মেহেরপুর: মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় রোগীদের প্রভাব ও অবস্থান দেখে। যার যত শক্তি তিনি তত বেশি সুবিধা ভোগ করবেন এ হাসপাতালে।
উপায়ন্তর না পেয়ে এ অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসা সেবা পেতে নির্ভর করতে হচ্ছে কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক, পাশের জেলার হাসপাতাল অথবা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ওপর।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রথমে এ হাসপাতালকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট করা হলেও পরবর্তীতে এটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু লোকবল থেকে যায় ৫০ শয্যার। এভাবে কিছুদিন চললেও পরবর্তীতে জনবল বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু বাড়েনি চিকিৎসা সেবার মান। সেবার মান থেকে যায় আগের মতোই। মানে অতি করুন।
এ হাসপাতালের রোগীদের অভিযোগ, এখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় পরিচিত মুখ দেখে। যিনি যত বেশি প্রভাবশালী তিনি তত ভালো চিকিৎসা সেবা পাবেন এখানে। এরফলে এ অঞ্চলের গরীব রোগীরা এ হাসপাতাল থেকে সামান্যতম সুবিধাও পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, এখানকার খাবার মান এত নিম্নমানের যা কোনো মানুষের পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়।
এছাড়াও ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের ব্যবহারে অতিষ্ঠ রোগীরা। মাঝে মধ্যে রোগী ও বয়দের মধ্যে হাতাহাতিরও ঘটনা ঘটে থাকে এখানে।
হাসপাতালে আসা একাধিক রোগী বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, “সকাল থেকে হাসপাতালে এসে বসে থাকলেও ডাক্তারের সাক্ষাত পাওয়া যায়না। কিন্তু যারা প্রভাবশালী তারা সবার শেষে এসে ডাক্তার দেখিয়ে চলে যান। ”
মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, এখানে ৪১ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে মাত্র ১৮ জন। ২৩ জন ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
মেডিক্যাল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও শুন্য রয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয়সহ চতুর্থ শ্রেণীর জনবলও।
এছাড়া মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ২ বছর যাবৎ কার্ডিওলজিস্ট কনসালটেন্ট ও কনসালটেন্ট মেডিসিন শূন্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেননি।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আলোক কুমার দাস বাংলানিউজকে জানান, জেলার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালটিকে ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু লোকবল নিয়োগ না করে যাওয়ায় বহু মূল্যবান যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, বর্তমানে হাসপাতালটিতে কনসালট্যান্ট, জুনিয়র কনসালট্যান্টদের পদই খালি নয়, খালি রয়েছে অনেক মেডিকেল অফিসারের পদ। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন সাব সেন্টারের চিকিৎসকদের এনে এ পদে সাময়িকভাবে কাজ করানো হচ্ছে। ফলে সাব সেন্টারে আসা রোগীরাও এখনে চিকিৎসা নিতে পারছেনা। শুধু জনবল নিয়োগ দিলেই হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যার চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব।
আরএমও জানান, জনবল নিয়োগের জন্য একাধিকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানো হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তা হচ্ছেনা।
এদিকে, বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কয়েক দফায় কয়েক কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। কিন্তু রোগীরা তা পাচ্ছেন না।
ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আউটডোরে ভালো কোনো অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করা হয়না। এসব ওষুধ কোথায় যায়?
চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাওয়া মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামের লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালের ডক্টর চেম্বারের সামনে রোগীদের ভিড় লক্ষ করা গেলেও ডাক্তাররা হাসপাতালের সামনে সনোল্যাবে ও কয়েকটি ক্লিনিকে রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এসব ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সহিদ বাংলানিউজকে জানান, জেনারেল হাসপাতালটিতে কার্ডিওলোজি কনসালট্যান্ট ও কনসালটেন্ট মেডিসিন পদ দুটি প্রায় ২ বছর যাবৎ শূন্য রয়েছে। এছাড়া শূন্য রয়েছে মেডিকেল অফিসারসহ অন্যান্য পদ। আর এসব পদ ফাঁকা থাকায় ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১২
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর