ঢাকা: বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে শাস্তিমূলক আইন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বলি হচ্ছে বহু জীবন, অপচয় হচ্ছে বিপুল পরিমান অর্থ এবং বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মারণব্যাধী এইডসের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
দ্য গ্লোবাল কমিশন অন এইচআইভি অ্যান্ড দ্য ল- এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘এইচআইভি অ্যান্ড দ্য ল: রিস্ক, রাইটস অ্যান্ড হেল্থ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তারা বলেছে, বিশ্বের অনেক দেশ এইডসের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে নানা আইনি ব্যবস্থার অপব্যবহার করছে। একই সঙ্গে তারা এইডসের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরো বেগবান করতে বিদ্যমান আইন জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবানুগ করার আহ্বান জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউএনডিপির প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা হেলেন ক্লার্ক বলেন, “এইচআইভি’র বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার বিপরীতে কোনো প্রতিকূল আইন করা ঠিক নয়। ”
বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাবেক প্রধান এবং আইন, মানবাধিকার ও এইচআইভি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত গ্লোবাল কমিশন অন এইচআইভি অ্যান্ড দ্য ল ১৪০টি দেশের এক হাজার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে তাদের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
তারা দেখেছে, বিদ্যমান আইন এবং অপরাধ মার্জনামূলক কিছু নিয়ম বা রীতি অনেক দেশে নারী এবং কন্যা শিশুদের লিঙ্গ বৈষম্যজনিত সহিংসতা থেকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না এবং তাদের এইডসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
এছাড়া কিছু মেধাস্বত্ত্ব আইন এবং নীতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সংগতিপন্ন নয়। এবং এসব নীতি জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পথেও বাধা সৃষ্টি করছে বলে তারা উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এছাড়া এইডস ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষের ব্যাপারে অপরাধী সাব্যস্ত করে করা এবং অমানবিকতা সুলভ আইন এসব মানুষকে সমাজের নিচুস্তরে নামিয়ে দিচ্ছে এবং তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তাদের ঝুঁকি আরো বাড়ছে। এ ধরনের অবস্থার শিকার হচ্ছে বিশেষ করে- পুরুষ সমকামী, যৌনকর্মী, হিজড়া সম্প্রদায় এবং শরীরে মাদক গ্রহণকারীরা।
আইনে এইচআইভি সংক্রমণ অপরাধ বলে গণ্যকরার কারণে মানুষ এইডস পরীক্ষা করতে এবং চিকিৎসা নিতে নিরুৎসাহিত হয়। অনেকে সমাজে অপাংক্তেয় হওয়ার ভয়ে রোগের কথা প্রকাশ করে না বলে জরিপে পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৬০টিরও বেশি দেশে এইচআইভিতি সংক্রমণের কথা অন্যকে জানানোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ২৪টি দেশে এখন এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা ৬০০ জন যারা এ ধরনের অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য হয়।
৭৮টি দেশ সমকামিতাকে বেআইনি বলে গণ্য করে। ইরান ও ইয়েমেনে এর জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। জ্যামাইকা এবং মালয়েশিয়াতে এর জন্য দীর্ঘ কারাবাসের বিধান আছে। এসব আইন এইডসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে যারা আছে তাদের রক্ষা করার পথে বড় অন্তরায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
শরীরে ড্রাগ নেওয়া আইন করে নিষিদ্ধ না করে বরং ক্ষতিহ্রাসমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া ভাল ফল পেয়েছে। কিন্তু কম্বোডিয়া, চীন, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইন এ ধরনের আইন এখনো বহাল রেখেছে। তাদের ওই দুই দেশের উদাহারণ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।
অপরদিকে শতাধিক রাষ্ট্র যৌন পেশাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। আইনি নিষেধাজ্ঞার কারণে যৌনকর্মীরা প্রায়শই সহিংসতার শিকার হয়। তাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। তারা অনেক সময় এইচআইভি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়।
এছাড়া অনেক দেশে আইন এবং সংস্কৃতি নারীর ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায় হয়ে আছে। এ কারণে নারী ও কন্যা শিশুরা যৌন নিরাপত্তা পাচ্ছে না। ১২৭টি দেশে এখনো স্বামীর হাতে ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টিকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।
একইভাবে কিছু সামাজিক ট্যাবুর কারণে কম বয়সীদের যৌনশিক্ষা দেওয়া হয় না। এ কারণে এইচআইভি ঝুঁকি কমানো সম্ভব হচ্ছে না এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে প্রতিবদেনে উল্লেখ করেছে কমিশন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১২
সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর