ঢাকা: প্রত্যেকের জীবনে ‘বয়স ২০’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। দীর্ঘদিন ‘টিনেজ’ জীবন যাপন করার পর এই ধাপে শারীরিক ও মানসিক জগতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
এই বয়সে যেন সবকিছুই নতুন! নতুন স্বাধীনতা, নতুন স্বপ্ন, নতুন মানুষ, নতুন উত্তেজনা। তেমনি দরকার নতুন কিছু সাবধানতা ও করণীয়। কারণ জীবনের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সিদ্ধান্ত, রুচি ও বাছ-বিচারই আগামী জীবনকে গড়ে দেবে।
কী করা যাবে না বছর বিশের এই পর্যায়ে? এটা জানলেই বোঝা যাবে, কী করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে রেডিফে মেইলে প্রকাশিত ২০ বছর বয়সে যা করা যাবে না তা জানিয়ে দিচ্ছে বাংলানিউজ।
বাধ্যতামূলক সম্পর্ক
২০ বছর বয়সে প্রেমের সম্পর্ক এড়িয়ে চলাই ভালো। নিজেকে জোর করে কোনো সম্পর্কে ঢোকানোর দরকার নেই, কারণ সবকিছুর একটা যথাযথ সময় থাকে। ভুল সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদী মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই, ধৈর্য ধরতে হবে।
পরিবারকে অনগ্রাধিকার
এই আনন্দময় জীবনে বাবা-মা হলেন সবচেয়ে বড় সম্পদ। তারাই জীবনের এতটা পথ এগিয়ে দেন। কিন্তু সবকিছুতে পরিবারের কথা অনেকে শেষে ভাবেন। অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের কথা সবার আগে ভাবা উচিত। যদি কেউ বিবাহিত হয়ে থাকে, তাহলে পরিবারও একই মনযোগের দাবি রাখে।
ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত ফেলে রাখা
কথায় আছে, সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। নিজের ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত কালকের জন্য ফেলে রাখা যাবে না। এখন আপনি তরুণ এবং এই দিনগুলোই আপনার ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে।
ভেড়ার পালের মানসিকতা
নিজের হৃদয়কে ছাড়া কাউকেই অনুসরণ করবেন না। আপনার কাছের বন্ধুও তার পছন্দের একটি পথে যেতে পারে। এমন কোনো নিয়ম বা প্রয়োজনীয়তা নেই যে, আপনাকেও সেই পথে যেতে হবে। দীর্ঘ দৌঁড়ের পর দেখবেন, আপনার নিজস্ব পথটিই আপনাকে আনন্দিত করছে।
সিদ্ধান্তের জন্য বাবা-মা’র মুখাপেক্ষী হওয়া
অবশ্যই তারা আমাদের সার্বিক মঙ্গল চান। তারাই আমাদের পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। তারপরও তাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে, আস্তে আস্তে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সবসময় সিদ্ধান্তের জন্য তাদের মুখাপেক্ষী না হওয়াই আপনার জন্য ভালো।
কিছু পাওয়ার আশায় সম্পর্ক করা
শুধুমাত্র লাভ বা কিছু প্রাপ্তির কথা মাথায় রেখে সম্পর্ক না করে মনের প্রয়োজনে সম্পর্ক করা উচিত। আপনার এই সুযোগ-সন্ধানী মানসিকতা জীবনের সৌভাগ্যগুলো ধ্বংস করে দিতে পারে। কিছু পাওয়ার জন্য সম্পর্ক ব্যবহার করা ঠিক নয়।
স্বপ্নের জন্য কাজ না করে, টাকার জন্য কাজ করা
জীবনে অর্থের প্রয়োজন আছে। আবার এরকম প্রবাদও আছে, অর্থই অনর্থের মূল। তাই জীবনে টাকার পেছনে না ছুটে, স্বপ্নের পেছনে ছোটা উচিত।
নিজের ব্যর্থতার জন্য চারপাশের জগতকে দোষ দেওয়া
‘এগুলো আমার সঙ্গেই কেনো হয়’, ‘আমার বাবা-মা যথেষ্ট করেননি’, এ জাতীয় আক্ষেপ হেরে যাওয়া মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তির। নিজের ব্যর্থতার জন্য নিজেই দায়িত্ব নিন এবং নিজেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজুন।
শেখা ও বিকাশে দাড়ি টেনে দেওয়া
‘আমি সবকিছু জানি’ বা ‘আমি আর কী শিখব’ টাইপ সবজান্তা মনোভাবই আপনার সুন্দর ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। শেখার কোনো শেষ নেই। রোজ শেখা ও নিজের বিকাশের পথ প্রসারিত করুন।
উদারতা বিনিময়
কিছু পাওয়ার আশায় নয়, বরং নিজের সুনামের জন্য কাউকে উপকার করুন। উদারতা কখনো বিনিময় হয় না।
খারাপ গুণগুলো আকড়ে থাকা
ঈর্ষা, হিংসা, অর্থক্ষুধা, লোভ ইত্যাদি খারাপ গুণগুলো আকড়ে ধরে থাকার মধ্যে ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। এগুলো থেকে ব্যক্তি সাময়িক লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি তারই।
নেতিবাচক মানসিকতার বন্ধু রাখা
প্রবাদ আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। নেতিবাচক মানসিকতার বন্ধুদের ত্যাগ করুন। তাতে আপনার জীবনও ইতিবাচক আর আনন্দময় হয়ে উঠবে।
চারিত্রিক গুণ অপেক্ষা খামখেয়ালিপনাকে গুরুত্ব দেওয়া
ক্ষ্যাপাটেপনা বা খামখেয়ালিপনা সাময়িক, কিন্তু চরিত্রের কোনো ভালো গুণ স্থায়ী। ঝোঁকের বশে অর্থাৎ খামখেয়ালিভাবে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত বা কর্মকাণ্ড আপনার ভবিষ্যৎ জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে।
বিলাসিতায় আকৃষ্ট হওয়া
জীবনে প্রয়োজন আর বিলাসিতার তফাতটি এখন থেকেই বুঝতে শিখুন। বিলাসী জিনিসপত্রই আনন্দের একমাত্র উৎস নয়। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনকে উপভোগ করুন।
উদাসীন হওয়া
অনেকেই মনে করে, উদাসীনতাই সৃজনশীলতার মূল কথা। বরং ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা আপনার ব্যক্তিত্বকেই ধ্বংস করে দিতে পারে। এতে করে মানুষ হিসেবে অন্যদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।
নিজে যা নয় সেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা
প্রত্যেক মানুষই আলাদা। প্রত্যেকেই তার নিজস্বতা নিয়ে সবার থেকে আলাদা হন। সেক্ষেত্রে কাউকে অনুসরণ করা বা নিজে যা নয়, সেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা দুর্বল ব্যক্তিত্বের পরিচয়। বরং নিজস্বতা নিয়েই নিজেকে সবার কাছে তুলে ধরুন।
দাম্ভিকতা হলো অভিজাত ব্যক্তিত্ব
দাম্ভিকতা কখনোই একটি গুণ হতে পারে না। এটি সব সময়ের জন্য সত্য। দাম্ভিকতা ভেতরে ভেতরে নিজের ব্যক্তিত্বকেই নষ্ট করে দেয়। অনেকেই মনে করে, এটি খুব আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আসলে তাদের ভাবনাটি ভুল।
বিশ্বস্ততা ভীষণ সেকেলে
কর্মক্ষেত্র বা সম্পর্কে বিশ্বস্ততা হলো প্রথম ও প্রধান শর্ত। হাল ফ্যাশনে এগুলো খুব সেকেলে ধরা হয়। বরং উল্টোটা, স্ক্যান্ডালকেই জনপ্রিয়তার মাপকাঠি ও অত্যাধুনিক ধরা হয়। লিখে নিন, সব সময়ের জন্যই বিশ্বস্ততা আপনার চরিত্রের সবচেয়ে বড় গুণ।
না ভেবেই খরচ করা
বিভিন্ন সময় বাজারে হাল ফ্যাশনের জিনিস আসতে পারে। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার কি সেটা প্রয়োজন? একান্ত প্রয়োজন না হলে কোনোরকম ভাবনা ছাড়া খরচ করা থেকে বিরত খাকুন। সেটাই আপনার জন্য মঙ্গল।
সুনামের চেয়ে বস্তুকে গুরুত্ব দেওয়া
আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি যখন, ‘পেহলে দর্শনধারী বাদ মে গুণবিচারী’। মানে, এখন সাজপোশাকটাই সব। সেটা দেখেই মানুষ মানুষকে বিচার করে। কাপড়-চোপড় দিয়েই মানুষের শ্রেণী বিভাজন ভেবে নেয় মানুষ।
এসব ঝেড়ে ফেলুন। নিজের ব্যক্তিত্ব ও সুনাম বৃদ্ধিতে মনযোগ দিন। এতে সমাজে আপনার গ্রহণযোগ্যতা স্থায়ী হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৪