ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আগামী বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২৩
আগামী বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা

ঢাকা: ডেঙ্গু সবক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়েছে, যার কারণে সংক্রমণের সংখ্যাও সব জায়গাতে বাড়ছে। আমাদের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টারশিয়ারি লেভেলে সংক্রমণ হচ্ছে।

সামনে আরও বিপর্যয় ঘটতে পারে, যার কারণে ডেঙ্গু রোগী আরো বেশি পরিমাণে শকে চলে যেতে পারে। আগামী বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিটি সিজনের সংক্রমণ পরবর্তী সিজনের সংক্রমণকে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করছে। তাই বছরব্যাপী ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যক্রম করতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।

রোববার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর বনানীতে শেরাটন হোটেলের বলরুমে ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয়’-শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা।

গোল টেবিল বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ডেঙ্গুর যে ধরন দেখা দিয়েছে আগামী বছর আক্রান্তরা আরও বেশি শকে যাবে। ডেঙ্গু রোগী ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনে কোনো সমস্যা নেই।  আগামী বছর অবস্থা আরও খারাপ হবে কারণ আমাদের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টারশিয়ারি লেভেলে সংক্রমণ হচ্ছে। প্রত্যেকটি সিজনের সংক্রমণ পরবর্তী সিজনের সংক্রমণকে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করছে। প্লাটিলেট এখানে ইস্যু না ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট এখানে ইস্যু। সেটি আমরা সারাদেশেই চেষ্টা করছি গাইডলাইন দিয়ে ম্যানেজ করতে।  

অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে রোগীর মৃত্যু হয়েছে আমরা সবখান থেকেই ডেথ প্রটোকল নিয়ে এসেছি। আমরা বেশ কয়েকটি রিভিউ করেছি। সেটির ফলাফল আমরা শিগগিরই সবার সামনে নিয়ে আসবো।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সবাই অনেক কাজ করছি তাও রোগ বাড়ছে, রোগী মারা যাচ্ছে। কোথাও তো একটি ঝামেলা আছে। সেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণার উপর গুরুত্ব দেওয়া খুব জরুরি। এডিস মশা নিয়ে গবেষণার জায়গায় একটা দুর্বলতা হচ্ছে, আমাদের দেশে মেডিকেল এন্টোমলজিস্ট আসলেই নেই। যারা কাজ করেন তারা হয় প্রাণিবিদ্যা অথবা কৃষি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। আমরা নিপসমের পক্ষ থেকে মেডিকেল এন্টোমলজির ওপর একটি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগ তেমন ছিল না। তারপরে আমরা দেখেছি কুষ্টিয়া, যশোর, মেহেরপুর, বরিশালের মতো কয়েকটা জেলায় ছিল। এ বছর কোনো জেলা বাদ নেই। আমরা শহরাঞ্চলে এডিস এজিপ্টি নিয়ে কথা বলি, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এডিস এলবোপিকটাস বেশি থাকে সেটা নিয়ে আলোচনা হয় না। ঢাকার বাইরে যেসব জায়গায় সার্ভে হয়েছে সবখানেই এলবোপিকটাস বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে। এর চরিত্র এজিপ্টি থেকে একদমই আলাদা। আমরা প্রচার প্রচারণা করি এজিপ্টি মাথায় নিয়ে। এলবোপিকটাস কিন্তু কচু গাছের পাতায় জমা পানিতেও হতে পারে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম সারা বছর জুড়ে চালাতে হবে। এই বছর আমরা গ্রামাঞ্চলে রোগী পেতে শুরু করেছি, আমি আসলে খুব ভীত যে আগামী বছর এই পরিমানটা আরও বাড়বে কিনা। বাড়লে আমাদের চিকিৎসা সক্ষমতার উপর অনেক চাপ পড়বে।  

নিপসমের কিটতত্ববিদরা জানান, মশার তিন ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যার ফলে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে সেসব প্রয়োগে কর্মীদের যথেষ্ট প্রশিক্ষিত হতে হবে। ওষুধ যদি শুধু ছিটিয়ে যায় পোকার সান্নিধ্যে না আসে কোনো কাজে আসবে না। যতই কার্যকর ওষুধ হোক না কেন ইনসেকটের কন্টাক্টে না আসলে কোনো কাজ হবে না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ.কে.এম শফিকুর রহমান জানান, বাসাবাড়িতে পানির মিটার একটি বড় মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির মিটার একটি বক্সের মধ্যে থাকে, এর মধ্যে পানি জমে। এ জায়গায় আমরা লার্ভা কিন্তু অনেক বাড়িতেই পেয়েছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, স্কুলে প্রচারণা বাড়াতে হবে। আমরা স্কুলে প্রচুর আক্রান্ত বাচ্চা পাচ্ছি।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোওয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, পরস্পর দোষারোপ না করে সমস্যার উত্তরণ করা জরুরি। সমন্বিতভাবে সবার কাজ করতে হবে। কোন দেশেই দ্রুত উত্তরণ ঘটার মতো পরিস্থিতি হয়নি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন রোগীর জন্য সরকারের গড়ে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে । তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় করেছে সরকার।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালে ৭০ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। আর বাকি ৩০ শতাংশ রোগী বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছে। সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অনেকের প্লাটিলেট ও আইসিইউ প্রয়োজন হয়। আবার অনেকে শুধু ওষুধেই সুস্থ হয়ে যায়।

জাহিদ মালেক বলেন, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান যার যার অবস্থান থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। আজকের আলোচনায় যেসব পরামর্শগুলো আসলো সেগুলো যদি আমলে নেই তাহলে এই বৈঠক ফলপ্রসূ হবে। আমাদের ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্টের জন্য সারা বছর কাজ করতে হবে। শুধু সিজনাল কাজ করলে চলবে না। আমাদের জোর দিতে হবে প্রতিরোধের দিকে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২৩
এসজেএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।