খাবার নিয়ে হচ্ছেটা কী? কোন খাবার ভালো, কোনটা খারাপ? এ নিয়ে বিজ্ঞানী/গবেষকদের পরামর্শ এত দ্রুত পরিবর্তন হয় যে মানুষ তাতে দিশেহারা। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা ঘোষণা দিলেন, ডিম একটি সঠিক খাবার।
আমরা এই মুহূর্তে জানতে পারি কোনও একটি খাবার আমাদের জন্য খুবই ভালো। একটু পরেই শুনতে হয়, না ওটা খেও না, ওটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যার সবশেষ সংস্করণ ডিম। দেখা যাক খাদ্য গবেষকরা কোন খাদ্য নিয়ে কখন কি মত দিয়েছেন। আবার সেই মতের বিপরীত মত কখন কী এসেছে:
ডিম
১৯৯০: খাদ্য গবেষণার বাঘা বাঘা ব্যক্তিরা ঘোষণা দিলেন ডিমে কোলেস্টরেল বাড়ে এবং সপ্তাহে দুটি বা তিনটির বেশি ডিম খাওয়া যাবে না।
২০০৯: বিশেষজ্ঞরা ডিম থেকে তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন, ডিমে যে কোলেস্টরেল সৃষ্টি হয় তার খুব সামান্য প্রভাবই মানবদেহে পড়ে এই যুক্তিতে। ফলে ডিম খেতে মানা নেই।
২০১২: কানাডীয় গবেষকরা বললেন, সপ্তাহে দুটো ডিমের কুসুম খাওয়া মানেই নিজেকে সিগেরেট খাওয়ার মতো সমান বিপদে ফেলা। কারণ এতে হৃদযন্ত্রের শিরা-উপশিরা বন্ধ হয়ে যায়।
চকোলেট
২০১১: নিউইয়র্ক বোফিনদের মতে ঘন শক্ত চকোলেটে রয়েছে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় এন্টি-অক্সিডেন্ট যা হৃদযন্ত্রকেও সুরক্ষা দিতে সহায়তা করে।
২০১২: সপ্তাহে কয়েকদিন চকোলেট সেবী, যারা অনিয়মিত খান তাদের চেয়ে হালকা-পাতলা গড়নের হন। মার্চের একটি গবেষণা থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
২০১২: বছরের পরের দিকে ইউরোপীয় একটি পর্যালোচনায় চকোলেট বারে ক্যালোরি ও চর্বি বেড়ে যায় এমন তথ্য দিয়ে বিষয়ে উদ্বেগ দেখানো হয়। বলা হয় এতে বিষন্নতা বাড়ে।
সসেজ
২০১১: সসেজে লবনের পরিমান বেশি থাকায় তা উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়।
২০১২: দিনে একটা করে সসেজ খেলে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। ইউএস বোফিনরা (গবেষক) এ মত দেন জানুয়ারিতে।
২০১২: এপ্রিলে এসে বিশেষজ্ঞরা বললেন, সসেজের স্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাস্থ্যকর। তবে এই সসেজগুলোতে মাংসের পরিমান থাকতে হবে অন্তত ৮৫ শতাংশ।
রেড ওয়াইন
২০০১: লন্ডনের বিজ্ঞানীরা বললেন, পরিমিত রেড ওয়ান হৃদযন্ত্রের শিরাগুলো পরিস্কার ও সচল রাখে ফলে তা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
২০১১: যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বললেন, রেড ওয়াইন পাকস্থলীতে শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
২০১২: জার্মানি ও ইতালির গবেষকরা বললেন, দিনে এক গ্লাস করে রেডওয়াইন পানে মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
সাদা পাউরুটি
১৯৫০: সাদা পাউরুটি ভিটামিন ও মিনারেল সম্মৃদ্ধ। এতে ক্যালসিয়ামও বেশি পাওয়া যায়। ফলে বিশ্ব জুড়েই সাদা পাউরুটি একটি জনপ্রিয় ও নিয়মিত খাবার।
২০০৭: ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানালেন সাদা পাউরুটি খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
২০১২: হার্ভার্ডের গবেষকরা বললেন, নিয়মিত পাউরুটি খেলে তা শরীরে দুই ধরনের ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দেয়।
রেড মিট
২০০৬: বয়োবৃদ্ধদের জন্য রেডমিট ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ওই বছরই আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে এতে কোলোন ক্যান্সারও হতে পারে।
২০১০: যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে রেড মিট খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
২০১১: আধুনিক ফার্মিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদিত রেড মিটে চর্বির পরিমান কম থাকে। এতে আয়রন বেশি পাওয়া যায়, দাবি ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের।
বাদাম
১৯৯৯: বাদাম উচ্চমাত্রার চর্বির জন্য হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়, আইওয়া উইমেন হেলথ স্টাডির গবেষণা থেকে জানা যায় সেকথা।
২০১১: আগে যতটা ভাবা হতো তার চেয়ে অন্তত ২০ ভাগ কম ক্যালোরি রয়েছে বাদামে, এ কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা।
২০১২: যুক্তরাষ্ট্রের বোফিনদের মতে দিনে এক প্যাকেট ওয়াল নাট খেলে তা পুরুষের বির্যের গুনগত মান বাড়ায় নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারনের শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
আঙ্গুর
২০০৮: গোটা ইউরোপ জুড়ে সুপারমার্কেটগুলো থেকে আঙ্গুরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে দেখা গেলো তাকে বিপজ্জনক মাত্রায় কিটনাশক রয়েছে।
২০১১: ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের একটি গবেষণায় দেখা গেলো, আঙ্গুর যকৃতকে রোগ-বালাই থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
২০১২: আঙ্গুরে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ ও সি ও বি-৬ রয়েছে। আরো আছে খনিজ যা খেলে চেহারায় কমনীয়তা নিয়ে আসে, দাবি ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞের।
কফি
১৯৮০: আমেরিকান একটি গবেষণার পর বিশ্বব্যাপী জানিয়ে দেওয়া হলো কফি প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
২০০৭: অন্তত ৬৬টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে নিশ্চিত হওয়া গেলো কফি ক্যান্সারের কারণ নয়।
২০১২: কফি ইজ গুড ফর ইউ নামের একটি বই দাবি করা হলো কফি ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে কাজ করে।
আলু
২০০২: নিউ আটকিনস ডায়েটের বক্তব্য, খাদ্য তালিকা থেকে আলু বাদ দিতে পারলে ওজন কমবে।
২০০৯: আলুতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন বি-৬ রয়েছে। যা কাজের চাপে থাকলে শরিরের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে, দাবি ইউরোপীয় গবেষকদের।
২০১১: মাইক্রোওয়েভে ভেজে নেওয়া দুই টুকরো আলু নিয়মিত খেতে পারলে রক্তচাপ কমবে। এ দাবি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের।
বাংলাদেশ সময় ১৪১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১২
এমএমকে