ঢাকা: চার দফা দাবি আদায়ের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে গেছে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় শাহবাগ থেকে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটিকে সচিবালয়ে নিয়ে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী।
প্রতিনিধিদলে রয়েছেন—সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের রামিম, মুজাহিদুল ইসলাম, হাসিবুল হাসান শান্ত, শামীম, আহমদ উল্লাহ মানসুর।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগের বিষয়ে কাল-পরশুর মধ্যে সার্কুলার হবে। আপনাদের দাবির বিষয়ে কথা বলতে প্রতিনিধিদলকে আমি নিয়ে যেতে এসেছি। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নেন, আপনারা যাবেন, নাকি এখানে থাকবেন।
তখন সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের সদস্য শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। সেখানে আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে কথা বলব। সেখানে যেসব সিদ্ধান্ত জানানো হবে, তা আমরা ফিরে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জানাব। তারপর আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব, আমরা চলে যাব, না থাকব।
এর আগে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে চার দফা দাবি আদায়ে সরকারকে এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। তখন এই এক ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং মার্চ করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
চার দফা দাবি আদায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাস্তবায়ন না করায় রোববার সকাল থেকে লং মার্চ কর্মসূচি পালন করছেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১১টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সড়কে বসে পড়েন তারা।
তখন সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক (মিডিয়া সেল) মো. সাকিব মাহমুদ বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হলেও ম্যাটস শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অবসান হয়নি। এই বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে গত ২২ জানুয়ারি চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকার শাহবাগে গণজমায়েত করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দাবি পূরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দৃশ্যমান কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। যেহেতু মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো এ ব্যাপারে আন্তরিকতার সাথে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, সেহেতু আমরা লং মার্চ কর্মসূচি নিয়েছি। আমাদের এই মুভমেন্টের সকল দায়ভার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ রাস্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে নিতে হবে, যা আগেই সংবাদ সম্মেলন এ মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বর্তমানে সারা দেশে ১৬টি সরকারি ম্যাটস ও প্রায় ২০০টি বেসরকারি ম্যাটস ডিপ্লোমা মেডিকেল ডিগ্রি-ডিএমএফ কোর্সটি পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২২ এবং বিএমঅ্যান্ডডিসি-এর সর্বশেষ তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার এবং বিএমডিসি নিবন্ধিত ডিএমএফ-এর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৫৫০০ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা (ডিএমএফ) ‘উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার' পদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসহ জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল তথা ডিএমএফ কোর্স সম্পূর্ণ কারি প্রায় ৫০ হাজার দক্ষ জনবল কর্মসংস্থানহীন বেকার হয়ে পড়েছে। গত একযুগের বেশি সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধনের নামে তালবাহানা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে শূন্য পদ রয়েছে ২৫০০টি। এতে করে একদিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্য দিকে ম্যাটস থেকে পাসকৃত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাদের চার দাবি হলো—
১। এক যুগের অধিক সময় ধরে নানান অজুহাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের শূন্য পদে বন্ধকৃত নিয়োগ অভিযুক্ত সচল করতে হবে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদানের লক্ষে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদ সৃষ্টি করতে হবে। (কারণ, ওখানে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়নি কিন্তু এন্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য ঔষধের মাধ্যমে যেবা প্রদান করা হয়, যা জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা)।
২। প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, কোর্সের নাম পরিবর্তন (১৯৮৫ সালের সিদ্ধান্ত) সহ ২০২১ এর কোর্স কারিকুলামের ত্রুটি ও অসংগতি সমাধান করে নতুন ইন্টার্ন লগবুক প্রণয়ন করতে হবে।
৩। উচ্চ শিক্ষা বঞ্চিত, বিএমএন্ডডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
৪। প্রস্তাবিত এলাইড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড খসড়া আইনের নাম পরিবর্তনসহ প্রস্তাবিত সকল ধারায় সংশোধনী সহ বাস্তবায়ন করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, দাবি আদায়ের বিষয়ে যতক্ষণ না সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে দেখা করতে না আসবেন, ততক্ষণ পযর্ন্ত তারা যাবেন না।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যাতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করতে না পারে সেজন্য শাহবাগ মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। পাশাপাশি তাদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৫
এসসি/এমজেএফ