ঢাকা: একজন নয়, দু’জন নয়, এক ডজন এইডস আক্রান্ত (এইচআইভি পজেটিভ) শিশু দত্তক নিয়ে সুখে জীবনযাপন করছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মিরুত শহরের অজয় শর্মা।
মিরুত শহরের গঙ্গানগরের শিক্ষক অজয় শর্মার পরিবারের ৭-১৭ বছর বয়সী এই ১২ শিশু রোগীর জন্মদাতা-জননীরা যে এইডস আক্রান্ত ছিলেন সেটা বলাই বাহুল্য।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, অজয়ের ঘরে এসে এই ১২ শিশু নিজেদের আর অসহায় বা এতিম ভাবছে না। অজয় এবং তার স্ত্রীর আদর-ভালোবাসায় ছেলেরা এখন জীবনকে ইতিবাচকভাবে দেখছে।
এইডস আক্রান্ত রোগী বলতেই যেখানে ঘৃণার থুথু বর্ষিত হয় সেখানে এই এক ডজন এইচআইভি পজেটিভ শিশুকে কীভাবে বা ভেবে দত্তক নিলেন অজয়।
এই মহান মানুষই জানালেন তার মহানুভবতার পেছনের কারণ; ২০০৪ সালে তিনি মস্তিষ্কের জটিল এক রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৫ দিন কোমায় ছিলেন। মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে এসেছেন। বেঁচে থাকার গুরুত্ব অননুধাবন করে সিদ্ধান্ত নেন সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে কিছু করবেন।
ব্যস, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফালাবাদার সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় একটি বস্তিতে শিশুদের পড়াতে শুরু করেন। চার বছর পর ২০০৮ সালে ওই বস্তিতে তিনি এইচআইভি পজেটিভ এতিম এক শিশুর দেখা পান। এইচআইভি পজেটিভ বলে শিশুটির স্বজনরা তাকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়।
অজয় শর্মা শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। কিন্তু এইচআইভি পজেটিভ শিশুর জন্য হাসপাতালের সকল দরজাই বন্ধ ছিল।
অজয় বলেন, আমার বিবেক ওই শিশুটিকে ছেড়ে দিতে দেয়নি। আমি তাকে বাড়িতে আনলাম এবং লালন-পালন করতে লাগলাম। অবশেষে সে সুস্থ্য হয়ে ওঠল এবং পুনর্জীবন লাভ করলো।
তিনি বলেন, এ ঘটনা আমার মনে ভীষণ দাগ কাটে এবং আমি চিন্তা করলাম কেন সমাজ একটি নির্দোষ শিশুকে পরিত্যাগ করবে। আমি সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে চাইলাম এবং কাজ শুরু করলাম।
এরপর অজয় শর্মা একে একে আরও এগারজন এইচআইভি পজেটিভ শিশুকে দত্তক নেন।
কিন্তু তার এ পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। শুরুতেই স্ত্রী ববিতার বাধা পান। অনেক বুঝিয়ে সেটা অতিক্রম করেন।
এরপর বিশাল এই পরিবারের জন্য বড় বাড়ির প্রয়োজন পড়লে কেউই তাকে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছিল না।
শেষ পর্যন্ত গঙ্গানগরের এক মহৎ মানুষ ১২ জন এইচআইভি পজেটিভ শিশুসহ অজয়কে বাড়ি ভাড়া দেন। বর্তমানে সেখানেই তিনি তার ১২ সন্তানকে নিয়ে সুখী জীবন-যাপন করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৪