ঢাকা: স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি বা এসএমএ একটি দুরারোগ্য বিরল রোগ। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে।
কিন্তু সচেতনতার অভাবে এই রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ টেস্ট এবং চিকিৎসায় আওতায় আসছে না। ফলে চিকিৎসার অভাবেই অসংখ্য শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
সেই বিষয়টি সামনে আনতে ‘এসএমএ’ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে ‘কিউর এসএমএ বাংলাদেশ’।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ‘বিরল ব্যাধি দিবস’ বা ‘রেয়ার ডিজিস ডে’ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এসি দাবি জানায় বাংলাদেশে ‘এসএমএ’ আক্রান্ত রোগীদের কল্যাণে কাজ করা রোগী এবং অভিভাবকদের একমাত্র সংগঠনটির নেতারা।
এর আগে বিরল ব্যাধি দিবস উপলক্ষে সংগঠনটির পক্ষ থেকে একটি সচেতনতামূলক র্যালি করা হয়। র্যালিটি দোয়েল চত্বর থেকে শুরু হয়ে আবদুল গণি রোড হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে বক্তারা বলেন, এসএমএ বা স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি একটি দুরারোগ্য বিরল রোগ। পেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মোটর নিউরন, তা নষ্ট হওয়াই জিনঘটিত এই বিরল রোগের কারণ। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী, টাইপ ওয়ান থেকে টাইপ ফোর পর্যন্ত হয় এসএমএ। এর ওষুধ বাজারে এলেও তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। তবে সচেতনতার অভাবে এই রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ টেস্ট এবং চিকিৎসায় আওতায় আসছে না। ফলে চিকিৎসার অভাবেই দেশে অসংখ্য শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, এসএমএ রোগটি বাবা-মায়ের জিনগত সমস্যার কারণে হয়। যদি কোনো দম্পতি এসএমএ ক্যারিয়ার হয় বা এসএমএ রোগ হওয়ার জন্য দায়ী জিন বহনকারী হয়, তাদের বাচ্চার ২৫ শতাংশ আশঙ্কা থাকে এসএমএ রোগ হওয়ার; ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে সুস্থ বাচ্চা হওয়ার, আর ৫০ শতাংশ আশঙ্কা থাকে, সুস্থ বাচ্চা হলেও এসএমএ ক্যারিয়ার হওয়ার।
তারা আরও বলেন, এসএমএ লক্ষণগুলো বিকাশের আগে যদি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি জানা যায় তাহলে এর চিকিৎসা সহজ হয় এবং ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। একটি নবজাতকের স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এই রোগ আছে কিনা তা জানা যেতে পারে। ওষুধের পাশাপাশি থেরাপিসহ আনুষঙ্গিক সেবার মাধ্যমে একজন আক্রান্ত শিশুকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া যায়। এমনকি গর্ভাবস্থায় অ্যামনেওটিক ফ্লুইড পরীক্ষা করে অনাগত শিশুটি আক্রান্ত কি না জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তাই সচেতনতাই পারে এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।
তারা আরও বলেন, উন্নত বিশ্বে প্রতি ১০ হাজার জনের মধ্যে একজন এসএমএ আক্রান্ত রোগী রয়েছে বলে ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আত্মীয়তার মধ্যে বিয়ে বেশি হয়। তাই এই সংখ্যা এ অঞ্চলে বেশি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হওয়া এই রোগের অন্যতম কারণ ধরা হয়। সে হিসাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু টেস্ট করার সুযোগ কম থাকায় এটি নির্ণয় দুরূহ বিষয় হয়ে পড়েছে। যদি এসএমএ টেস্ট সহজ ও কম খরচে করা সম্ভব হতো; তাহলে দেখা যেত, বাংলাদেশে মহামারি আকারে এটি ছড়িয়ে আছে।
এসএমএ রোগকে ব্যয়বহুল উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, এসএমএ রোগের থেরাপিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবার জন্য ডেডিকেটেড কোনো হাসপাতাল নেই। এমনকি, কোনো এসএমএ ক্লিনিকও এখনও গড়ে ওঠেনি; যেখানে নিয়মিত এবং ঝামেলা ছাড়া রোগীরা পরামর্শ নিতে পারেন। এই রোগের ইনজেকশনের দাম প্রায় ২২ কোটি টাকা। এছাড়া দেশে একমাত্র অনুমোদিত ওষুধ রোশ ফার্মার ওষুধ রিজডিপ্লাম। এর প্রতিটি ফাইলের দাম প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অনেক বাবা-মায়ের পক্ষে এসব ওষুধ কেনা সম্ভবপর নয়। এমতাবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ অতীব জরুরি।
এসময় এসএমএ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোসহ ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। দাবিগুলো হলো- দেশে এসএমএ রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা; দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে এসএমএ ডেডিকেটেড কর্নার বা এসএমএ কর্নার স্থাপন করা; দেশে এসএমএ রোগের প্রকৃত চিত্র জানার জন্য জাতীয়ভাবে জরিপের ব্যবস্থা করা; বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকারিভাবে এসএমএ রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করা; এসএমএ রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচি গ্রহণ; এসএমএ রোগের জন্য অনুমোদিত ওষুধকে ‘অত্যাবশ্যকীয় তালিকাভুক্ত’ করা; এবং আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজন সাইকোলজিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা করা।
সমাবেশে কিউর এসএমএ বাংলাদেশের সভাপতি শাহাদাত হোসেন, সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক তানজিনা আফরিন, অর্থ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
এসসি/এসএএইচ