সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের কতই না চেষ্টা। ক্যালোরি গুনে গুনে খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম আর অধিক সচেতনরা যা করেন, তা হচ্ছে- ডিমের অমলেট কিংবা সেদ্ধ ডিম থেকে কুসুম সরিয়ে সাদা অংশ খান।
এভাবে সাদা অংশ খাওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রকাশ যারা ঘটাতে চান তাদের জন্য বার্তা হচ্ছে- এর আদৌ কোনো দরকার নেই। খাদ্য গবেষকরা এক কথায় জানিয়ে দিয়েছেন- পুরো ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে না। বিশ্বখ্যাত পুষ্টিবিদ লিজ উলফ বলেছেন- কুসুমটিও খেয়ে ফেলুন... এতে শরীরের কোনো ক্ষতি নেই, না খেলে বরং কিছু কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে ডিমের কুসুম খাওয়ার ব্যাপারে বারণ আসে। নিকোলাই আনিচকভ সেবার গুটিকয় স্যাচুরেটেড ফ্যাটের তালিকার সঙ্গে ডিমের কুসুমকেও জুড়ে দিয়ে বলে দেন... কুসুম খাবেন না...ওটি ক্ষতিকারক।
সেবার খাঁটি কোলেসস্টেরল খরগোশকে খাইয়ে আনিচকভ দেখান যে ওতে আর্টারিতে ক্লগ সৃষ্টি হয়। যা হৃদরোগের অন্যতম কারণ। এতে একটু যারা বয়স্ক তাদের নাস্তার টেবিল থেকে কোলেস্টেরলযুক্ত ডিমের কুসুম দ্রুত বাদ পড়তে থাকে।
প্রশ্ন কিন্তু সেই গোড়া থেকেই ছিলো... মানবদেহের সঙ্গে খরগোশের দেহের মিলটা কোথায়? এতদিন পরে হলেও সেই উত্তর লিজ উলফই দিলেন। তিনি বলেছেন- মানব দেহের সঙ্গে খরগোশের দেহের কোনো মিল নেই। আর কোলেস্টেরল যেহেতু খরগোশের খাদ্যই নয় সেহেতু তাদের শরীরে এর প্রভাব থাকবেই।
কিন্তু সেই থেকে উচ্চ চর্বি আর কলেস্টেরলযুক্ত খাবারের বাটি স্বাস্থ্য সচেতনরা বাড়তি সতর্কতায় সরিয়ে রাখতে শুরু করেন। ১৯৫০ এর দশকে গবেষক অ্যানসেল কিজ সাত দেশে গবেষণা চালিয়ে তার রিপোর্ট দিয়ে এই ধারণা আরও পাকাপোক্ত করে দেন। এর পর বছরের পর বছর ধরে একই ধারণা পোষণ করছে মানুষ।
কিজ দেখেছিলেন, যারা পশুচর্বি খায় তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। কিন্তু ২০১০ সালে আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত হয় বিশটি ভিন্ন ভিন্ন গবেষণা থেকে লব্ধ ফলাফল। এতে সুস্পষ্ট করে বলা হয়, অনেক পশু-চর্বি রয়েছে যেগুলো খাওয়ার সঙ্গে হৃদরোগ, পক্ষাঘাত কিংবা এ জাতীয় রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ডিমের ব্যাপারেও তাদের একই মত।
যারা ১৯৮৪ সালে টাইম ম্যাগাজিনের কভার স্টোরিতে ডিমসহ অন্যান্য উচ্চ-চর্বির খাবারগুলোকে বিপজ্জনক বলে দেওয়ার কথা মনে রেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই এ বছরের গোড়ার দিকে একই ম্যাগাজিনে তার ঠিক উল্টো বক্তব্যে কভার স্টোরি করে প্রকাশিত সংখ্যাটিও দেখেছেন।
টাইম ম্যাগাজিন তার ওই সংখ্যায় পাঠকদের মাখন বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
আর যারা ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে সাদা অংশ খেয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন, তাদের জন্য বার্তা হচ্ছে পৃথিবীর সেরা পুষ্টির উৎসের একটিকে তারা কাছে পেয়েও দূরে ঠেলে দিচ্ছেন। এই কুসুম শরীরের ত্বকের জন্য যেমন উপকারী, এর ভিটামিন বি শরীরে শক্তি যোগায় আর এর কোলাইন সমৃদ্ধ পুষ্টি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, পেশি শক্ত করে আর যারা মা হতে চান তাদের জন্য এই খাবার সেরাদের তালিকাভুক্ত। কুসুমে যে অপরিশোধিত চর্বি রয়েছে তা শরীরে হরমোন সৃষ্টি এবং শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলসকে দ্রবীভূত করে মিশিয়ে দিতে সাহায্য করে। লিজ উলফ তার গবেষণা থেকে এসব কথা জানিয়েছেন।
ক্যালোরি হিসাব কষে তো খাবেনই তাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু পুরো একটি ডিম প্রতিদিন খেলেও আপনার ওজন বৃদ্ধিতে তা কোনো ভূমিকা রাখবে না, বলেছেন উলফ।
বাংলাদেশ সময় ১২১৮ ঘন্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৪