ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঢামেকের মেডিসিন ট্রায়াজ রুমে রোগীকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখায় ক্ষুব্ধ পরিচালক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
ঢামেকের মেডিসিন ট্রায়াজ রুমে রোগীকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখায় ক্ষুব্ধ পরিচালক

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচতলায় মেডিসিন ট্রায়াজ রুমে এক রোগীকে ভর্তি ওয়ার্ডে না পাঠিয়ে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখার কারণে খোদ হাসপাতালের পরিচালকের তোপের মুখে পড়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। তাদের কাছে সেই গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভর্তির ক্ষেত্রে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করানোর কারণ জানতে চেয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনালের মো. আসাদুজ্জামান।

গত সোমবার (২৯ জুলাই) ট্রায়াজ রুমে ঘটনাটি ঘটে। সেসময় ঘটনাস্থলে ছিলেন প্রতিবেদক।

জানা যায়, ভোরের দিকে রাজধানীর বাইরে থেকে গুরুতর অবস্থায় এক রোগী হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচতলায় মেডিসিন ট্রায়াজ রুমে চিকিৎসা নিতে আসেন। সেখানকার কর্তব্যরত এক নারী চিকিৎসক ওই রোগীকে দেখে তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। এর মধ্যে পেরিয়ে যায় কয়েক ঘণ্টা। সেই সময় টাকার বিনিময়ে কে বা কারা অপেক্ষায় থাকা সেই রোগীর শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য। রক্ত সংগ্রহ করা ব্যক্তি হাসপাতালের কেউ ছিলেন না। বাইরের কোনো ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে এসে টাকার বিনিময়ে তারা এসব পরীক্ষা করে থাকেন।

হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের কাজ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে পরিচালক নিজেই নতুন ভবনের নিচতলায় মেডিসিনের ট্রায়াজ রুমে গিয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কাছে সেই রোগীর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান। তিনি চিকিৎসকদের কাছে জানতে চান, ‘কেন মেডিসিন ট্রায়াজ রুমে রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে। কে বলেছে, মেডিসিনের ট্রায়াজ রুমে রোগীর পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ভর্তি করতে হবে?’ বেশ উচ্চস্বরে পরিচালক কৈফিয়ত চান চিকিৎসকদের কাছে।  

প্রথমে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কেউ কোনো কথা না বললেও পরিচালক বলেন, ‘আপনারা যদি কথা না বলেন, তাহলে আমি তদন্ত কমিটি করব। ’ তখন এক নারী চিকিৎসক পরিচালককে বলেন, ‘ওই রোগীকে প্রাথমিকভাবে দেখা হয়েছে এবং অবজারভেশন করছি। ’ এর উত্তরে পরিচালক বলেন, ‘তাই বলে রোগীর পরিস্থিতি দেখতে হবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা? ট্রায়াজ রুমে কেন রোগীর নতুন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ভর্তি নেওয়া হবে? এটা কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই রোগী  ঢাকার বাইরের হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা হয়েছে। রোগীর বিস্তারিত সেখানেই তো মোটামুটি লেখা আছে। তাহলে আপনারা কেন ঘণ্টা পর ঘণ্টা তাকে বসিয়ে রাখলেন? আপনারা রোগীকে ইনডোরে পাঠিয়ে দিন, সেখানে তো অনেক চিকিৎসক আছেন তারা দেখবেন। রোগীর কোনো পরীক্ষার দরকার হলে তারাই লিখে দেবেন। ’

হাসপাতালের পরিচালক আরও জানতে চান, ‘এই রোগীকে কে বিভিন্ন পরীক্ষার কথা বলেছেন? পরীক্ষার জন্য তার রক্ত নিয়েছে কে, এটা কে নির্দেশনা দিয়েছেন?’ তখন কেউ কোনো কথা বলেনি, আশপাশ থেকে অনেকে বলতে থাকেন, ‘বাইরের লোক এসে রক্ত নিয়ে চলে গেছে। রিপোর্ট দেবে কিছুক্ষণ পর। এর আগে অগ্রিম টাকা নিয়েছে। ’

পরিচালক তখন আরও কঠোরভাবেভাবে বলতে থাকেন, ‘মেডিসিনেই এসব বেশি হয়। ট্রায়াজ রুমের চিকিৎসকরা কেন রোগীর পরীক্ষার ওপর ভর করে রোগীকে ভর্তি দেবেন? আপনাদের কাজ তো এইটা না। আপনারা ইনডোরে মানে ভর্তি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিন। সেখানে তো চিকিৎসকরা আছেন, পরীক্ষা লাগলে তারাই দেখবেন। ’

পরে মেডিসিনের ট্রায়াজ রুম ত্যাগ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনালের মো. আসাদুজ্জামান। সেখানে উপস্থিত অনেকে পরিচালকের এই ভূমিকার প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
এজেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।