ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নিপাহ ভাইরাস: আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৩
নিপাহ ভাইরাস: আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু

ঢাকা: নিপাহ ভাইরাস বা এনকেফালাইটিসে (মস্তিষ্কের প্রদাহ) আক্রান্ত আটজনের মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান শুক্রবার রাতে বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।



মাহমুদুর রহমান বলেন, জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত স্যাম্পল (নমুনা) সংগ্রহ করে এ তথ্য জানানো হচ্ছে। এতে ৮ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে যার মধ্যে ৬ জন মারা গেছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, নাটোর ও গাইবান্ধা জেলায় ছয় জন নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে পাঁচ জনই মারা গেছেন। রাজশাহী এবং রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তারা মারা যান।

আর ঢাকায় আক্রান্ত হন ২ জন, যার মধ্যে একটি শিশু মারা গেছে। সম্প্রতি ঢাকায় আট বছর বয়সী ওই শিশু এ ভাইরাস সংক্রমণে মারা যায়। তবে শুক্রবার নতুন কারো মৃত্যু হয়নি।

মাহমুদুর রহমান বলেন, “মারা যাওয়া পাঁচ জনের মধ্যে নাটোরে আট মাসের সন্তান রেখে এক নারী মারা গেছেন। তার সন্তানের শরীরেও নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। ”

বাংলানিউজকে তিনি জানান, ঢাকার যে শিশুটি মারা গেছে এবং তার বাবা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তারা রামপুরার বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা। ভালুকা থেকে এখানে কাঁচা খেজুরের রস এসেছিল।

তিনি বলেন, সাধারণত এ সময় এ ভাইরাসের সংক্রমণ না ঘটলেও এবার অস্বাভাবিকভাবে সংক্রমিত হয়েছে। মানুষকে কাঁচা খেজুরের রস না পান করতেও পরামর্শ দেন তিনি।

সাধারণত শীতকালে বাদুরের মাধ্যমে খেঁজুরের রস থেকে মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে জানান তিনি।

এ ভাইরাস সংক্রমণে শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশের মৃত্যু হতে পারে, যেখানে কাঁচা খেজুর রস পান থেকে বিরত থাকলে এটা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব। ভাইরাস সংক্রমণের প্রায় এক সপ্তাহ পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় বলেও জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান।

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, জ্বর, প্রলাপ বকা এবং অজ্ঞান হয়ে পড়া।
দেশে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে ২০০১ সালে। পরে ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষার মাধ্যমে একে নিপাহ ভাইরাস বলে সনাক্ত করা হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত দেশের ২১টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৭ জনের মধ্যে ১৩৭ জনই প্রাণ হারিয়েছেন।

মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, এবং ঠাকুরগাঁওসহ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের এলাকায় নিপা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এটি কেন নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সংক্রমিত হয় এবং কেন নতুন জায়গায় ছড়ায় সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে যেসব এলাকায় খেঁজুর গাছ রয়েছে কেবল সেসব এলাকাতেই এর সংক্রমণ ঘটে।

নিপাহ ভাইরাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই সংগৃহীত রস জ্বাল দিয়ে পান করা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না বলে জানান মাহমুদুর রহমান। "

মালয়েশিয়ায় ১৯৯৮ সালে প্রথম এ ভাইরাসটির সংক্রমণের কথা জানা যায়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৩
এমএন/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।