ঢাকা: প্রতি বছর দেশে ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের সময় থেকেই এ রোগে আক্রান্ত পাঁচ বছরের কম বয়সী ৯০ শতাংশ শিশু মারা যায় বিনা চিকিৎসায়।
কুসংস্কার, অসচেতনতা, চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও চিকিৎসা ব্যয় অত্যাধিক হওয়ায় এ রোগে মৃত্যু হার বেশি বলে মনে করেন শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা। তবে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এর বেশির ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেও জানান তারা।
বিশ্বে হাজারে ৮ থেকে ১০টি শিশু হৃদরোগ নিয়েই জন্ম নেয়। ত্রুটিসহ জন্মগ্রহণকারী শিশুদের মধ্যে ৩০ শতাংশই এ রোগে আক্রান্ত। এতে আক্রান্ত শিশুদের ৭৫ শতাংশ অনীলাভ এবং ২৫ শতাংশ নীলাভ প্রকৃতির।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ও শিশু হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘যেসব মা গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল, লিথিয়ামসহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন করেন, তাদের সন্তানরা হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া এক্স-রে কিংবা রাসায়নিক পদার্থের তেজস্ক্রিয়তার কারণেও এতে আক্রান্ত হতে পারে। ’
এছাড়া মায়ের ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া, গর্ভাবস্থায় রুবেলার সংক্রমণ, ফিনাইল কিটোনিউরিয়া ও সিস্টেমিক লুপাস ইরোথ্রোমেটোসাস রোগ হলে শিশুর জন্মগত রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এসবের বাইরে জিনগত কারণেও হৃদরোগ হতে পারে।
ডা. মনজুর হোসেন গর্ভবতী মায়েদের সতর্ক করে বলেন, ‘অনেক মা আছেন যারা গর্ভবতী হয়েছেন কিনা বিষয়টি বুঝতে না পেরে জন্মনিরোধক ওষুধ সেবন করেন। যা শিশুর হৃদরোগের অন্যতম বড় একটা কারণ। একই কারণে শিশু অন্ধ ও প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মানোর আশঙ্কাও বহুগুণ বেড়ে যায়। ’
হৃদরোগের রোগের লক্ষণ সর্ম্পকে ডা. মনজুর হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে শিশুর ঠোঁট, জিহ্বা ও চেহারা নীলাভ হতে পারে। ’
এছাড়া বার বার নিউমোনিয়া, দ্রুত ও ভারি শ্বাস নেওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ও পাঁজর দেবে যাওয়া, অল্পে হাঁপিয়ে যাওয়াসহ বয়সের সঙ্গে স্বাভাবিক ওজন ও শারীরিক বৃদ্ধি না হওয়া ইত্যাদি অনীলাভ হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ।
শিশুর হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যয় অত্যাধিক হওয়ায় এ রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই ভালো। একটু সচেতনতা আর কুসংস্কারমুক্ত হতে পারলে অনেকাংশেই এর প্রতিরোধ সম্ভব।
শিশুর হৃদরোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ডা. মনজুর হোসেন বলেন, মায়েরা রুবেলার প্রতিষেধক টিকা নেওয়ার মাধ্যমে শিশুদের হৃদরোগ ও প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুকিঁ কমাতে পারেন। এ রোগের কারণগুলো সর্ম্পকে সচেতন হয়ে সে অনুযায়ী চলতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত কোনো ওষুধ সেবন না করা, এক্স-রে ইত্যাদি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘এ রোগের লক্ষণ শিশুদের মাঝে দেখার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ রোগের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন দেশেই দেওয়া হচ্ছে। এ রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব। ’
সরকারি পর্যায়ে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১২
এমইউএম/এআর/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর