ঢাকা: শিশুকে মেধাবী করে গড়ে তুলতে চাইলে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। জন্মের প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
বুধবার (৩০ আগষ্ট) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিকে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডাব্লিউএমজিএল) এর কনফারেন্স হলে ‘শিশু পুষ্টি বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচকসমূহ অর্জনে চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা এ কথা বলা হয়।
গোলটেবিল আলোচনার যৌথভাবে আয়োজন করে কালের কণ্ঠ, সেভ দ্য চিলড্রেন ও কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মিজানুর রহমান শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সুবিধা তুলে ধরে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সুবিধা হলো, প্রসবের পরপরই প্রথম ঘণ্টার ভেতরেই আমরা বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়ানোর প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করে দিতে পারছি। এই কাজটা বাড়িতে বা বাসায় সম্ভব হয় না, কারণ সেখানে অনেক ধরনের লোক থাকে, ঠিকঠাক পরিবেশটা থাকে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে প্রসব করাতে পারলে আমরা সঠিক নিয়ম ও পরিবেশে জন্মের প্রথম ঘণ্টায় বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়ানোর কাজটা করতে পারি। সুখের বিষয় হলো, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব অনেক বাড়ছে। কিন্তু তার পাশাপাশি কিছু অন্ধকার দিকও আছে। আজকের আলোচনায় যেটা অনেকেই বলেছেন সেটা হলো, সি সেকশন বা সিজারিয়ান সেকশন (অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান)। এই সি সেকশন কিভাবে হয় সেটা সবার সামনে আসা উচিত। আমি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেছি। অনেক গাইনিকোলজিস্ট (স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ) আছেন, অনেকেই বলেন, ভাই একটু আল্ট্রাসনোগ্রাফির ডাক্তাররে বলে দিয়েন যে পানি কম আছে বা বাচ্চা নড়াচড়া কম করছে। তাহলে আমি সিজার করতে পারবো। এটা একদম বাস্তব অবস্থা যেটা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের জেলা হাসপাতালগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি রোগীতে ভরে গেছে। আমাদের পরিবার পরিকল্পনার দিকে যথেষ্ঠ নজর দিতে হবে।
আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের পুষ্টির একটা দুষ্টচক্র আছে। এটা বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে দেখা যায়। আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ হলেও অনেকে বিভিন্নভাবে কৌশলে তারও অনেক আগেই বিয়ে দেয়। ১১-১২ বছর বয়সের একটা মেয়ের যখন বিয়ে হয় এবং সে যখন বাচ্চা জন্ম দেয় সে জানেও না তার কি অবস্থা হবে। পরবর্তীতে দেখা যায় এই বাচ্চাটারও বিয়ে হয় আবার একই বয়সে। এভাবে একটা দুষ্ট চক্র চলছে। আমরা জাতীয় পুষ্টি সেবার পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি এই দুষ্ট চক্রকে ভাঙার জন্য।
মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন সম্পর্কে সবাইকে ভালোভাবে অবহিত করতে হবে। আমি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, একজন আইনজীবী, একজন উকিল, একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন ওসি জানে না এরকম একটা আইন আছে দেশে। আগে এই শ্রেণিটাকে জানাতে হবে এই আইন সম্পর্কে। আগে জেলা পর্যায়ে অবহিতকরণ সভা করে এই বিষয়গুলো জানাতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন ও এর প্রয়োগ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিএমএস (ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউটস বা মাতৃদুগ্ধ বিকল্প) আইন বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সংসদে পাস হয় (আইনটির পুরো নাম ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’)। ২০১৭ সালে এটিকে আর শক্তিশালী করা হয়। আইনে বলা হয়েছে, এটি আইপিএইচএন (জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান) বাস্তবায়ন করবে। এটা আমরা কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। সবার আলোচনা শুনে মনে হচ্ছে যে আমরা এটি যথাযথভাবে এখনো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এটি বাস্তবায়ন করার জন্য যে জিনিসটি প্রথমেই প্রয়োজন সেটি হলো জনসচেতনতা। জনগণ তথা মা ও পরিবারগুলোকে এবং আরেকটি পক্ষ যারা মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য তৈরি বা বিপণন করে তাদেরকে সচেতন না করে আইনটি বাস্তবায়ন করতে গেলে সরকারের সাথে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে। এ কারণেই আইনটি বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি।
এই আইনটির আমাদের কোন অংশীজনদের (স্টেকহোল্ডার) কাছেই ভালোভাবে পোঁছায়নি। এর ব্যর্থতা আমাদের। আমরা এই ব্যর্থতার গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। তবে আগামী মাসের (সেপ্টেম্বর) ১০ তারিখে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভা আছে সেখানে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো। ১০ তারিখের পরে আমরা প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় স্টেকহোল্ডারদের সাথে অবহিতকরণ সভা করবো। এবং এর জন্য আমরা সরকারের কাছ থেকে যথেষ্ট বরাদ্দও পেয়েছি ইতোমধ্যে। এটি আমরা গণমাধ্যমগুলোকেও জানতে চাই এবং এটির প্রচারে তাদের সাহায্য চাই।
মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্যের উৎপাদন, বিপণন ও প্রচার সম্পর্কে এই আইনে সবই বলা আছে। আইনে কিন্তু বলা আছে এই বিকল্প খাদ্যের প্রচার কতটুকু করতে পারবে বা কতটুকু পারবে না। সবাই যখন আইনটি ভালোভাবে জানবে তখন ভালোভাবে মানার চেষ্টা করবে সবাই।
দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, স্বাস্থ্যবান জাতি অত্যন্ত জরুরি। তার জন্য স্বাস্থ্যবান মানুষ দরকার। মানুষ তৈরি হলে না হলে দেশ তৈরি হবে না। আমরা যে যার জায়গা থেকে যদি চেষ্টা করি তাহলে আজকের আলোচনায় আসা প্রত্যেকটি সমস্যাই জয় করা সম্ভব। ’
শিশুর পুষ্টি ও এই বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক বলেন, আজকের আলোচনায় গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা এসেছে নানাভাবে। আমি বলবো, গণমাধ্যম তার ভূমিকা পালন করছে। গণমাধ্যম চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে দেয় বলে এখন সমাজ ও রাষ্ট্র খুব ভালোভাবে চলছে। কিন্তু এর মধ্যেও (গণমাধ্যমের) কিছু ঘাটতি যে নেই সেটা আমি বলবো না। আমাদের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের ৩টি দৈনিক পত্রিকা, ২টি টেলিভিশন চ্যানেল, একটি অনলাইন পোর্টাল ও একটি রেডিও রয়েছে। শুধু আমরাই যদি এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করি তাহলে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
গোলটেবিল আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় পুষ্টি সেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. সুপ্তা চৌধুরী।
গোলটেবিল আলোচনার সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মিজানুর রহমান। সঞ্চালনা করেন কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রাকের পুষ্টি বিষয়ক কর্মকর্তা মিথুন গুপ্তা, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জ্যোতিরাজ পাত্র, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কনসোর্টিয়াম প্রোগ্রাম ম্যানেজার মুহাম্মদ ইমরানুল হক, সেভ দ্য চিলড্রেনের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নিউট্রিশন ড. রুমানা আক্তার, নিউট্রিশন/সানইউএনের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ফারিয়া শবনম, এমএমএস গেইন এর প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট নীলিমা আজাদ, সেভ দ্য চিলড্রেন ও সূচনা চিফ অব পার্টি ড. শেখ শাহেদ রহমান, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ডা. এসকে রায়, বিশ্বব্যাংক ঢাকার কনসালট্যান্ট ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় পুষ্টি সেবার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো মনিরুজ্জামান প্রমূখ।
গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় জাতীয় পুষ্টি সেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. সুপ্তা চৌধুরী বলেন, বলা হয় মাতৃ দুগ্ধে যদি ১ ডলার বিনিয়োগ করা হয় তাহলে তার প্রতিদান পাওয়া যাবে ৩৫ ডলার। শিশুর দুই বছর বয়স পর্যন্ত মাতৃ দুগ্ধ পান করার গোন্ডেন সময় হিসেবে দেখা হয়। ২০২২ সালের হিসেবে ছয় মাস বয়সী শিশুর মাতৃ দুগ্ধ পান করার সংখ্যা ৫৫ ভাগের মত। সংখ্যাটা এত কম হবার কারণ করোনাসহ বৈশ্বিক নানা সংকট।
তিনি বলেন, আগে একটা সময় ছিল জন্মের পর শিশুর শালদুধ খাওয়াটা জরুরি মনে করা হতো। কিন্তু বর্তমানে নানা কারনে শিশুকে জন্মের পর শাল দুধ খাওয়ানো হয় না। অনেকে মনে করে, এতে শিশুর ক্ষতি হয়। অনেক সময় গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশু যাতে বেশি বড় না হয়ে যায় সে জন্য মাকে বেশি খেতে দেওয়া হয় না। বাচ্চা বড় হয়ে গেলে ডেলিভারিতে কোন সমস্যা যেন না হয় সেজন্য। অনেক চাকরিজীবী মা আবার ব্রেস্ট ফিডিং করানোর সময় পায় না। কারণ তার ছুটি থাকে মাত্র ৬ মাস। তখন সে মা চিন্তা করে ৬ মাস পর তো তাকে চাকরিতে যোগ দিতে হবে তাই সে বাচ্চাকে বুকের দুধ কমিয়ে দিয়ে অন্য ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে অভ্যস্ত করে তোলে। তবে একটি শিশুকে যদি মাতৃদুগ্ধ দেওয়া হয় তাহলে সে শিশু খুব বুদ্ধি সম্পন্ন হয়।
বিশ্বব্যাংক ঢাকার কনসালট্যান্ট ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গর্ভকালীন অবস্থায় আমরা অনেকে মায়ের স্বাস্থের বিষয়ে সচেতন না। পাশাপাশি আমরা বেশিরভাগ সময় পরিকল্পনা না করেই বাচ্চা নেই। যে কারণে বাচ্চা অনেক সময় স্বাসস্থ্যবান হয় না। তবে একটা বাচ্চা যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখনই তার শারীরিক বিকাশ বা সেল জন্মায়। জন্মের পর কিন্তু শিশুর কোনো বিকাশ হয় না। সে ক্ষেত্রে গর্ভে থাকা অবস্থায় মা যদি বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খায় তাহলেই শিশুর বিকাশ ঘটবে। আর জন্মের পর মায়ের দুধের বিকল্প কিছু নেই।
তিনি বলেন, আমরা বেশিরভাগই জাতি হিসেবে ইহুদিদের অপছন্দ করি। কিন্তু তারা গর্ভবতী মায়েদের যেভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দেখাশোনা করে, যা বিশ্বের অনেক জাতিই করে না। গর্ভবতী মায়েদের নিউট্রিশন থেকে শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্য সব কিছুই তারা ভালোভাবে মেইন্টেন করে। ফলে শিশু যখন জন্মায় তাদের পুষ্টি থেকে শুরু করে সব কিছুই পরিপূর্ণ থাকে। যে কারণে ইহুদিরা অনেক বেশি মেধাবী হয় এবং প্রতি বছরই তাদের মধ্যে কেউ না কেউ নোবেল পুরষ্কার পায়।
ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মিথুন গুপ্ত বলেন, কর্মজীবী মায়েদের সংখ্যা বাড়লেও তাদের সাপোর্ট দেওয়াটা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও সরকারের হিসেবে একজন মাকে ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু গার্মেন্টস সেক্টরে একজন মাকে মাত্র ৪ মাসের ছুটি দেওয়া হয়। যার ফলে সে বাচ্চাকে ভাল করে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে পারে না। সেখানে আমরা তাদের যতই সচেতন করি না কেন, তারা কিন্তু শিশুকে সময় দিতে পারে না। সে জন্য এই সকল চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা আমাদের করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ব্রাকের পক্ষ থেকে রুট লেভেলের মায়েদের ব্রেস্ট ফিডিংয়ের বিষয়ে নানা ধরনের কাউন্সিলিং করিয়ে থাকি। শাল দুধ খাওয়ানোর বিষয়েও সচেতন করে থাকি। তাদের কে আমরা এটাই বোঝাচ্ছি যে একজন শিশুর ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ফিডিং কতটা জরুরি।
শিশু খাদ্যের বিষয়ে প্রচারণা চালানোর জন্য সেলিব্রিটিদের আরো বেশি সতর্ক হবার পরামর্শ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (নিউট্রিশন) ফারিয়া শবনম বলেন, আমাদের দেশে পুষ্টি জনিত যে আইন তা অনেক শক্ত এবং খুবই ভাল। তবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। আমাদের দেশে ফর্মুলা দুধ বা নানা রকম সুগার যুক্ত শিশু খাদ্যের বিষয়ে নানা ধরনের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন হয়ে থাকে। যেখানে নাম করা সেলিব্রিটিরাও অংশ নেয়। যা শিশুদের অনেক বেশি আকৃষ্ট করে থাকে। তাহলে এ ক্ষেত্রে শিশু পুষ্টিকর খাবার থেকে বিরত থাকে। দেখা গেছে সুগার যুক্ত খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে ৪০ ভাগ শিশু বেশি আগ্রহ দেখায়। এতে তাদের পুষ্টিকর খাবারে অনিহা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে মিডিয়াকেও সচেতন হতে হবে।
ব্রেস্ট ফিডিংয়ের বিষয়ে সচেতনতার ক্ষেত্রে কি ধরনের বাধা কাজ করে এ বিষয়ে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কনসোর্টিয়াম প্রোগ্রাম ম্যানেজার মুহাম্মদ ইমরানুল হক বলেন, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের যেসকল চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে। তারপর চিন্তা করতে হবে এই সমস্যাগুলো দূর করতে কাদের সঙ্গে বা কাদেরকে নিয়ে কাজ শুরু করবেন। অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক মা আছে সে কমিউনিটি ক্লিনিকেও আসতে চায় না। সে ক্ষেত্রে তাকে সচেতন করতে হলে তার কাছে যেতে হবে। আমরা এ বিষয়ে মায়েদের সচেতন কররে উঠান বৈঠক পর্যন্ত করেছি। সেখানে তাদের নানা কার্টুন গল্প দেখানোর মাধ্যমে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের বিষয়ে সচেতন করছি।
তিনি বলেন, আগে এক সময় বিভিন্ন এনজিও এসকল বিষয় নিয়ে কাজ করতেন। এখন সে প্রোগ্রাম অনেক অংশে কমে যাচ্ছে। তাই এবিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে করে প্রতিনিয়ত মায়েদের ব্রেস্ট ফিডিং বা শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা যায়।
সেভ দ্য চিলড্রেনের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নিউট্রিশন ড. রুমানা আক্তার বলেন, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ সংস্থা মায়েদের সচেতনতার কাজ করে থাকি। মায়েরা এখন এবিষয়ে অনেক সচেতন। কিন্তু এ সব বিষয় প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের মায়েরা অনেক পিছিয়ে আছে। যার ফলে এত বেশি সচেতন হওয়ার পরও কার্যত তা ফল দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, সচেতন করার বিষয়ে আমাদের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে করে মায়েরা ব্রেস্ট ফিডিংয়ের বিষয়ে সচেতনতার পাশাপাশি তা যেন মেনে চলে। দেশের সব স্থানে সরকারের যাওয়া সম্ভব না। কারণ লোকবলের অভাব। যে কারণে এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিং কিছুটা কম থাকে।
এমএমএস গেইনের প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট নীলিমা আজাদ বলেন, আমাদের চাকরিজীবী মায়েদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ছুটির বিষয়। অনেক কোম্পানি আছে ঠিকমত ছুটি দিলেও বেশিরভাগই দিতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনার প্রয়োজন আছে। তাদের বুঝাতে হবে এবিষয়ে যাতে করে এই ছুটির জন্য যদি এক জন দক্ষ কর্মী চলে যায় তাতে কোম্পানিরই ক্ষতি, সে একজন দক্ষ কর্মী হারাবে। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীরা যেন শিশুকে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে পারে সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেখানে বিশ্ব পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য কাজ করছে সেখানে আমরা মাতৃত্বকালীন ছুটিই ভালো করে নিশ্চিত করতে পারছি না।
সেভ দ্য চিলড্রেনের সূচনা কর্মসূচির চিফ অব পার্টি ড. শেখ শাহেদ রহমান বলেন, গত দশ বছরে বাংলাদেশে অনিয়ন্ত্রিত সিজারিয়ানের পরিমান বাড়ছে। খুব বেশি সচেতন হলে বাবা মা সিজারিয়ানে যেতে চায় না। পাশাপাশি আমারা যারা পুরুষ আছি তারাও কিন্তু মায়েদের ঠিক মত সময় দিতে পারি না। এক্ষেত্রে আমরা মায়েদের যতই বলি না কেন, শিশুকে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে, তারা কিন্তু নানা কাজের চাপে তা ঠিকমত ব্রেস্ট ফিডিং করাতে পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২৩
ইএসএস/নিউজ ডেস্ক