশের একমাত্র পেপারলেস হাসপাতাল।
এত অত্যাধুনিক হাসপাতাল পরিচালনায় দক্ষ কর্মী পাওয়া একটা অন্তরায় হয়ে উঠবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের জন্য রাখা হচ্ছে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও মৌলিক গবেষণার জন্য আলাদা সেন্টার। এসব সেন্টারে ২ বছরের জন্য নিয়োজিত থাকবেন ৬ জন কোরিয়ান ইঞ্জিনিয়ার ও ৫০ জন কোরিয়ান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ইতোমধ্যে তিন দফায় এদেশীয় ১৭৪ জন চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স, টেকনোলজিস্টকে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ দেশীয় জনবলকে প্রশিক্ষিত করতে ৬ জন কোরিয়ান ইঞ্জিনিয়ার ও ৫০ জন কোরিয়ান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভূমিকা রাখবেন। এ ছাড়া সেবাখাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের দেশীয় জনশক্তিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে এই হাসপাতালে নিয়োগ করা যায় কিনা, সে বিষয়েও পরিকল্পনা চলছে।
বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে এই অত্যাধুনিক বিশেষায়িত হাসপাতাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৩
ডিএইবি/এমজেএফ