ঢাকা: স্বাস্থ্যসেবা খাতের ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণ, চিকিৎসার ব্যয়ভার বৃদ্ধি, পল্লী এলাকায় অবস্থান করতে চিকিৎসকদের সীমাহীন অনীহা, সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির অত্যন্ত ক্ষতিকর দৌরাত্ম্য, চিকিৎসকদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, এসব কারণেই দরিদ্র জনসাধারণেরে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (আইজিএস) আয়োজিত, ‘স্বাস্থ্যসেবা খাতে শাসন পদ্ধতি: নীতি, প্রভাব ও মালিকানা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গোলটেবিল বৈঠকে তারা স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত না করার তীব্র সমালোচনা করে একে দাতাগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া বলে মন্তব্য করেন।
বক্তারা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াকে ন্যায়পরায়ণতার বিচারে এবং শাসনতন্ত্রের আলোকে নাগরিকদের অধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানান। এজন্য নাগরিকদের সচেতনতা বাড়ানো ও সোচ্চার হওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকারকে মূল এজেন্ডায় স্থাপন করারও আহ্বান জানান।
আইজিএস-এর পক্ষ থেকে গবেষক নারমীন শামস এ বিষয়ক গবেষণার সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেন।
গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ চিত্র তুরে ধরে বলেন, সবকিছুর কেন্দ্রিকতা বাংলাদেশের মূল সমস্যার কারণ। তিনি হাসপাতালে প্রতিটি মৃত্যুর নিরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েনশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মাহমুদ হাসান বলেন, সরকারের স্বাস্থ্যনীতিতে তাদের প্রণীত নীতির প্রতিফলন হয়নি। ডা. রশিদ-ই-মাহবুবও একই কথা বলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা একে আজাদ বলেন, ‘আমাদের সর্বনিম্ন ব্যয়ে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা এবং কি করলে চিকিৎসকরা মফস্বলে থাকবে তা ভাবতে হবে। ’ তিনি সমাজ পরিবর্তন ও জনগণকে ক্ষমতায়িত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
শুধুমাত্র স্বাস্থ্যনীতি নয়, চিকিৎসা শিক্ষানীতি প্রণয়নের প্রয়োজন বলেও মত দেন বারডেম-এর মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুন নাহার।
সাভারের এনাম মেডিক্যালের ডা. এনামুর রহমান চিকিৎসাসেবা খাতে বাজেট-বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তুলেন।
সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এএমএম নাসির উদ্দিন পদায়ন নীতিমালা গ্রহণ না করার সমালোচনা করেন।
ডা. মুশতাক হোসেন স্বাস্থ্যসেবা পণ্য? নাকি জনগণের অধিকার- তা ঠিক করতে রাজনৈতিক দল বিশেষত, ক্ষমতাসীন দলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
নারীপক্ষের সামিয়া আফরীন হাসপাতাল পরিচালনা কমিটিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে উদাসীনতার অভিযোগ করেন।
দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. দেবালোক সিংহ আড়াই কোটিরও বেশি অতিদরিদ্র এবং সাড়ে চার কোটি দরিদ্র সাধারণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মাথাপিছু ন্যূনপক্ষে ৫০ ডলার বরাদ্দের আহ্বান জানান।
ড. খায়রুল ইসলাম স্বাস্থ্য আচরণবিধির কিছু কিছু বিষয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইজিএস-এর পরিচালক ড. রিজওয়ান খায়ের।
ওয়াটারএইড-এর দেশীয় প্রতিনিধি ড. খায়রুল ইসলামের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন বারডেম, গণস্বাস্থ্য, অ্যাপোলো হাসপাতাল, এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ডিজি হেলফ-এর প্রতিনিধি, বিএমএ সভাপতি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিবসহ স্বাস্থ্যসেবা খাতের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব ও কর্মকর্তারা।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট নীতি-গবেষক, নাগরিক সমাজ, দাতাগোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সাংবাদিক, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৩
এমএন/আরআর