ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ পৌষ ১৪৩১, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ রজব ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড

রেজাউল করিম রাজা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড

ঢাকা: কোনোভাবেই যেন থামছে না এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর দাপট। শীতকালেও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

দেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে এবং একই সময়ে সারা দেশে ৮৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত থাকার কারণ সম্পর্কে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বর্ষা মৌসুম শেষেও যেখানেই পানি জমছে, সেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। এমন কিছু জায়গায় এডিস মশা বংশ বিস্তার করছে, যেখানে বৃষ্টির পানি জমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি ইত্যাদি।

আমাদের দেশে সাধারণত গ্রীষ্মকালে ডেঙ্গু রোগের মৌসুম হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে সারা বছরজুড়েই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে নয় হাজার ২৮৮ জন এবং মারা যান ৮৩ জন।    

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন পাঁচ হাজার ২৪ জন এবং মারা যান ২৭ জন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এক হাজার ২০৭ জন এবং মারা যান সাত জন। এর আগে ২০১৯ সালে ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এক হাজার ২৪৭ জন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি।

২০২৪ সালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন। একই বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন। ডিসেম্বর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার ৭৪৫ জন এবং ৮৭ জন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে।

চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোরে কার্যক্রমের যথেষ্ট ঘাটতির ফলে শীতকালেও ডেঙ্গু সংক্রমণ এবং মৃত্যু হচ্ছে।

ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ও অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, এখনও আমরা এডিস মশা পাচ্ছি, যেমন বহুতল ভবনের বেজমেন্টে, নির্মাণাধীন ভবনে যেখানে পানির ব্যবহার আছে এবং পানির ঘাটতির ফলে কিছু এলাকায় মানুষ বিভিন্ন পাত্রে পানি জমিয়ে রাখে, সেখানেও এডিস মশা পাচ্ছি আমরা। ডেঙ্গুর এসব প্রজনন ক্ষেত্রের সাথে বৃষ্টির কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি আরও বলেন, বছরব্যাপীই এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। একেবারে শূন্য হয়ে যাবে না, প্রতিদিন ডেঙ্গু কেস পাওয়া যাবে। এখন থেকে আমাদের ডেঙ্গুকে সারা বছরব্যাপী রোগ হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি শীতকালে যেসব জায়গায় ডেঙ্গুর প্রজনন হয়, সেই সব স্থানকে টার্গেট করে এডিস নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সাজাতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।