ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সেমিনারে বক্তারা

কুসংস্কার যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
কুসংস্কার যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে

ঢাকা: সামাজিক কুসংস্কার যক্ষ্মা রোগী ও পরিবারকে প্রভাবিত করে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে যক্ষ্মা-সম্পর্কিত স্টিগমার অবস্থা’ শীর্ষক একটি সেমিনার থেকে এ কথা জানানো হয়।

গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নে দেশে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ও আইসিডিডিআর,বি যক্ষ্মা ও স্টিগমা নিয়ে এ গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হয়েছে।  

গবেষণার মাধ্যমে যক্ষ্মারোগী ও তাদের পরিবারের সদস্য, সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ যারা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে স্টিগমার উপস্থিতি ও মাত্রা সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হয়।

সেমিনারে বলা হয়, কুসংস্কার বা স্টিগমার প্রভাব অনেক। যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যক্ষ্মার কারণে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

গবেষকেরা জানান, স্টিগমাকে প্রায়শই এমন একটি সামাজিক আচরণ হিসাবে দেখা হয়, যেখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। অপমানজনক ও নেতিবাচক আচরণের শিকার হয় তারা।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা জেলার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় পরিচালিত এ সমীক্ষায় স্টপ টিবি পার্টনারশিপের ‘টিবি স্টিগমা অ্যাসেসমেন্ট ডেটা কালেকশন টুল’ ব্যবহার করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন গত পাঁচ বছরের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য, সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া ব্যক্তিরা।

ডা. সায়েরা বানুর অধীনে নাদিম রেজা, আইসিডিডিআর,বির পাবলিক প্রাইভেট মিক্সের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার, তানজিনা রহমান, সিনিয়র স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসার ও তামান্না সুলতানা, আইসিডিডিআর,বির রিসার্চ অফিসার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, প্রায় ২৮ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি তাদের চিকিত্সা গ্রহণ ও সেবাচক্রের প্রথম তিনটি পর্যায়ে স্টিগমার প্রভাব অনুভব করেন। তাদের পরিবারের প্রায় ২২ শতাংশ সদস্য স্টিগমার সম্মুখীন হন। আর ১৪ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী ও তাদের পরিবারের ১১ শতাংশ সদস্য বাড়িতেও স্টিগমা অনুধাবন করেন।  

গবেষণার ফলাফলে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে হয়েছে। গবেষণা থেকে জানা যায়, যক্ষ্মা সংক্রান্ত স্টিগমা নারীদের বেশি প্রভাবিত করে। এতে সামাজিকভাবে অসম্মান, হয়রানি ও আর্থিক অসুবিধায় পড়েন তারা।

সেমিনারে অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ড. মো. মাহাফুজার রহমান সরকার এবং আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. সায়েরা বানু প্রমুখ।

আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, এক সময় মানুষ যক্ষ্মা নিয়ে কথা বলতে ভয় পেতো, তবে এখন দেশের যেকোনো প্রান্তে গেলেই যক্ষ্মার নাম শোনা যায়। এটা হয়েছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সফল উদ্যোগ, সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং পাশাপাশি আইসিডিডিআর,বি-তে যারা যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করছেন, তাদের একনিষ্ঠতার কারণে। যক্ষ্মার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে আমাদের এভাবেই যৌথভাবে কাজ করে যেতে হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর মো. মাহাফুজার রহমান সরকারসহ অন্যান্য অতিথিরা গবেষণালব্ধ ফলাফলের ওপর আলোকপাত করেন।

গবেষণাটি বাংলাদেশে যক্ষ্মা-সংক্রান্ত স্টিগমার ব্যাপক প্রভাবকে তুলে ধরে এটিকে যক্ষ্মার সেবা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়। স্টিগমার কাঠামোগত এবং সামাজিক কারণগুলো মোকাবিলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়, যার লক্ষ্য মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
আরকেআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।