ঢাকা: শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া বলে উল্লেখ করেছেন কালের কণ্ঠ ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের গোলটেবিল বৈঠকের বক্তারা।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের অডিটোরিয়ামে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস-২০২৩ উপলক্ষে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের এনএনএইচপি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. জহুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নব্বই দশকে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজার জীবিত জনে ১৩৩ জন ছিল। ২০২২ সালের হেলথ ডেমোগ্রাফি সার্ভে দেখা যায় শিশুমৃত্যু প্রতি হাজারে কমে ৩১ জন হয়েছে। এটা আমাদের দেশের সবার একটা বড় সাফল্য ১৩৩ জন থেকে ৩১ মৃত্যু নেমে আসা। ২০৩০ সালের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এটা আমাদের ২৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে। নবজাতকের মৃত্যু ৯০ দশকে ৫২ থাকলেও এখন সেটা প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ২০ জনে নেমেছে। এটাকে ১২ বা তার নিচে নিয়ে যেতে হবে।
ডা. জহুরুল ইসলাম আরও বলেন, দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু প্রতিবছর প্রতিদিন নিউমোনিয়ার মারা যাচ্ছে। ২০২২ সালের হেলথ সার্ভে থেকে দেখা যায়, অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুদের ২৪ শতাংশ নিউমোনিয়ায় মারা যায়। ১ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের ৪১ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে নিউমোনিয়ার কারণে। নবজাতক থেকে ৫৯ মাস পর্যন্ত শিশুমৃত্যুর বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিউমোনিয়া। অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া।
তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের নিউমোনিয়ার মৃত্যুর হার তিন শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ছিল, যা বর্তমানে ৭ দশমিক চার আছে। সুতরাং নিউমোনিয়ার দিকে বাড়তি নজর দিলে নিউমোনিয়াতে মারা যাওয়া বহুলাংশে কমাতে পারব।
বৈঠকে আরও আলোচনা করেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার উপপরিচালক শেখ দাউদ আদনান, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাহমিনা বেগম, বাংলাদেশ শিশু বিশেষজ্ঞ সমিতির মহাসচিব শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ, আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান, ইউনিসেফের নবজাতক ও শিশু বিভাগের হেলথ স্পেশালিষ্ট ডা জাহিদ হাসান, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. গৌতম বণিক, প্রজন্ম রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ডা. সাব্বির আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগাম ম্যানেজার ট্রেনিং ডা. সাবিনা আশরাফী লিপি।
বাংলাদেশ শিশু বিশেষজ্ঞ সমিতির মহাসচিব শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের দেশে এখন সান এক্সপোজার নাই, সূর্যের আলো থেকে ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। আমাদের মায়েরা, বাচ্চারা যেহেতু সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আমার মনে হচ্ছে, নিউমোনিয়া প্রতিরোধে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ডি’র গুরুত্ব বিষয়ে আমাদের জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগাম ম্যানেজার ডা. সাবিনা আশরাফী লিপি বলেন, আমরা চাই নিউমোনিয়া বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাক। আমরা চাই অবিভাবকেরা জানুক তাদের বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা আছে। নিউমোনিয়া হলে তারা যেন ফার্মেসি থেকে বিনা প্রেস্ক্রিপশান ওষুধ না কিনে, তারা যেন গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে না যায়, কমপক্ষে যেন অভিভাবকেরা কোনো রেজিস্টার ডাক্তারের কাছে যায়, না হলে যেন নিকটস্থ কোনো সরকারি হাসপাতালে যায়।
আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৩ থেকে ২৬ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এর মধ্যে চার সাড়ে চার হাজার শিশু মারা যায় কোনো সেবা না নিয়ে। বিনা চিকিৎসায় যেন একটা শিশুও না মারা যায়, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা হতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ বলেন, দুর্ভাগ্যবশত এমোস্কিলিন ডিটি ওষুধ একটা মাত্র কোম্পানি তৈরি করে, আমার অনুরোধ ইডিসিএলকে এটা তৈরি করতে হবে এবং এই ওষুধকে এসেন্সেনিয়াল ড্রাগে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের বইয়ে বর্তমান সময়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় বিষয় আছে সেগুলো বাদ দিয়ে, শিশুদের হাত ধোয়া, বিশুদ্ধ পানি পান করা, নাকে হাত না দেওয়া, পরিষ্কার পরিছন্নতার বিষয় যদি অন্তর্ভুক্ত করা যায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
আরকেআর/এমজেএফ