ঢাকা: জাতীয় ওষুধ নীতিমালায় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রেতারা ৫০ শতাংশ রোগীকে কাশি ও জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে (এআরআই) হঠাৎ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক উদরাময় কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) পক্ষে করা এ গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
হঠাৎ শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থতায় আক্রান্ত রোগীদের ব্যবস্থাপনায় প্রায়ই দরিদ্র এবং স্বল্প শিক্ষিত জনগণের সেবাপ্রাপ্তির প্রথম অবলম্বন হিসেবে কাজ করে থাকেন বাংলাদেশের ওষুধ বিক্রেতারা।
এ বিষয়ে দৈবচয়নের মাধ্যমে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার ১০০টি ওষুধের দোকানে (ফার্মেসি) একটি ক্রস-সেকশনাল গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ২০১২ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
ওষুধ বিক্রেতারা কিভাবে রোগীদের জন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন তা মূল্যায়নের জন্য এআরআই রোগীর আত্মীয় সেজে কিছু মাঠকর্মীদের মাধ্যমে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়।
এ গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধ বিক্রেতারা ৭৬ শতাংশ রোগীদেরকে ওষুধ দিয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭ শতংশ রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক এবং ৩৯ শতাংশ রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া অন্য ওষুধ দিয়েছেন।
কিছু রোগী যাদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়নি তাদের রোগ যদি ৩/৫ দিনের মধ্যে সেরে না যায়, তাহলে ৩০ শতাংশ রোগীকে পুনরায় এসে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে বলা হয়েছে। বাকি ৮ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক নিতে বলা হয়।
ফার্মেসিতে উপস্থিত না থাকলেও ৬ শতাংশ রোগীর জন্য ওষুধ প্রদানে বিক্রেতারা অসম্মতি জানান বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত এআরআই ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নির্দেশনাবলীতে বলা আছে, শুধুমাত্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদেরকেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর মাধ্যমে রোগীর অবস্থা মূল্যায়নের পর মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদেরকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পাঠানো উচিত বলে নির্দেশনায় বলা আছে।
তবে এ গবেষণায় দেখা গেছে, রোগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ক্ষেত্রে অসঙ্গতি এবং রোগীর অবস্থা মূল্যায়ন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক দিতে দেখা যায়। সাধারণ থেকে মারাত্মক এআরআই আক্রান্ত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় শ্রেণির রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক সচরাচর দিতে দেখা গেছে।
গবেষণায় রোগের বিবরণগুলো ছিলো- শিশুর তীব্র কাশি এবং নাক দিয়ে পানি ঝরা, শিশুর কাশি ও জ্বর, শিশুর শ্বাসকষ্ট, প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর কাশি ও নাক দিয়ে পানি ঝরা, প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর কাশি- জ্বর এবং প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১০০টি ফার্মেসির মধ্যে ৬৭ শতাংশ ছিলো সরকারি লাইসেন্সধারী এবং বাকিগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিলো না।
এ গবেষণায় ওষুধ বিক্রেতাদের কাছ থেকে সাক্ষাতকারও নেওয়া হয়। সাক্ষাতকার প্রদানকারী ৪৮ শতাংশ ওষুধ বিক্রেতা স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অনুমোদিত প্রফেশনাল সার্টিফিকেট কোর্স করেছেন এবং ৮ শতাংশ একাধিক কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
গবেষণায় ৪৮ শতাংশ ওষুধ বিক্রেতা জানান, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান সংক্রান্ত কমপক্ষে একটি পেশাগত প্রশিক্ষণে তারা অংশ নিয়েছেন।
গবেষণাটি আইসিডিডিআর,বি এর স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান বার্তা, মার্চ’২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়।
গবেষণার মন্তব্য অংশে বলা হয়, এআরআই আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীই কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ছাড়াই আপনা আপনি ভালো হয়ে যান।
অন্যান্য দেশে পরিচালিত কিছু গবেষণা এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পরিচালিত একটি গবেষণায়ও এআরআই আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ দেখা যায় বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
এ গবেষণার উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হল- সরকারের ওষুধ প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সমন্বয়ে ওষুধ বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যাতে দেশে সেবার মান উন্নত হয় ও ওষুধের অপপ্রয়োগ কমে।
এছাড়া ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রদানের ওপর একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং তা মেনে চলার জন্য বিধিমালা তৈরি করার সুপারিশ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪