ঢাকা: চার দফা দাবি আদায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাস্তবায়ন না করায় লং মার্চ কর্মসূচি পালন করছে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ের আগে সড়কে বসে অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সড়কে বসে পড়েন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক (মিডিয়া সেল) মো. সাকিব মাহমুদ বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হলেও ম্যাটস শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অবসান হয়নি। এই বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে গত ২২ জানুয়ারি চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকার শাহবাগে গণজমায়েত করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দাবি পূরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তার দৃশ্যমান কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। যেহেতু মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো এ ব্যাপারে আন্তরিকতার সঙ্গে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, সেহেতু আমরা লং মার্চ কর্মসূচি নিয়েছি। আমাদের এই মুভমেন্টের সকল দায়ভার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে নিতে হবে, যা আগেই সংবাদ সম্মেলন এ মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরো জানান, বর্তমানে সারা দেশে ১৬টি সরকারি ম্যাটস্ ও প্রায় ২০০টি বেসরকারি ম্যাটস্ ডিপ্লোমা মেডিকেল ডিগ্রি ডিএমএফ কোর্সটি পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২২ এবং বিএমএন্ডডিসি-এর সর্বশেষ তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ষাট (৬০) হাজার এবং বিএমডিসি নিবন্ধিত ডিএমএফ-এর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ (৩০) হাজার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ৫ হাজার ৫০০ জন ডিপ্লোমা চিকিৎসক (ডিএমএফ) ‘উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ পদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসহ জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল তথা ডিএমএফ কোর্স সম্পূর্ণকারী প্রায় ৫০ হাজার দক্ষ জনবল কর্মসংস্থানহীন বেকার হয়ে পড়েছে। গত একযুগের বেশি সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধনের নামে তালবাহানা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে শূন্য পদ রয়েছে ২ হাজার ৫০০টি। এতে করে একদিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্য দিকে ম্যাটস্ থেকে পাশকৃত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাদের চার দাবি হলো-
১) ০১ যুগের (১২ বছরের) অধিক সময় ধরে নানান অজুহাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর শূন্য পদে বন্ধকৃত নিয়োগ অভিযুক্ত সচল করতে হবে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদ সৃষ্টি করতে হবে। (কারণ, ওখানে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়নি কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য ওষুধের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়, যা জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা)।
২) প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, কোর্সের নাম পরিবর্তনসহ (১৯৮৫ সালের সিদ্ধান্ত) ২০২১-এর কোর্স কারিকুলামের ত্রুটি ও অসংগতি সমাধান করে নতুন ইন্টার্ন লগবুক প্রণয়ন করতে হবে।
৩) উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত, বিএমঅ্যান্ডডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদান করতে হবে।
৪) প্রস্তাবিত এলাইড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড খসড়া আইনের নাম পরিবর্তনসহ প্রস্তাবিত সকল ধারায় সংশোধনীসহ বাস্তবায়ন করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, দাবি আদায়ের বিষয়ে যতক্ষণ না সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে দেখা করতে না আসবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যাবেন না।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যাতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করতে না পারে সেজন্য শাহবাগ মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। পাশাপাশি তাদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৫
এসসি/এসএএইচ