ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঢামেকে জরুরি বিভাগ চত্বরে অ্যাম্বুলেন্সের এলোমেলো পার্কিং, বিড়ম্বনায় রোগীরা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
ঢামেকে জরুরি বিভাগ চত্বরে অ্যাম্বুলেন্সের এলোমেলো পার্কিং, বিড়ম্বনায় রোগীরা ঢামেকে জরুরি বিভাগ চত্বরে এলোপাতাড়ি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং, পেছনের ডালা খুলে বসে থাকেন চালকেরা।

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চত্বরে প্রবেশের পর রোগীরা যে সমস্যায় পড়েন, তা হলো বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের যত্রতত্র পার্কিং।  

অ্যাম্বুলেন্সচালক এবং মালিকরা এ চত্বর এমনভাবে দখল করে রাখেন যে, দেখে মনে হয় এটি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি।

সারিবদ্ধ ভাবে পার্কিং করে রাখা অ্যাম্বুলেন্স দেখে মনে হবে এটি একটি অ্যাম্বুলেন্স টার্মিনাল।  

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, যে জরুরি বিভাগ চত্বরে সর্বোচ্চ পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করা যাবে। কিন্তু প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি অ্যাম্বুলেন্স শুধু জরুরি বিভাগ চত্বরেই পার্কিং করে রাখে। এতে চিকিৎসা নিতে আসা হাসপাতালে আগত রোগীদের জরুরি বিভাগ ভবনের নিচতলায় প্রবেশের সময় অনেক বেগ পেতে হয়। অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং জরুরি বিভাগ চত্বর সারিবদ্ধ রাখার কারণে সেখানে জটলার সৃষ্টি হয়। এই কারণেই হাসপাতালে ভবনে রোগীদের প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয়।

এছাড়া, অ্যাম্বুলেন্সচালক ও তাদের সহকারীরা রোগী নামানোর বা তোলার অজুহাতে গাড়ির পেছনের ডালা খুলে রাখার কৌশল অবলম্বন করে। এভাবেই ডালা খুলে অ্যাম্বুলেন্সগুলো জরুরি বিভাগের ভবনের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে থাকে, যার ফলে রোগীদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়।

রোববার (২৪ নভেম্বর) রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় দুই কলেজের শিক্ষার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটে। এছাড়া সোমবার (২৫ নভেম্বর) দিনভর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটে।  

অন্যান্য রোগীদের পাশাপাশি দুটি ঘটনায় আহত হয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। হাসপাতালে প্রবেশের সময় পার্কিং করে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের কারণে জরুরি বিভাগের ভবনে প্রবেশ করতে তাদের বেগ পেতে হয়। এ সময় আহতদের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থীরা চেঁচামেচি করে অ্যাম্বুলেন্সগুলো জরুরি বিভাগ ভবনের প্রবেশের মুখ থেকে সরিয়ে দেন।

এদিকে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা খুবই সীমিত। মাত্র ২-৩টি এবং এগুলো ঢাকার বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। হাসপাতালের তিনটি ভবনের আসন সংখ্যা ২ হাজার ৬০০ হলেও, এর তিনগুণ বেশি রোগী এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।  

এত সংখ্যক রোগীর বেশিরভাগই বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আসা-যাওয়া করে থাকেন। অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এবং নিয়ম-নীতি না মেনে তাদের গাড়ি পার্কিং করে রাখেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জরুরি বিভাগ চত্বরে বেসরকারিভাবে অ্যাম্বুলেন্স রাখার পার্কিং স্পট ছিল। টাকার বিনিময় অ্যাম্বুলেন্স জরুরি বিভাগ চত্বরের একটি জায়গায় পার্কিং করতো।  

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি বিভাগ চত্বরে পার্কিং স্পটটি বন্ধ করে দেয়। ৫ আগস্টের পরে জরুরি বিভাগ চত্বরে এলোপাতাড়ি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার শুরু হয়েছে।  

তবে এবার নির্দিষ্ট কোন পার্কিং স্পটে অ্যাম্বুলেন্স রাখা না হলেও জরুরি বিভাগ চত্বরে যেখানে সেখানে অ্যাম্বুলেন্সগুলো পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়।

সূত্র থেকে জানা যায়,  জরুরি বিভাগের চত্বরে সরকারি জায়গায় নিজস্ব টাকা দিয়ে একটি অফিস তৈরি করেছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক-চালকরা। হাসপাতাল পরিচালকের অনুমতি নিয়েই নিজস্ব টাকা দিয়ে সেই অফিসটি করা হয়েছে। সরকারি জায়গায় বেসরকারি অফিস উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছেন তারা।

এই অ্যাম্বুলেন্সগুলোর বেশ কয়েকটির মালিক আবার মজনু,শহীদ, কামালসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির বেশ কয়েকজন কর্মচারী।

এই মজনু-শহীদ-কামালদের ঢাকা মেডিকেলে কর্তৃত্ব অনেক। তাদের মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্সের  কর্মচারীদের বেশ দাপট হাসপাতাল চত্বরে। তাদের দিকে আঙুল তুলে কেউ কথা বলতে পারেন না কেউ।  

হাসপাতালের সূত্র জানায়, বাদল মাতব্বর নামে অ্যাম্বুলেন্স সমিতির নেতা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সগুলো বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জরুরি বিভাগ চত্বর থেকে বাড়তি অ্যাম্বুলেন্স সরিয়ে দেওয়া চেষ্টা করলেই অনেকেই সেই নেতা বাদলের নাম ব্যবহার করেন।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে এই ব্যাপারে বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. বাদল মাতব্বর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অবশ্যই মানতে হবে। আমি সব সময় বলে থাকি আমাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলো নিয়ন্ত্রণভাবে চলতে হবে। অন্যায়ের কোনো কিছুই আমরা মেনে নেব না, মেনে নিই না।  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সকলের নিজস্ব অর্থায়নে হাসপাতাল জরুরি বিভাগ চত্বরে সরকারি জায়গায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের একটি অফিস তৈরি করা হয়েছে। সেটা হাসপাতাল পরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে। এই অফিসটি উদ্বোধন হলেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন। একটি অফিস না থাকলে কোনোকিছুই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সবাই ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, ইনশাল্লাহ আগামীকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) থেকে হাসপাতাল চত্বরে ৫ থেকে ৬টি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিংয়ে থাকবে।

এদিকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগের (নার্স ইনচার্জ) লিয়াকত সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা আছে, কোনো বাইরের লোক হাসপাতালে যেন প্রবেশ করতে না পারে। তবে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয় আমাদের ওপর কোনো নির্দেশনা নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনসার সদস্যদের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মো. মিজান বলেন, ৫ আগস্টের পরে হাসপাতাল জরুরি বিভাগের চত্বরে পার্কিং স্পট উঠিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। তারপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দেয় হাসপাতালে চত্বরে পাঁচটির বেশি অ্যাম্বুলেন্স যেন পার্কিংয়ে না থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায় ১৫ থেকে ২০টা অ্যাম্বুলেন্স  চত্বরে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। আমরা বহুবার তাদের উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।  

তিনি আরও বলেন, এটাও ঠিক অ্যাম্বুলেন্সের পেছনের ডালা খুলে জরুরি বিভাগের ভবনের প্রবেশ মুখে বসে থাকে তাদের লোকজন। আমরা সরাতে গেলেই তারা বলে প্যাসেঞ্জার আসছে, এখনই চলে যাচ্ছি। আসলে কিন্তু না। ডালা খুলে প্যাসেঞ্জারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা এটা তাদের একটা কৌশল। যখনই যাত্রী পাবে তখনই চলে যাবে আবার সেই জায়গায় আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়াবে। সেও ডালা খুলে বসে থাকবে।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. ফারুক জানান, হাসপাতালের ভেতরে কোনো গাড়ি থাকবে আর কোন গাড়ি থাকবে না, এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। এছাড়া কর্তৃপক্ষ আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।

এদিকে হাসপাতাল চত্বরে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ টা ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসতে দেখা যায়। এদের মধ্যে আছে পান, সিগারেট, ঝালমুড়ি, ভেলপুরি, নানা রকম জিনিসপত্র পাশাপাশি টুকরি নিয়ে ফল ফ্রুট বিক্রি।

তবে এই দোকানগুলোর মধ্যে কয়েকটি দোকান ছাড়া বাকি দোকানগুলো হাসপাতাল চত্বরে ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় দেখা যায়। আনসার সদস্যরা ৩ শিফটে মাইক নিয়ে জরুরি বিভাগ চত্বরে ডিউটি করে থাকেন। এই মাইকেই বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দিতে তাদের দেখা যায়। মাইকেই বলতে শোনা যায়, হাসপাতাল চত্বরে কোনো যানবাহন পার্কিং করা যাবে না। অথচ একদিকে মাইকিং অন্যদিকে অ্যাম্বুলেন্স সারিবদ্ধ পার্কিং করে থাকে।

আরও পড়ুন>> ঢামেক হাসপাতালে রোগী নিয়ে প্রবেশেই ১৫ মিনিট পার

বাংলাদেশ সময় : ১৬০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
এজেডএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।