ঢাকা, রবিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যু কমাতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৪, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫
হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যু কমাতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যু কমাতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি

ঢাকা: হৃদরোগজনিত অকালমৃত্যু কমাতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা।  

বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষ্যে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ ঝুঁকি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন জনস্বাস্থ্য ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।

এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য “ডোন্ট মিস এ বিট”।  

ওয়েবিনারে বলা হয়, বিশ্বে প্রতি পাঁচটি অকালমৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য দায়ী হৃদরোগ, যার অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। শতকরা ৮০ ভাগ হৃদরোগ এবং স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য হলেও বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৩৪ শতাংশ মৃত্যু ঘটে হৃদরোগে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

ওয়েবিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতি ৪ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। ডব্লিউএইচও এর গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৮৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে, যার ৫২ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। প্রতিবেদনে ওষুধের প্রাপ্যতাকে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং অসংখ্য জীবন বাঁচানোর জন্য অন্যতম একটি সুযোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি আরও জানিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপজনিত স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের কারণে প্রতি ঘণ্টায় বিশ্বে ১০০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে, যার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য।

ওয়েবিনারে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বলেন, উচ্চ রক্তচাপ হার্টের রক্তনালি সরু করে এর কার্যকারিতা কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। হৃদরোগের প্রকোপ কমাতে সঠিক সময়ে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত ও ওষুধ এর মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গীতা রানী দেবী জানান, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রাপ্যতায় কিছুটা ঘাটতি থাকলেও বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় আমরা সব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ওষুধ সরবরাহ করার চেষ্টা করছি।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, হৃদরোগের সঙ্গে জড়িত ঝুঁকি কমিয়ে আনাই এবার বিশ্ব হার্ট দিবসের মূল প্রতিপাদ্য। তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার বাড়াতে পারলে হৃদরোগের প্রাদুর্ভাবও অনেকটা কমে আসবে।  

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সাধারণ জনগণসহ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা বলেন, গবেষণা অনুসারে পপুলেশন লেভেলে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ৫ মি.মি. পারদচাপ কমিয়ে আনতে পারলে আমাদের দেশে স্ট্রোক এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যু যথাক্রমে ১৪ এবং ৯ শতাংশ কমে আসবে, এটার জন্য কাজ করতে হবে।

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস। ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এবং সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞা’র কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এ ওয়েবিনারে অংশ নেন।

আরকেআর/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।