বগুড়া: বগুড়ার ধুনট উপজেলায় অনুপোযোগী ও ভেজাল রাসায়নিক পদার্থ মেশানো নানা রঙের তরল আইসক্রিম খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার শিশু শিক্ষার্থী। দিনের পর দিন রঙ মেশানো দূষিত অস্বাস্থ্যকর এসব আইসক্রিম বা পানীয় খেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের জীবন।
এসব শিশুর জীবন নিরাপদে রাখতে একদিকে নেই যেমন সঠিক দিক নির্দেশনাকারী ব্যক্তি বা অভিভাবক, অন্যদিকে প্রশাসনও এসব বিষয়ে যেন একেবারে উদাসীন।
ধুনট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বাংলানিউজকে জানিয়েছে, ধুনট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে ৯৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অন্যান্য ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বমোট ২০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে ৫ থেকে ১১ বছরের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।
সপ্তাহব্যাপী অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত এসব শিক্ষার্থীরা অযত্ন অবহেলা এবং সঠিক পরিচর্যাসহ নানা কারণে সারা বছর পলিথিনের পাইপে থাকা খোলা বোতলে সস্তা এসব তরল আইসক্রিম খেয়ে থাকে। গরম এলে সঙ্গত কারণেই খাওয়ার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। খাদ্যে ভালো খারাপ কি আছে তা জানার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই তাদের। প্রচণ্ড গরমে মিষ্টি মেশানো একটু ঠাণ্ডা পানি কোমলমতি এসব শিশু শিক্ষার্থীর কাছে যথেষ্ট সুস্বাদু।
অনেক বাবা-মাকে দেখা গেছে, তৃঞ্চা মেটাতে তাদের ছেলে-মেয়েদের হাতে নিজেরাই তুলে দিয়েছেন মিষ্টি মেশানো আকর্ষণীয় নানা রঙের পানীয় বা আইসক্রিম। তাদের চিন্তা শুধুই ক্ষণিকের জন্য, ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ভেজাল রং মেশানো এসব খাবার খেলে পরিণতি কি হতে পারে তা তাদের জানা নেই, এমনকি জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তাদের। এ কারণে সময়ের ধারবাহিকতায় এসব ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর পানীয় বা আইসক্রিম প্রস্তুতকারকের সংখ্যাও বেড়ে গেছে অনেক। গরমের এ তাপদাহকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী টু’পাইস কামিয়ে নিচ্ছেন টাকা।
ধুনট উপজেলায় প্রায় ১০টি আইসক্রিম তৈরির কারখানা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এগুলোতে কোনো মান যাচাই না করেই ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন অসংখ্য নিম্নমানের তরল ও কঠিন (শক্ত) আইসক্রিম তৈরি করা হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই সেখানে।
কারখানাগুলোতে দুই শ্রেণীর আইসক্রিম তৈরি করা হচ্ছে। একটি পেপসি বা সেভেন-আপ জাতীয় তরল, যা বোতলে ও পলিথিনে বিক্রয় করা হয়। অরেকটি কাঠি লাগানো শক্ত জাতের, যেগুলোকে বলা হয় নারিকেলি আইসক্রিম। কিন্তু বাস্তবতা হলো শক্ত এই আইসক্রিমে বিন্দুমাত্র নারিকেলের ছোঁয়া নেই, নারিকেল মেশানোর নামে আছে শুধু পঁচা পাউরুটি ও বিস্কুটের চূর্ণ অংশবিশেষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইসক্রিম কারখানার মালিক বাংলানিউজকে জানান, পানির সঙ্গে কিছু কেমিকেল, স্যাকারিন ও কম দামী রং মেশানো হয়। পরে রং মেশানো ওই পানি বোতল ও পলিথিনের পাইপে তুলে বিক্রি করা হয়। তৈরি এক বোতল পানীয় আইক্রিমের দাম খুচরা বাজারে মাত্র ২ টাকা। একই জিনিস পলিথিন প্যাকেটের দাম মাত্র এক টাকা।
ধুনট উপজেলা সেনেটারি ইন্সপেক্টর আব্দুল জলিল নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব ভেজাল ও দূষিত পানীয় বা আইসক্রিম তৈরি ও বিক্রির কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, জনবল সংকটের কারণে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনকালে এ ধরনের দূষিত পানি এবং আইসক্রিম বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. রিপন কুমার সাহা বাংলানিউজকে জানান, কেমিকেল-স্যাকারিন ও নিম্নমানের এসব রঙ মিশ্রিত দূষিত পানি বা আইসক্রিম থাওয়ার ফলে পেটের অসুখ, জন্ডিস, হৃদরোগসহ নানা ধরনের জটিল রোগ হতে পারে। এমনকি শিশুরা মানসিক ভারসাম্য পর্যন্তও হারাতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৩
মামুন/ সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর[email protected]