সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের স্থানীয় হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা জটিল রোগের চিকিৎসা প্রদানে অদক্ষ। কিন্তু এ অভিযোগ ভুল প্রমান করে এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকার চিকিৎসকরা জীবন রক্ষাকারী অস্ত্রোপচারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, যা বিশ্বের গুটি কয়েক চিকিৎসকদের পক্ষেই সম্ভব।
সম্প্রতি কাতার প্রবাসী গুলজার ওখানে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শরীর অবশ হতে শুরু করে এবং তিনি ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলেন। তাকে দ্রুত কাতারের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে গুলজারকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
প্রায় দুই মাস অচেতন অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন গুলজার। যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পান তখন তিনি নিজে নিজে শ্বাস নিতেও অক্ষম ছিলেন। কাতারের একটি হাসপাতালের আই সি ইউ-তে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। যেহেতু তিনি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিলেন না, তার শ্বাসনালীতে ২ বার সার্জারি করে ছিদ্র করা হয়। এ সার্জারি ট্রাকিওস্টোমি নামে পরিচিত, কিন্তু অপারেশনের ফলে তার শ্বাসনালীতে আরও জটিললতা সৃষ্টি হয়। তার শ্বাসনালীর সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় তিনি কথা বলতে পারছিলেন না।
গুলজার দেখলেন যে, স্ট্রোকের কারনে তিনি যে শুধু হাঁটতে অক্ষম তাই নয় তিনি কথা বলতেও পারছেন না। কাতারের প্রতিটি দিন তার কাছে বিষাদময় হয়ে ওঠে।
দেশে ফিরে এসে গুলজার এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকায় ডাঃ সাকেত আগারওয়ালর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। এখন তিনি কোনো পাইপের সাহায্য ছাড়াই শ্বাস প্রশ্বাস নিতে এবং কিছু কথাও বলতে পারছেন।
ডাঃ সাকেত আগারওয়াল জানান, তিনি গুলজারকে প্রথমে ল্যাজার থেরাপি প্রয়োগ করেন। পরে সার্জারির মাধ্যমে ২য় ও ৫ম ট্রাকিয়াল রিং কেটে ফেলে দিয়ে ১ম ও ৬ষ্ঠ ট্রাকিয়াল রিং এক সাথে মিলিয়ে দেন।
সার্জারি করার জন্য রোগীর শ্বাসপথ সহজ ছিল না। অপারেশনটি করতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে।
গুলজারকে এখন স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে পুরোপুরি কথা বলতে সক্ষম করে তোলা হবে বলেও উল্লেখ করেন ডাঃ আগারওয়াল। তিনি বলেন, এ ধরনের অপারেশন বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো সম্পন্ন করা হয়েছে। সারা বিশ্বে মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন সার্জন আছেন যাদের এই জটিল অপারেশন সম্পন্ন করার মতো দক্ষতা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকার জেনারেল ম্যানেজার ডাঃ শাগুফা আনোয়ার বলেন, বর্তমানে আমাদের চিকিৎসার সুযোগ সুবিধার অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে চিকিৎসার জন্য এদেশের মানুষকে আর বিদেশে পাড়ি জমাতে হবে না।