ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মা-বাবার অজ্ঞতার সুযোগ নেয় দুধ কোম্পানি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৩
মা-বাবার অজ্ঞতার সুযোগ নেয় দুধ কোম্পানি

ঢাকা: শিশুপুষ্টি সম্পর্কে মা-বাবার অজ্ঞতার সুযোগ নেয় দুধ কোম্পানিগুলো। কৌশলী বিজ্ঞাপনে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তারা।

মায়ের দুধের কোনো বিকল্প না হলেও তারা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে এমনটিই দাবি করে।

শনিবার দুপুরে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স কক্ষে মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান-ঢাকা, ইউনিসেফ, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন ও দৈনিক কালের কণ্ঠ।

কখনো বা মায়ের দুধের চেয়ে সেই পণ্য আরও ভালো বলে প্রচারের ধৃষ্টতাও দেখায়। এ বিষয়ে আইন থাকলেও তার প্রতিফলন সেভাবে হচ্ছে না। যার কুপ্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। কারণ মায়ের বুকের দুধ শিশুর মেধা বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এক গোলটেবিলের বক্তারা।
 
বক্তারা বলেন, মায়ের বুকের দুধ শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়, শিশু ও মায়ের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসে রাখে বড় ভূমিকা। শুধু তাই নয়, সন্তান জন্মদানে মায়ের জরায়ুর যে পরিবর্তন আসে, তা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতেও বুকের দুধ দানের অবদান ব্যাপক বলে জানান বক্তারা।

বৈঠকে অংশ নেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সুবাস চন্দ্র সরকার, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফ) চেয়ারপারসন এস কে রায়, সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন ও পরিচালক খুরশিদ জাহান, কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর সুফিয়া খাতুন, ব্র্যাক-এর জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ রাইসুল হক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পুষ্টি সেবার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
 
যুগ্ম-সচিব সুবাস চন্দ্র সরকার বলেন, শিশুর বিকল্প খাদ্যের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার- প্রচারণা দরকার। কোনো মা শিশুর অকল্যাণ চান না। তাই কৌটার দুধের ক্ষতিকর দিকগুলো ব্যাপকভাবে মায়েদের কাছে তুলে ধরতে হবে, সে বিষয়ে প্রচার মাধ্যম বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
 
আগামী সংসদ অধিবেশনে বিকল্প খাদ্য বিষয়ক আইন পাশ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
 
বিবিএফ চেয়ারপারসন এস কে রায় বলেন, মা-বাবার বিজ্ঞান সম্পর্কে কম জানার সুবাদে বিকল্প খাদ্যের ভুল ধারণা দেওয়া হয়। বলা হয়, বিভিন্ন বিকল্প খাদ্যে লম্বা-চওড়াও হয়।
 
তিনি বলেন, মায়ের দুধের পরিবর্তে কোনো বিকল্প খাদ্য নয়, বরং পাশাপাশি পরিপূরক খাবারের কথা বলা হচ্ছে।
 
মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে কোম্পানিগুলো এ খাবার তৈরি করে। মায়ের দুধের চেয়ে ভালো বা সমকক্ষ বোঝাতে চায়। কিন্তু এটা আইনে নিষেধ, এমন করলে তাকে ধরা যাবে।

এস কে রায় বলেন, চটকদার বিজ্ঞাপন, দুধ কিনলে ডিসকাউন্ট বা ফ্রি উপহার দেওয়া আইনত দণ্ডনীয়। বিজ্ঞাপনে ছবি ব্যবহার করে ক্রেতা আকর্ষণ করাও দণ্ডনীয়। বর্তমান আইনে দুই বছর মেয়াদী কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হবে, যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করে। কোম্পানি যদি অপরাধ করে, তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে দণ্ডিত হবেন। তবে অপরাধ সংঘটনে বাধা দিলে অব্যাহতির কথাও জানান তিনি।
 
মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বাচ্চারা বুকের দুধ খেলে ২০ শতাংশ মেধা বাড়ে। বুকের দুধের পক্ষে প্রচারণা চালানোর আড়ালে কোনো কোনো কোম্পানি গুড়ো দুধের প্রচারণা চালায়। কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বাজারে ঢুকে যাচ্ছে। এটা প্রতিরোধ করতে পারে সুশীল সমাজ, চিকিৎসক ও সংবাদ মাধ্যম।
 
ড. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোনো শিশুকে বিকল্প শিশুখাদ্য প্রেসক্রাইব করা যাবে সে ব্যাপারে কোনো চেকলিস্ট না থাকায় সমস্যাটি প্রকট হচ্ছে। ডাক্তার বিকল্প খাদ্যের পরামর্শ দেওয়ার পরে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি নানা কথায় বুঝিয়ে দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আইন অনেক হয়, তার প্রতিফলন হয় না। মিডিয়াতে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট রয়েছে। তাই এ বিষয়েও ভাবতে হবে।
 
মোহাম্মদ রাইসুল হক বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতে হবে, ডাক্তার, মিডিয়া, মায়েদের সঙ্গে এবং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে কাজ করতে হবে।
 
এর আগে সূচনা বক্তব্যে কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, এই বিষয়টিতে সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচারণার প্রয়োজন। শহরের আধুনিক মায়েরা মনে করেন, মায়ের দুধের বিকল্প আছে। গ্রামে বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হলেও শহরে বিষয়টি কম।

বৈঠক সঞ্চালনা করেন কালের কণ্ঠের স্বাস্থ্যবিষয়ক সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিক মারুফ। আলোচনায় বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীও অংশ নেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৩
এসকেএস/এমএইচপি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।