ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রংপুর সয়লাব যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধে!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৪
রংপুর সয়লাব যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধে!

রংপুর: চিকিৎসকদের পরামর্শ কিংবা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছে না রংপুরের ফার্মেসিগুলো। আর এরই সুযোগে রংপুরে যৌনশক্তি বাড়ানোর নানা ওষুধ বাজার দখল করে ফেলেছে।



ফাঁকা হওয়ার এক পর্যায়ে ক্রেতারা ফার্মেসিতে গিয়ে চাইছেন যৌনশক্তি বাড়ানোর ওষুধ। বেশি লাভের আশায় ফার্মেসির কর্মচারীরাও তাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ট্যাবলেট কিংবা ক্যাপসুল।

ঘুমের ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি নেশা জাতীয় ওষুধগুলো অবাধে বিক্রি হচ্ছে ফার্মেসিগুলোতে। ক্রেতারা ফার্মেসিগুলোতে গিয়ে বলছেন- ভাই আমার জ্বর। মাথাব্যথা। শরীরে ব্যথা। কী খাই বলেন? ফার্মেসি মালিক ও কর্মচারীরা তখন তাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ।

রংপুরের বিভিন্ন ফার্মেসিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ কিনছেন রোগীরা। শুধু ফার্মেসিতে গিয়ে বলা মাত্র ওষুধ চলে যাচ্ছে ক্রেতার হাতে।

এমন পরিস্থিতিতে অনেক রোগীই পড়ছেন নানা জটিলতায়। ফলে, এসব কারণে অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিচ্ছে নতুন রোগবালাই।

আর পুরুষদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গোপনভাবে যৌনশক্তি বাড়ানোর ওষুধ বিক্রি করে এরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

রংপুর মেডিকেল মোড়ের স্বপন ফার্মেসির এক কর্মচারী জানান, এই ধরনের ওষুধের কাস্টমার অনেক বেশি। এতে লাভও বেশি। কেননা অন্য ওষুধের বেলায় দাম নিয়ে নানা জবাব দিতে হলেও এই ধরনের ওষুধ নিয়ে কোনো দামাদামি চলে না, কেউ করেও না।

দেখা গেছে, যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের অসচেতনতাকেই দায়ী করেন তারা।

রোগীরা নিজেরা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসির কর্মচারীকে ওষুধ দিতে বলেন। আর দোকানদাররা বিক্রির লোভে ওষুধ দেন।

প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা রবিউল ইসলাম জানান, সামান্য মাথা ব্যথা; নাপা (প্যারাসিটামল) খেলেই ঠিক হয়। তাই, নাপা কিনতে এসেছি।

প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ কেনা ঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাথা ব্যথার কারণে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। ডাক্তারের কাছে গেলে তারা অনেকগুলো টেস্ট করতে বলবেন। এই কারণেই ফার্মেসিতে আসা।

এ প্রসঙ্গে ফার্মেসির মালিকও তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখনো সচেতনতার অভাব রয়েছে।

মাঝে-মধ্যে তিনি নিজেও ওষুধ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা না চাইলেও রোগীরা অনেক সময় জোর করেন বলেই দিতে বাধ্য হই।

তবে অনেক রোগীই প্রেসক্রিপশন ছাড়া নিয়মিত ওষুধ নেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ডাক্তার গোপাল চন্দ্র রায় জানান, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তা মোটেও উচিত নয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বেশ কিছু রোগের ওষুধ পরীক্ষা করে খাওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাক্তার জাকির হোসেন জানান, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগীদের ওষুধ খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। এতে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে।

লাইসেন্স ছাড়াই জেলার বিভিন্ন অলিতে-গলিতে গড়ে উঠেছে ওষুধের ফার্মেসি। এসব ফার্মেসিতে বিক্রি হচ্ছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ।

এ প্রসঙ্গে রংপুরের ড্রাগ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এই ধরনের লাইসেন্সবিহীন ও অবৈধ ফার্মেসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।