স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উচ্চমাত্রার ক্যাফেইনযুক্ত (৩০০ পিপিএম) এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদনের অনুমতি দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। যা দেশীয় কার্বোনেটেড বেভারেজ শিল্পকে হুমকির সম্মুখীন করবে।
বর্তমানে এ খাত থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা আসছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু কার্বোনেটেড বেভারেজের ভোক্তাই এনার্জি ড্রিঙ্কসের ভোক্তা তাই যুবসমাজ বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কোনোরকম অতিরিক্ত রেভিনিউ আসবে না। শুধু দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এছাড়া উচ্চমাত্রার ক্যাফেইনযুক্ত এনার্জি ড্রিংকস পান করলে হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতিসহ উচ্চ রক্তচাপ বাড়তে পারে, মনোযোগ নষ্ট, স্মরণশক্তি হ্রাস ও নিদ্রাহীনতা সৃষ্টি হতে পারে।
কারণ, ৩০০ পিপিএম ক্যাফেইনের সঙ্গে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিতে সহায়ক ও উদ্দীপক উপাদান টওরিন, ইনোসিটল এবং গ্লু-কোরোনোল্যাকটন স্টিমুলেটরও যুক্ত করা হবে। তাই ভোক্তার স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় এবং কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর প্ররোচনায় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নিষিদ্ধ এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদনের অনুমতি না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যাসোসিয়েশন। ৩০০ পিপিএম ক্যাফেইনযুক্ত এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদনের খসড়া প্রণয়নে আপত্তি জানিয়ে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইর মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যাসোসিয়েশন (বিবিএমএ)।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিএসটিআই কর্তৃক এনার্জি ড্রিংকসের একটি খসড়া মান প্রণয়ন করা হয়। খসড়ায় ক্যাফেইনের মাত্রা ৩০০ পিপিএম রাখা হয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ধরনের অধিক মাত্রার ক্যাফেইন যুক্ত পণ্য গ্রহণে হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতিসহ শরীরে অতিরিক্ত রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
এ ধরনের পণ্য গ্রহণে মনোযোগ নষ্ট, স্মরণশক্তি লোপ, নিদ্রাহীনতা সৃষ্টি করে। এ ধরনের অধিক মাত্রার ক্যাফেইন যুক্ত পণ্য গ্রহণ মাদকাসক্তির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এনার্জি ড্রিংকসের খসড়ায় উচ্চতর ক্যাফেইনরে সঙ্গে টওরিন, ইনোসিটল এবং গ্লু-কোরোনোপ্যাকটন স্টিমুলেটর বা উদ্দীপক রাখা হয়েছে। যা শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদরোগজনিত সমস্যা, মস্তিষ্ক বিকৃতির ন্যায় স্বাস্থ্যঝুঁকি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি করে।
বিবিএমএ বলছে, সরকার নির্ধারিত বেভারেজে ক্যাফেইনের মাত্রা ১৪৫ পিপিএম। নির্ধারিত মাত্রা মেনেই বেভারেজ উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিংকসের মান প্রণয়নের চেষ্টা করছে।
বেভারেজ উৎপাদকরা বলছেন, এমন নিষেধাজ্ঞার পরও কিছু আমদানিকারক ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিংকস বাজারজাত করতে এর মান প্রণয়নের জোর তৎপরতা চালাচ্ছে, যা দেশের বেভারেজ খাতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
বেভারেজ খাত থেকে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হচ্ছে। ৩০০ পিপিএম মাত্রার ক্যাফেইনযুক্ত এনার্জি ড্রিংকসের খসড়া মান প্রণয়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা।
তিনি বলেন, মাদক অধিদপ্তর থেকে বিএসটিআইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১৪৫ পিপিএমের বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন যুক্ত থাকলে তা মাদক হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের এনার্জি ড্রিংকস কেউ বাজারজাত করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০১৮ সালের ২৩ জুলাই বিএসটিআই, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বেভারেজ উৎপাদনকারীদের এক সভায় এনার্জি ড্রিংকসের মান প্রণয়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ওই বছরের ১৭ অক্টোবর প্রথম সারির ১৩টি দৈনিক পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১৪৫ পিপিএমের বেশি কার্বোনেটেড বেভারেজ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশে এনার্জি ড্রিংকস নামে কোনো কোমল পানীয়ের জাতীয় মান না থাকায় এ পণ্যের বিজ্ঞাপন বা প্রচার করা যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এমন ঘোষণার পরও একটি মহল উচ্চমাত্রার ৩০০ পিপিএম ক্যাফেইনযুক্ত এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদনের মান প্রণয়নের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
এসএএইচ