সিলেট: জন্মগতভাবে কানে শুনতো না সাত বছরের শিশু আদৃতা রায় কথা। ফুটফুটে আদৃতা পৃথিবীর আলো বাতাসে বড় হলেও ছিল না শব্দ ভাণ্ডারের সঙ্গে পরিচয়।
কেবল আদৃতা-ই নয়, এভাবে ৬২ জনের কানে ‘কক্লিয়ার’ স্থাপন করে পৃথিবীর ভাষার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা। তারা এখন সুস্থ অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
সরকারি অর্থায়নে জন্মগতভাবে কানে না শোনা ৬২ জনকে শ্রবণ শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাদের কানে বসানো হয়েছে ব্যয়বহুল শ্রবণ যন্ত্র।
বুধবার (১২ জুন) সংবাদ সম্মেলন করে হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগ ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট’ কার্যক্রমে শতভাগ সফলতার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন আউটডোর ভবনের ১০ তলায় সম্পূর্ণ আধুনিক যন্ত্রপাতি যুক্ত করে ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট’সার্জারি ইউনিট স্থাপন করা হয়।
স্থাপনকৃত মেশিন দ্বারা তারা সবাই কানে শুনছেন এবং কথা বলতে পারছেন। অত্যাধুনিক এ যন্ত্রের দাম সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদফতরের অর্থায়নে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কর্মসূচির পরিচালক নাক কান গলা ও হেড-নেক চিকিৎসক ডা: নূরুল হুদা নাঈম ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, জন্মগতভাবে যে সব শিশু বধির, তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ কানে শোনার যন্ত্র স্থাপন করা হয়। এ যন্ত্রটি স্থাপন করলে তারা কানে শুনতে পারছেন। এটি নিয়ে মানুষ সাঁতার কাটতে পারে, যন্ত্রটির কোনো সমস্যা হয় না। যন্ত্রটি ব্যয়বহুল হওয়ায় সবাই ব্যবহার করতে পারে না। তবে জন্মের পর যে কোনো শিশু কানে শুনে কি না, তা নিশ্চিত হতে ‘ইউনিভার্সাল হিয়ার স্কিনিং’ টেস্ট করিয়ে নিতে পারেন। এ প্রক্রিয়াটা সব নবজাতকদের বেলায় প্রাথমিক চিকিৎসায় যুক্ত করে দেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
ডা. নাঈম আরও বলেন, সরকারি অর্থায়নে এ পর্যন্ত সফলভাবে বধির ৬২ জনকে অপারেশন করা হয়েছে। তার মধ্যে পুরুষ ৩২, নারী ৩০ ও অন্যান্য চারজন। এখনো অপেক্ষমাণ আছেন আরও ৩৫ জন। যদিও প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। অভিজ্ঞ লোকবলের অভাবের কক্লিয়ার সার্জারি অনেক স্থানে করা সম্ভব না হলেও এখানে ৬ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। আর ঢাকার বাইরে কেবল সিলেটে এ চিকিৎসা রয়েছে। সে জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এ হাসপাতালে ছুটে আসছেন।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট’ কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। যাতে তারা সরকারের এ সেবা গ্রহণ করতে পারে। এ সেবার কথা তৃণমূল মানুষের জানা প্রয়োজন।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, সরকারি অর্থায়নে এ ধরনের একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা আমাদের হাসপাতালে হচ্ছে, এটি গৌরবের। তবে ‘কক্লিয়ার’ স্থাপন করেই কাজ শেষ নয়। পরবর্তী এক বছর নিয়মিত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা সচেতন অভিভাবক তাদের বেলায় এ সমস্যা হয় না। তারপরও অন্য যারা আছেন, তাদের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
চলতি বছরে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে এ খাতে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, জানিয়েছেন সমাজ সেবা অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক, সিলেট সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সৌসিত্র চক্রবর্তী ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৪
এনইউ/জেএইচ