বরিশাল: অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ৫ তলা বিশিষ্ট মেডিসিন ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি আগুন লাগার কারণসহ রোধে পরবর্তী করণীয় এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসাব খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল।
তিনি বলেন, এত বড় হাসপাতাল ভবনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ত্রুটি বা অসঙ্গতি দেখা দিতে পারে। তবে সেগুলো থেকে প্রতিকার ও রোধ করার চেষ্টা অবশ্যই থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বিগত দিনে কি হয়েছে, সেটা না দেখে এবারে যে তদন্ত করা হবে সেটির আলোকে অগ্নিকাণ্ড রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তবে হাসপাতালটির নতুন ও পুরাতন ভবন ঘুরে দেখা গেছে, নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার অবস্থা খুবই নাজুক। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মধ্যে দুটি ভবনে নামমাত্র অগ্নিনির্বাপক রয়েছে। তাও আবার মেডিসন ভবনে যা রয়েছে তার থেকেও নগণ্য অবস্থা পুরাতন ভবনে। অথচ এ দুটি ভবনে প্রায় দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। ভর্তিরত রোগীদের স্বজনদের পাশাপাশি হাজারের মতো চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ প্রতিদিন রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন ভবন দুটিতে। এছাড়া দুটি ভবনেই দামি দামি চিকিৎসায় সহায়ক যন্ত্র, বেড রয়েছে।
হাসপাতালের স্টাফরা জানান, নতুন ভবনে আধুনিক ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও পুরাতন ভবনের মতো অগ্নিনির্বাপক ছাড়া কিছু নেই। তবে কিছু যন্ত্র দৃশ্যমান থাকলেও সেগুলোর আবার কার্যকারিতা শূন্য। এমনকি সেগুলো চালানোর কোনো প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না স্টাফদের। তাই প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসকে আসতে হয় হাসপাতালে এবং তার পৌঁছাতে বিলম্ব হলে আগুনের পরিধিও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এ অবস্থায় অগ্নি নির্বাপনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রাখার ওপর তাগিদ রোগীর স্বজনদের পাশাপাশি প্রকৌশলীদের। বাবু নামে এক রোগীর স্বজন জানান, রোববারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সূত্রপাত যারা দেখেছেন, তারা সবাই ফায়ার সার্ভিস আসার আগে বালু নিয়ে ছোটাছুটি করেছেন কিন্তু শুরুতেই যদি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হতো তাহলে ক্ষতির পরিমাণ সীমিত হতো। আবার যে স্টাফরা নিচতলায় ছিলেন তারা ভয়ে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, প্রশিক্ষণ থাকলে হয়তো তারাই উদ্যোগী হয়ে শুরুতেই আগুন নিভিয়ে ফেলতে পারতেন।
এদিকে প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে একাধিক সিঁড়ি থাকলেও পুরাতন ভবনে মাত্র দুটি সিঁড়ি। তাই নতুন ভবনে আগুন লাগার খবরে হুড়োহুড়ি বেশি হয়। আবার হাসপাতালে প্রায়ই শটসার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেহেতু শোনা যাচ্ছে, তাই সঞ্চালন লাইনগুলো প্রতিনিয়ত চেক করা উচিত এবং এ কাজে যারা রয়েছে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উচিত। সে সঙ্গে শুধু অগ্নিনির্বাপক নয়, আগুন নেভানোর কাজে আলাদা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মাধ্যমে হাই প্রেসার পানির পাম্পের ব্যবস্থা করা উচিত। আর এগুলো চালানোর জন্য হাসপাতালের স্টাফদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। যাতে ফায়ার সার্ভিস আসর আগে তারা একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। এখানে শুধু রোগী বা তাদের স্বজনরা নয় হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা, ওয়ার্ড বয় থেকে চিকিৎসক সবাই থাকেন এটা আমাদের ভাবতে হবে।
অপরদিকে হাসপাতাল এলাকায় ধূমপান ও সিগারেট ক্রয়-বিক্রি নিষিদ্ধের দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।
রোববার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ তলা নতুন মেডিসিন ভবনের নিচতলার লেলিন স্টোর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে প্রত্যক্ষদর্শী। যে স্টোরটি পুরুষ মেডিসিন ইউনিট-৫ এর পাশে অবস্থিত হওয়ায় মুহূর্তের মধ্যে গোটা হাসপাতালে আগুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের সহায়তায় আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসলেও ধোঁয়ার কারণে অভিযান সমাপ্তিতে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচতলা এ ভবনটিতে মেডিসিন বিভাগের ৫টি ওয়ার্ডের ১০টি ইউনিট ও ডেঙ্গু ওয়ার্ড রয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ৭০ জন ডেঙ্গু রোগীসহ ৫৪৩ জন রোগী ছিল ভবনটিতে। এছাড়া রোগীদের স্বজন, নার্স, চিকিৎসক, স্টাফরাও সেখানে ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
এমএস/জেএইচ