খুলনা: চিকিৎসকদের টানা চার দিনের ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে খুলনার চিকিৎসা সেবা। ফলে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
খুলনার চিকিৎসকদের ধর্মঘটের পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে বিভাগের ১০ জেলায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র কর্তৃক নগরীর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামলা, ভাঙচুরের প্রতিবাদ ও চিকিৎসক তানভির ইসলাম বাপ্পাকে অপহরণের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসকরা এ ধর্মঘট পালন করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিকিৎসকদের অব্যাহত ধর্মঘটে ভেঙ্গে পড়েছে খুলনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কেবল নামমাত্র জরুরি বিভাগ ছাড়া এসব হাসপাতালে কোন চিকিৎসা হচ্ছে না। অনেক মুমূর্ষু রোগী মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেকে গুরুত্বপূর্ণ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করাতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ধর্মঘট প্রত্যাহারে সংশ্লিষ্ট সকলকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করারও দাবি জানিয়েছেন রোগীর স্বজন ও সাধারণ মানুষ।
বিশেষ একটি অপারেশনের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বজনকে নিয়ে এসেছেন অরুণ কুমার। টানা ধর্মঘটের ফলে তিনি অপারেশন করাতে পারছেন না। ফলে রোগী মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তিনি চিকিৎসকদের প্রতি ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ), খুলনা প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্রাকটিশনার এসোসিয়েশন যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করছে। ধর্মঘটের কারণে সাধারণ চিকিৎসা প্রার্থীরা সীমাহীন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে শনিবার থেকে শুরু হওয়া ৪৮ঘন্টা ধর্মঘট রোববার শেষ রাত পর্যন্ত ছিলো। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার ভোর থেকে খুলনার সকল সরকারি ও বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল এবং প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে লাগাতার এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এর সাথে মঙ্গলবার থেকে বিভাগের ১০ জেলায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. শেখ বাহারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসা কেন্দ্রে হামলা ও চিকিৎসক অপহরণের প্রতিবাদে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের পাশাপাশি খুলনার সকল সরকারি হাসাপাতালেও লাগাতার ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।
অপরদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র অমিত রায় গত ২ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তাকে মহানগরীর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসা দেয়া হয়।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অমিতের চিকিৎসার অবহেলা হয়েছে এমন অভিযোগ করেন তারা। তারা দাবি করেন বিকেল সাড়ে ৫টায় ভর্তি করা হলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তিন ঘন্টা বিলম্বে অমিতকে দেখেন। ওই হাসপাতালে অমিতের যথাযথ চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে। এছাড়া রোগীর স্বজনদেরও অবস্থা স¤পর্কে সঠিক তথ্য দেয়া হয়নি। তাছাড়া কর্তব্যরত নার্স ও কর্মচারীরা রোগীর নিকটজনদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এর প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর চড়াও হয় তারা।
তারা দাবি করে বলেন, আমরা হাসপাতালে ভাংচুর, হামলা কিংবা ডাক্তার অপহরণ করিনি। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ধর্মঘটে উৎকন্ঠা প্রকাশ করে নাগরিক ফোরাম খুলনার চেয়ারপার্সন মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম ও মহাসচিব প্রদ্যুত রুদ্র চৈতী বলেন, শনিবার থেকে খুলনায় ডাক্তারদের ধর্মঘটে চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক, প্যাথলজিক্যাল সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
এমতাবস্থায় রোগীদের দুর্দশা চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন উপজেলা, জেলাসহ শহরে আগত রোগীরা দিশেহারা এক হাসপাতাল ক্লিনিক থেকে অন্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দৌড়াদৌড়ি করছেন। মুমূর্ষু রোগীরা মৃত্যুর মুখে পড়েছেন। এ অবস্থায় মানবাধিকার রক্ষায় চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে তাদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৪